অরুণ কুমার : চূড়ান্ত নাটকের পর মধ্যরাত পেরিয়ে শেষ অবধি আস্থা ভোটের পর পাকিস্তানের জাতীয় সংসদে প্রত্যাশামতোই সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় ভোটাভুটিতে হেরে পাকাপাকিভাবে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে যেতে হল তেহরিক ই ইনসাফ পাকিস্তানের প্রধান ইমরান খানকে। এদিন সরকারের বিপক্ষে ১৭৪টি ভোট পড়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বিরোধীরাই এবার সরকার গড়তে চলেছে এবং সেই সরকার শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বে গঠিত হবে বলেই বিভিন্ন সূত্রে স্পষ্ট হয়েছে।
ইমরান খান, শনিবার আস্থা ভোটে পরাজিত হবার পর পাকিস্থানের প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে অপসারিত হয়েছেন। ৩৪২ সদস্যের ন্যাশনাল এসেম্বলিতে ‘অনাস্থা প্রস্তাবে’র পক্ষে ভোট পড়ে ১৭৪টি।
উল্লেখ করা যেতে পারে যে শনিবার দিন রাত ১২টার মধ্যে আস্থা ভোট করতে হবে বলে পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছিল। তবে সময় এগিয়ে চললেও ইমরান খান সরকার আস্থা ভোট করেনি। যার ফলে ইমরান খান, স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের গ্রেফতারের দাবি ওঠে। পাকিস্তান বার অ্যাসোসিয়েশন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সরকার মানছে না বলে আদালতে নালিশও ঠোকে।
সরকার পক্ষের নেতা-মন্ত্রী-আমলারা যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন, সেজন্য পাকিস্তানের সমস্ত বিমানবন্দরে উচ্চ সতর্কতা জারি করে পাকিস্তানের ফেডেরাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি। সেইমতো সারাদেশ জুড়ে এই তিন নেতার বিরুদ্ধে তৎপরতা আরম্ভ হয়ে যায় প্রশাসনিক স্তরে।
এদিকে আস্থা ভোটে হেরে যাওয়ার পরও ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব থেকে সরে আসেননি প্রাক্তন অধিনায়ক ইমরান খান। তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ রয়েছে। তার প্রমাণ একটি হুমকি চিঠি। সেটি তিনি প্রধান বিচারপতিরা হাতে তুলে দেবেন। এবং কোনওভাবেই বিদেশি ষড়যন্ত্রকে পাকিস্তানের মাটিতে সফল হতে দেবেন না।
শনিবার আস্থা ভোট হওয়ার আগে জাতীয় সংসদের স্পিকার আসাদ কাইসার ও ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরী পদত্যাগ করেন। আস্থা ভোট হলে পরাজিত হল ইমরান খান। আর তারপরই স্পষ্ট হয়ে যায়, বিরোধী দলের নেতা শাহবাজ শরিফ হতে চলেছেন পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী। রবিবার সম্ভবত আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর নাম প্রধানমন্ত্রী পদে ঘোষণা হবে।
পাকিস্তানে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রধানমন্ত্রী পূর্ণ সময় অফিসে থাকতে পারেননি। তবে ইমরান খান হলেন প্রথম প্রধানমন্ত্রী যাঁকে আস্থা ভোটে হেরে সরকার থেকে সরে যেতে হল।
উল্লেখ্য এর আগে ইমরান খানের সরকার সংসদের নিম্ন কক্ষ ভেঙে দেয়। তারপরই বিরোধীরা সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করলে ভোটাভুটির নির্দেশ দেয় পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট। ইমরান খানদের প্রথম থেকেই অভিযোগ ছিল যে নির্বাচিত সরকারকে ফেলতে বিদেশি শক্তি ষড়যন্ত্র করছে। ফলে পাকিস্তানের স্বার্থ রক্ষা করতে কোনওভাবেই আস্থা ভোট করা যাবে না।
প্রসঙ্গত ২০১৮ সালে সেনার সমর্থনেই ভোটে জিতে সরকার গড়েন ইমরান খান। তবে সম্প্রতি তাঁর জোটসঙ্গীরা তাঁকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। তারপরই সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় ইমরানের জোট। ফলশ্রুতি, আস্থা ভোটে হেরে শেষ অবধি বিদায় নিতে হল ইমরান খানকে।
জেল থেকে বেরিয়েই ‘খেলা ঘোরালেন’ পাকিস্তানের সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) সভাপতি এই শাহবাজ শরিফ। প্রধানমন্ত্রী পদের দৌড়ে তিনি অনেকটাই এগিয়ে।
পাকিস্তান একটা সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। সমগ্র বিশ্বের নজর এই দেশটির দিকে।ভোটে হেরে গেলে ক্ষমতাচ্যুত ইমরান। জিতলে এ যাত্রায় টিকে যেতো ইমরানের গদি। কিন্তু,বিধি বাম। তবে শোনা যাচ্ছে, অনাস্থা ভোটে ইমরানের বিদায় একরকম নিশ্চিত ধরে নিয়ে সম্ভাব্য নতুন সরকার গঠনের আলোচনা শেষ করেছে বিরোধী জোট আস্থা ভোটের আগে থেকেই।
পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে শাহবাজ শরিফ। বাবা যখন দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে তখন পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হতে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন শাহবাজ শরিফের ছেলে হামজা শাহবাজ। দুই ভিন্ন রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে দুই ব্যক্তির সামনেই কঠিন লড়াই ও বড় ধরনের অর্জনের হাতছানি।
আস্থাভোটের মাধ্যমে অপসারিত প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসের সূচনা ঘটিয়ে ফেললেন তিনি। পূর্বসূরিদের সঙ্গে একসারিতে নিজেকে বসাতে চাননি। বরং পাকিস্তানের রাজনীতিতে নতুন করে ইতিহাস লিখতে চেয়েছিলেন। ক্ষমতাচ্যূত হয়ে তাই নিজেই আলাদা উপাখ্যানের রচনা করলেন ইমরান খান।
ইতিহাসের এই কঠিন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর মসনদে এখন যিনি বসবেন দেখা যাক তিনি দেশকে কোন পথে নিয়ে চলেন আগামী দিনে।