জলপাইগুড়িতে পুর ভোটের প্রচারের পারদ চড়ছে; অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ; বিধায়কের বিরুদ্ধে ধর্ণা; বিরোধী শুন্য পুর বোর্ডের দাবী তৃণমূলের

নিজস্ব সংবাদদাতা, জলপাইগুড়ি, ২২শে ফেব্রুয়ারি ২০২২ : পুর নির্বাচন কে ঘিরে জলপাইগুড়িতে চলছে শেষ পর্যায়ের প্রচার। আজ জলপাইগুড়িতে আসেন তৃণমূলের অন্যতম নেতা অরূপ বিশ্বাস, শিলিগুড়ির নতুন মেয়র গৌতম দেব। অরূপ বাবু বিরোধীদের জগাই, মাধাই, গদাই বলে তাচ্ছিল্য করে বলেন জলপাইগুড়ির তিনটি পুরসভা বিরোধী শূন্য হবে। গৌতম বিশ্বাস দাবী করেন, জলপাইগুড়িতে সহজেই জয় আসবে তৃণমূলের। পাশাপাশি এদিন বিজেপি শিখা চ্যাটার্জী দলীয় প্রার্থীদের হয়ে শহরে প্রচার করেন। এদিনও শহরের দুটি ওয়ার্ড থেকে ফ্ল্যাগ, ফেস্টুন ছিঁড়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ১৮নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল বিরোধীদের দিকে অভিযোগ করে এবং ১৪ নং ওয়ার্ডে কংগ্রেস দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। সেইসাথে আজ তৃণমূল বিধায়কের মিথ্যাচারের প্রতিবাদে অবস্থান বিক্ষোভ ২১ নিং ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী নব্যেন্দু মৌলিকের। এইসব খবর বিস্তারিত পড়ুন এরপর।

বিরোধীদের “জগাই, মাধাই, গদাই” বলে বিরোধী শূন্য পুর বোর্ডের দাবি অরূপ বিশ্বাসের

জলপাইগুড়িতে অরূপ বিশ্বাস

“জগাই ,মাধাই আর গদাইয়ের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লড়ছে তৃণমূল, জেলার তিনটি পুরসভায় জয় নিশ্চিত।” মঙ্গলবার রাতে জলপাইগুড়ি পৌঁছে শহরের একটি হোটেলে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে এমন ভাবেই আসন্ন পুর নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের ভূমিকা বর্ণনা করলেন তৃণমূলের অন্যতম নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস।
জলপাইগুড়ি, ময়নাগুড়ি, মালবাজার এই তিনটি পুর সভায় জয় নিশ্চিত বলেও দাবি করেন এই তৃণমূল নেতা তথা সদ্য ঘোষিত সর্ব ভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের কোর কমিটির অন্যতম সদস্য অরূপ বিশ্বাস।

জেলায় দলীয় কোন্দল প্রসঙ্গে তিনি জানান, এগুলো সংবাদমাধ্যম তৈরি করে। জলপাইগুড়ি পুরসভা ভোটে নির্দল প্রার্থীকে পুলিশ দ্বারা মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার যে ব্যাপারটি রাজ্যজুড়ে শাসক দলের অস্বস্তি বাড়িয়ে তুলেছিলো, সেই ঘটনা সম্পর্কে অরূপ বাবু বলেন, এমন কোনো ঘটনা জানা নেই। এই প্রসঙ্গ টেনে নিয়ে তিনি আরো বলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ডেলি প্যাসেঞ্জারি করে গেলেন রাজ্যে। তাদের আটকায় নি তৃণমূল, তাহলে অন্য কাউকে তো আটকানোর কোনো প্রশ্নই উঠছে না। প্রশ্নগুলো এড়িয়ে গেলেও সত্যিটা কি সত্যিই এড়ানো সম্ভব?

“সহজেই জয় আসবে তৃণমূলের জলপাইগুড়িতে”- গৌতম দেব

জলপাইগুড়ির প্রার্থীদের সাথে গৌতম দেব

শিলিগুড়ি পুর কর্পোরেশনের মেয়র গৌতম দেব মঙ্গলবার জলপাইগুড়ি পুরসভা নির্বাচনের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীদের সাথে দেখা করলেন। এনিয়ে এদিন কদমতলার পাটগোলা তৃণসাথীতে একটি বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। প্রার্থীদের সাথে আলাপচারিতার পর সাংবাদিকদের তিনি বলেন, জলপাইগুড়ি পুরসভা নিশ্চিতভাবে তৃণমূল কংগ্রেস দখল করবে। দু একটি জায়গায় শুধুমাত্র লড়াই হতে পারে। কিন্ত সামগ্রিকভাবে ফল ভালোই হবে বলে তিনি জানান। গৌতম বাবু বলেন, দিদি সবসময় চান আমি একটি বড় জায়গা জুড়ে কাজ করি। ইস্টার্ন বাইপাসে একটি পার্টি অফিস তৈরি হবে। দিদি অনুমতি দিলে বড় একটি ঠিকানা সেখানে হবে বলে মনে করেন গৌতম বাবু।

“রাজ্য জুড়ে বিরোধীদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে শাসক দল”- শিখা চ্যাটার্জী

