উচ্চ মাধ্যমিক ২০২৫: পরীক্ষার নতুন অধ্যায়; নিরাপত্তায় নজিরবিহীন কড়াকড়ি

কলকাতা ও জলপাইগুড়ি : শিক্ষার্থীদের জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় শুরু হচ্ছে আজ, সোমবার, ৩ মার্চ। এবছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য শুধু পাঠ্যবই নয়, পরীক্ষাকেন্দ্রের কঠোর নিরাপত্তাও বড় চ্যালেঞ্জ হতে চলেছে। কারণ, এবারের পরীক্ষায় নজিরবিহীন কড়াকড়ির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে—সিসিটিভি, মেটাল ডিটেক্টর, মোবাইল নিষেধাজ্ঞা এবং সেনসিটিভ কেন্দ্রগুলিতে বিশেষ নজরদারি।

এই বছরই শেষবারের মতো পুরনো সিলেবাস অনুযায়ী উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সাল থেকে, সেমিস্টার পদ্ধতিতে বছরে দু’বার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা নেওয়া হবে। তাই এবারের পরীক্ষা শুধু পরীক্ষার্থীদের জন্য নয়, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থারও একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

নজিরবিহীন নিরাপত্তা: প্রযুক্তির চোখে পরীক্ষাকেন্দ্র

পরীক্ষা মানেই উদ্বেগ, কিন্তু এবারে শুধুমাত্র ছাত্রছাত্রী নয়, নজরদারির চাপে থাকবেন পরীক্ষকেরাও!

মেটাল ডিটেক্টর স্ক্যানিং: পরীক্ষার্থীরা কেন্দ্রে ঢোকার আগে মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হবে, যাতে কেউ মোবাইল, স্মার্ট ওয়াচ বা অন্য কোনো ডিজিটাল ডিভাইস সঙ্গে আনতে না পারে।
সিসিটিভি নজরদারি: প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্রে বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। কেউ নিয়ম ভাঙলে ধরা পড়বে তৎক্ষণাৎ।
৫ মিনিট আগেই প্রশ্নপত্র খোলা হবে: অতীতের ঘটনাগুলি মাথায় রেখে এবার আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, যাতে কোনোভাবেই প্রশ্নপত্র ফাঁস না হয়।
পরীক্ষা বাতিলের হুমকি: পরীক্ষার হলে মোবাইল বা অন্য কোনো নিষিদ্ধ ইলেকট্রনিক গ্যাজেট ধরা পড়লে সেই পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা পুরোপুরি বাতিল হয়ে যাবে।

উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, এবছর ২০৮৯টি পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রায় ৫,০৮,০০০ শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে। এর মধ্যে ১৩৬টি পরীক্ষাকেন্দ্র সেনসিটিভ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, যেখানে বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।

পরীক্ষার চ্যালেঞ্জ: হাতি বনাম পরীক্ষা!

প্রশাসনের মাথাব্যথার জায়গা শুধু প্রযুক্তি নয়, প্রকৃতিও। জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও অন্যান্য বনাঞ্চল লাগোয়া এলাকায় পরীক্ষার সময় হাতির উৎপাত একটা বড় সমস্যা। এই বিষয়টি মাথায় রেখে উচ্চ মাধ্যমিক সংসদ বনদপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করেছে। পরীক্ষার্থীদের সুরক্ষায় বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যাতে কোনোভাবেই বন্যপ্রাণীর কারণে পরীক্ষার পরিবেশ ব্যাহত না হয়।

জলপাইগুড়ির পরিসংখ্যান: ছাত্রীদের আধিপত্য

এবার জলপাইগুড়িতে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৫,০০০।

জেলার ৭৪টি পরীক্ষাকেন্দ্রের মধ্যে মূল ভেনু ১৭টি।

মাধ্যমিকের মতো উচ্চ মাধ্যমিকেও মেয়েরা সংখ্যায় এগিয়ে।

প্রশাসন থেকে কড়া নির্দেশ, পরীক্ষা শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালনা করাই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।


পরীক্ষার নতুন দিগন্ত: বদলাচ্ছে পদ্ধতি, বদলাচ্ছে ভবিষ্যৎ

এবারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শুধু আরও একবার রুটিন পরীক্ষার অংশ নয়—এটি একটি যুগের শেষ ও নতুন যুগের সূচনা।

২০২৬ সাল থেকে সেমিস্টার পদ্ধতি চালু হলে, শিক্ষার্থীদের বছরে দুইবার পরীক্ষা দিতে হবে। ফলে পড়াশোনার চাপ ভাগ হয়ে যাবে, কিন্তু পরীক্ষার সংখ্যা বেড়ে যাবে। এই পরিবর্তন শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ কমাবে, নাকি আরও বাড়িয়ে দেবে, তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে।

তবে আপাতত, এবছরের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের লক্ষ্য একটাই—সাফল্যের পথে এগিয়ে যাওয়া, কড়া নিরাপত্তার মধ্যে নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দেওয়া।

শুভকামনা সকল পরীক্ষার্থীদের জন্য!

ফাইল ছবি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *