সংবাদদাতা,জলপাইগুড়ি, ৩০অক্টোবর’২৩ : চাইলেই যে, পুরোনো ঐতিহ্য ধরে রাখা যায় তা আরো একবার প্রমাণ করে দিলো জলপাইগুড়ি গড়ালবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের শোভার হাট সেরু পাড়ার হিন্দু মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের মানুষ।

পুরোনো পরম্পরা মেনে দুই সম্প্রদায়ের উদ্যোগে শুরু হয়েছে কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর মেলা। শুধু তাই নয় পুজো এবং মেলা কমিটিতে সভাপতি যেমন রয়েছে অজিত কুমার বক্সী, একই ভাবে কোষাধক্ষ্য হিসেবে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন বাবলু হক। তাদের বক্তব্য এই পুজো এবং মেলা শুরু করেছিলেন তদানিন্তন জমিদার মধু সুদন দাস। সেই ধারা এখনো চালিয়ে যাচ্ছে।

এবছর এই পুজো ৯৯ বছরে পরলো। জলপাইগুড়ি শহর থেকে মেরে কেটে ১০ কিলোমিটার ! শোভার হাট। পাঙ্গা সেতু পেড়িয়ে কিছুটা গেলে মধু বাবুর মেলার মাঠ। আর সেখানেই শুরু হয়েছে মেলার আয়োজন। এলাকায় অধিকাংশ মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। তারাই এই পুজোতে অগ্রনী ভুমিকা নিয়ে থাকে। স্থানীয় দের বক্তব্য ৯৯বছর আগে এই সেরু পাড়াতে সার্বজনীন লক্ষ্মী পুজো শুরু করেছিলেন জমিদার, মধু সুদন দাস।

পুজো কে কেন্দ্র করে তিন দিন ধরে চলতো মেলা। কিন্তু জমিদার প্রথার অবলুপ্তির পর থেকে প্রায় ৪৫ -৫০ বছর আগে এই পুজোর দ্বায়িত্ব কাঁধে তুলেনেন স্থানীয় বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ হালদার, সুরেন্দ্র নাথ অধিকারী, বসির আহমেদ, মংলু মহম্মদেরা। সেই থেকেই এই পুজো স্থানীয়রা করে আসছেন। পুজো কমিটির সদস্য জয়নাল হক বলেন,, বর্তমানে যেখানে পুজো এবং মেলা হচ্ছে। ৯৯ বছর আগে এখানেই পুজো এবং মেলা বসতো। পুজো উপকরণ থেকে শুরু করে মেলার সমাপ্তি পর্যন্ত ৮০ শতাংশ কাজ মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরাই করে থাকে। এখানে কোন ধর্মীয় মনোভাবের জায়গা নেই সকলেই এক। এই লক্ষ্মী পুজো এবং মেলা যেহেতু পুরোনো তাই তার জনপ্রিয়তা বেশী। মেলাতে জলপাইগুড়ি শহর তো বটেই, আশেপাশের জেলা কোচবিহারে, আলিপুরদুয়ার, থেকেও মানুষের সমাগম হয়ে থাকে। যেহেতু এলাকাটা বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া তাই মেলাতে সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষেরাও আসেন । কমিটির সম্পাদক ভূপতি অধিকারী বলেন একপ্রকার বংশ পরম্পরায় এই পুজো এবং মেলার আয়োজন এলাকার মানুষ করে আসছে। মেলাতে ভাওয়াইয়া, পালা গান, লোক নৃত্যের আসর বসে। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিল্পীরা উপস্থিত হবেন বলে জানান তিনি। মানুষের ঐক্য ভাঙ্গতে যখন নানা কায়দায় ষড়যন্ত্র চালান হচ্ছে, সেই সময় গড়ালবাড়ির সেরু পাড়াতে লক্ষ্মী পুজো এবং মেলা উৎসব এবং সম্প্রতির উদাহারণ বলেই মনে করা হচ্ছে।