ময়নাগুড়ি, জলপাইগুড়ি : ক্ষুধা যখন জয় করে মায়ের হৃদয়, তখন সমাজও থমকে যায় স্তব্ধ বিস্ময়ে। রবিবার দুপুরে ময়নাগুড়ির মরিচবাড়ি এলাকায় ঘটে গেল এমনই এক বিভীষিকাময় ঘটনা, যেখানে দারিদ্র্য আর অসহায়তার ভার বইতে না পেরে এক মা তাঁর দেড় বছরের সন্তানকে নিক্ষেপ করলেন তিস্তা নদীর জলে।

সীমা বাওয়ালি নামের ওই মা’র অভিযোগ—ক্ষুধায় কাঁদছিল তার শিশুপুত্র, ঘরে দুধ কেনার টাকাটুকুও ছিল না। স্বামী বিপুল বাওয়ালি কাঠমিস্ত্রির ঠিকা শ্রমিক, বহুদিন কাজ নেই, সংসারে টানাপোড়েন চরমে। সেই অসহ্য যন্ত্রণায় বিকেলে সন্তানকে নিয়ে নদীর ধারে যান সীমা।

কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তে উপস্থিত ছিলেন তিনজন—দুই কিশোরী ও এক মহিলা। তাঁদের চোখের সামনেই শিশুকে জলে ফেলে চলে যেতে থাকেন সীমা। আচমকা চিৎকার, ছুটে আসে স্থানীয়রা। বহু চেষ্টায় উদ্ধার হয় শিশুটি, মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসে একটি জীবন।

স্থানীয় বাসিন্দা প্রফুল্ল বিশ্বাস বলেন, “আমরা এমন কাণ্ড জীবনে দেখিনি। সীমা একেবারেই ভেঙে পড়েছে। ওর চোখে শুধু অসহায়তা।”
ঘটনার খবর পৌঁছায় ময়নাগুড়ি থানায়। পুলিশ এসে সীমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। সীমা অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেন। বলেন, “আমি ফেলার জন্য নয়, হাঁটাতে গেছিলাম।”
তবে এ ঘটনা সমাজের দরিদ্রতম প্রান্তের এক নারীর নীরব হাহাকার। প্রশ্ন ওঠে, শুধু সীমার বিচার হলেই কি মিটবে এই ট্র্যাজেডির দায়? নাকি সময় এসেছে—অভাবের অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া এইসব পরিবারদের পাশে দাঁড়ানোর?