স্বাধীনতা সংগ্রামী তথা বিপ্লবীদের গুপ্ত ঠিকানা জলপাইগুড়ির “হিন্দু নিবাস হোটেল”

লেখক পঙ্কজ সেন

জলপাইগুড়ি শহরের অন্তর্গত টাউন স্টেশনের কাছে অবস্থিত হওয়ায় যাত্রীদের থাকা-খাওয়ার সুবিধার্থে ১৯৩৬ সালে “হিন্দু নিবাস” নামক হোটেল বাড়ি বা চা দোকানের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ওপার বাংলা থেকে আগত নীলমণি দত্ত। অবিভক্ত বাংলায় সেই সময়ে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন (তখন তার কোন চিহ্ন ছিল না) হয়ে নয়, জলপাইগুড়ির টাউন স্টেশন হয়ে বর্তমান স্বাধীন বাংলাদেশের চিলাহাটি পার্বতীপুর হয়ে ট্রেন যেত কলকাতায়। নীলমণি দত্তের পুত্র তথা বর্তমান হোটেল মালিক সুবীর দত্ত ওরফে শম্ভু দত্ত জানান যে, তিনি তার পিতার কাছ থেকে শুনেছেন রাত আড়াইটার সময় কলকাতাগামী ট্রেন এসে দাঁড়াতো জলপাইগুড়ি টাউন স্টেশনে। দূর থেকে ট্রেনের শব্দ শুনে গুটিগুটি পায়ে স্টেশনের দিকে রওনা দিত দিনভর হোটেলের ঘরে আত্মগোপন করে থাকা বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামী তথা বিপ্লবীরা। এর ফলে মাঝেমধ্যেই ওদের খোঁজে ইংরেজ পুলিশ হানা দিত এই হোটেলে, কিন্তু কোনদিনই তাদের পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেননি হোটেলের মালিক নীলমণি বাবু। বরং হোটেলের পিছনের নিরাপদ পথ দিয়ে গোপনে তাদের পার করে দিয়েছেন সকলকে। ভৌগোলিক দিক থেকে এই হোটেলটির অবস্থান তৎকালীন সময়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। শহরের এই রেলপথে সেই সময়ে প্রফুল্ল ত্রিপাঠি সহ আরো অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামী রংপুর থেকে জলপাইগুড়ি আসতেন, লড়াই আন্দোলন সংগঠিত করতেন। পরিকল্পনার সাফল্যের পর তারা আবার অন্য কোন ঠিকানায় ফিরে যেতেন। অর্থাৎ ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ইংরেজদের সন্দেহের তালিকায় ছিল জলপাইগুড়ি শহরের বিপ্লবীদের গুপ্ত ঠিকানা এই “হিন্দু নিবাস হোটেল”। ১৯৪৭ এর স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে এদের অনেকেই আবার এসেছেন এবং দেখা করে গিয়েছেন নীলমণি বাবুর সঙ্গে।

"Hindu Nivas Hotel" of Jalpaiguri is the secret address of freedom fighters and revolutionaries.

বর্তমানে সংস্কারের অভাবে হোটেলটির অবস্থা আজ জীর্ণদশা প্রাপ্ত। আজও জলপাইগুড়ি শহরের জেলা পরিষদের ঠিক উল্টোদিকে রাস্তার ওপারেই পরস্পর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে এই হোটেলটি। ওপরের ছবিতে দেখা যাওয়া হোটেলটি অবশ্য নতুন করে বানানো। পূর্বের হোটেলটি ভেঙ্গে সেই স্থানে নতুন করে নির্মাণ করা হলেও তার নাম অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। বর্তমানে অবশ্য হিন্দু নিবাস হোটেলের মালিক সুবীর দত্ত পূর্বেকার হোটেল ব্যবসার পরিবর্তে কয়েক বছর যাবত লোহা, ইট, বালি, সিমেন্টের ব্যবসা করছেন। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে জলপাইগুড়ি শহরের বুকে অবস্থিত মহান নীলমণি বাবুর এই “হিন্দু নিবাস হোটেলে”র গুরুত্ব অপরিসীম এবং শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *