সংবাদদাতা, জলপাইগুড়ি : বৃহস্পতিবার তিনদিনের উত্তরবঙ্গ সফরে বেরিয়ে শিলিগুড়ি পৌঁছান রাজ্যের রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। কলকাতা থেকে বুধবার সন্ধ্যায় রওনা হয়ে বৃহস্পতিবার নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে পৌঁছন তিনি। সেখান থেকে যান শিলিগুড়ির স্টেট গেস্ট হাউজে। তিনদিনের এই সফরে আজ ফুলবাড়িতে ইমিগ্রেশন চেক পোস্ট পরিদর্শন করেন রাজ্যপাল। এরই মাঝে বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজ্যপাল আসেন জলপাইগুড়ি শহরে। উদ্দেশ্য, তাঁর জীবনের একসময়কার সহকর্মী তথা কর্মক্ষেত্রের শিক্ষাগুরু অশোক কুমার রায় চৌধুরীর সাথে দেখা করা। শুক্রবার স্টেট ব্যাঙ্কের জলপাইগুড়ি প্রধান শাখায় তাঁর আসার কথা, কিন্তু পুরোনো সহকর্মীর সাথে দেখা করায় বিলম্ব করতে রাজী ছিলেন না রাজ্যের রাজ্যপাল।

উল্লেখ্য, ১৯৭৭ সালে আইএএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর সেই বছরই প্রবেশনারি ম্যানেজার হিসাবে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কলকাতা শাখার পাশাপাশি জলপাইগুড়ি শহরের ক্লাব রোডের স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার মূল শাখারও দায়িত্ব সামলেছিলেন রাজ্যের বর্তমান রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। জলপাইগুড়ি শহরে বেশ কয়েক মাস চাকরির স্মৃতি এখনও রাজ্যপালের মনে টাটকা। আজ পাঁচ দশক পরেও তিনি ভোলেন নি সেই কর্মজীবনের কথা, ভোলেন নি জলপাইগুড়িকে, ভোলেন নি তাঁর সেই সহকর্মীর কথা যিনি কর্মজীবনের শুরুতে কাজ (ব্যাঙ্কের) শিখিয়েছিলেন।

জানা যায়, রাজ্যপালের মালয়ালম ভাষায় লেখা আত্মজীবনীতেও তিনি উল্লেখ করেছেন, জলপাইগুড়ি ও সহকর্মী অশোক কুমার রায়চৌধুরীর কথা। বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি জলপাইগুড়ি আসেন সেই সময়ের ব্যাঙ্কের পুরনো সহকর্মী অশোক কুমার রায় চৌধুরীর বাড়িতে তার সঙ্গে দেখা করতে।

এদিন বিকেলে শহরের পুরাতন মসজিদ লেনে হাজির হন রাজ্যপাল। রাজ্যপালের আগমন উপলক্ষে জেট ক্যাটাগরির নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছিল গোটা এলাকা ও রাস্তাঘাট। বিশাল সিআরপিএফ বাহিনী ছিলেন নিরাপত্তার দায়িত্বে। রাজ্যপাল ৪ নং ঘুমটির পুরাতন মসজিদ এলাকা ঘুরে দেখেন। এরপর তিনি অশোক কুমার রায় চৌধুরীর বাড়িতে যান। আর রাজ্যপাল বাড়িতে যাওয়ায় খুশি অশোক কুমার রায় চৌধুরী। পুরনো সহকর্মীকে কাছে পেয়ে গলা জড়িয়ে ধরলেন তিনি। এদিন প্রায় ৫০ মিনিট অশোক বাবুর বাড়িতে ছিলেন রাজ্যপাল। দুজনে স্মৃতিচারণ করেন পুরোনো দিনের কথা। যদিও সেই আলাপচারিতায় প্রবেশাধিকার ছিল না মিডিয়ার। অশোক বাবু এদিন রাজ্যপালকে উপহার হিসেবে তুলে দেন সাদা শাল। আর রাজ্যপাল অশোক বাবুকে দেন নিজের আত্মজীবনী ও একটি স্মারক। এদিন রাজ্যপালের সাথে ছিলেন জলপাইগুড়ির জেলা শাসক।

রাজ্যপাল তার বাড়িতে আসায় খুশি অশোক কুমার রায় চৌধুরী। অশোক বাবু জানিয়েছেন, রাজ্যপাল তার সাথে পুরোনো দিনের স্মৃতির কথা বললেন। প্রায় ছয় মাস কর্মসূত্রে জলপাইগুড়ি ছিলেন তিনি। থাকতেন শহরের প্রভাত হোটেলে। তিনি ছিলেন খুবই নম্র আর ভদ্র এবং বুদ্ধিমান। এদিন তার বাড়িতে কফি , মিষ্টি খেলেন। রাজ্যপাল হিসাবে কলকাতা এসেই রাজ্যপাল তার খোঁজ করছিলেন বলেও জানান অশোক বাবু। রাজ্যপাল হয়েও আমার মতো একজন সাধারণ সহকর্মীর কথা মনে রেখেছেন তাতে তিনি কৃতজ্ঞ।

অন্যদিকে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস পুরোনো স্মৃতি স্মরণ করে খুশি প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আইএএস হওয়ার আগে তার পরিচয় ছিল একজন ব্যাংকার হিসেবে। আর ১৯৭৭ সালে স্টেট ব্যাংকেই তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়েছিল। আমি ভুলতে পারিনি সেইসব দিনের কথা। আমার সহকর্মী আমাকে ভালো করে কাজ শিখিয়েছিলেন।