জলপাইগুড়িতে দলের হয়ে প্রচারে শিখা চ্যাটার্জী

বিজেপির দলীয় কার্যালয় থেকে মঙ্গলবার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রচার অভিযানে ছিলেন ডাবগ্রাম ফুলবাড়ির বিজেপি বিধায়ক শিখা চ্যাটার্জী। তিনি ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী টিনা গাঙ্গুলির হয়ে প্রচার করেন। সারা রাজ্য জুড়ে বিরোধীদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে শাসক দল। বিভিন্ন জায়গায় তাদের হোর্ডিং, ফ্ল্যাগ, ব‍্যানার ছিড়ে দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন বিধায়ক শিখা চ্যাটার্জী।

দলীয় পতাকা, ফেস্টুন খুলে ফেলে অরাজকতা সৃষ্টির অভিযোগ তৃণমূল প্রার্থীর

তৃণমূলের অভিযোগ বিরোধীদের দিকে

দলীয় পতাকা, ফেস্টুন খুলে ফেলে অরাজকতা সৃষ্টির অভিযোগ করলেন তৃণমূল প্রার্থী। এই সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী নয় দল, দাবি কংগ্রেস প্রার্থীর। চাঞ্চল্য জলপাইগুড়ি পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে।

মঙ্গলবার জলপাইগুড়ি পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে এবারের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী তথা প্রাক্তণ পুর চেয়ারম্যান মোহন বোসের ভাই উত্তম বোস অভিযোগ করে বলেন, তিনি যে কোনো দলের পতাকা পথে পরে থাকতে দেখলে যথাযথ সম্মানের সঙ্গে সেটিকে সরিয়ে রাখেন। কিন্তু তিনি যে ওয়ার্ডে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন সেই ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন স্থানে তৃণমূল কংগ্রেসের পতাকা, ফেস্টুন খুলে ফেলে দেওয়ার খবর আসছে। এই প্রসঙ্গে উত্তম বাবু সরাসরি বিরোধী দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, পঁচিশটি ওয়ার্ডেই তৃণমূল কংগ্রেস জয়ী হবে। নিজেদের হার নিশ্চিত বুঝেই বিরোধী দল তাদের পোস্টার, ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলে দিয়ে এলাকায় অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।

অপরদিকে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থীর তোলা এই অভিযোগ প্রসঙ্গে ওই ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী  অসীম তরফদার জানান, এই অভিযোগ ভিত্তিহীন, কারণ জাতীয় কংগ্রেস এই সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী নয় কোনো দিন। তিনি এই ধরনের কাজের প্রতিবাদ করছেন।

১৪নং ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থীর ফ্ল্যাগ, পোস্টার ছিঁড়ে নর্দমায় ফেলে দেওয়ার অভিযোগ

কংগ্রেসের ফ্ল্যাগ, ফেস্টুন ছেঁড়ার অভিযোগ

আজ ১৪নং ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থীর ফ্ল্যাগ, পোস্টার ছিঁড়ে নর্দমায় ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠলো। যদিও ওই ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী কোন রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন নি। কিন্তু এই অপসংস্কৃতি নিয়ে চিন্তিত শহরের সচেতন নাগরিকরা।

১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেসের প্রার্থী বিমল পাল চৌধুরী বলেন, কেউ বা কারা তাঁর নির্বাচনী প্রচারের জন্য লাগানো ফ্ল্যাগ, পোস্টার ছিঁড়ে নর্দমায় ফেলে দিয়েছে। তাঁরা এই ধরণের কাজ করে এলাকার শান্তির পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করছেন। তিনি জানান, পূর্বে কোনদিন এই ধরনের ঘটনা এই ওয়ার্ডে হয় নি। এই ঘটনার জন্য পুলিশের কাছে যাওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি। পুর ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। যদিও বিষয়টি নিয়ে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী সঞ্জীব ঘোষ বলেন, তৃণমূল কংগ্রেস এই ধরনের কাজ করে না। তাঁর অভিযোগ, বিরোধীরা নিজেরাই এই ধরনের কাজ করে সম্ভবত প্রচারে আসতে চাইছেন।

তৃণমূল বিধায়কের মিথ্যাচারের প্রতিবাদে অবস্থান বিক্ষোভ নির্দল প্রার্থী নব্যেন্দু মৌলিকের

In Jalpaiguri, the mercury of the general election campaign is rising
তৃণমূল বিধায়কের বিরুদ্ধে অবস্থান বিক্ষোভ নির্দল প্রার্থীর

রাজগঞ্জ এর তৃণমূল বিধায়ক খগেশ্বর রায়ের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ তুলে অবস্থান বিক্ষোভে বসলেন জলপাইগুড়ি পুরসভার ২১ নং ওয়ার্ড এর নির্দল প্রার্থী নব্যেন্দু মৌলিক। তার অভিযোগ গত রবিবার ওই ওয়ার্ড এর শিরিষতলা মোড়ে এক নির্বাচনী পথসভায় রাজগঞ্জ এর বিধায়ক দাবী করেন তিনি স্থানীয় বিলপাড়া রটন্তী ক্লাব ও পাঠাগারকে রাজ্য সরকারের ৫ লক্ষ টাকা অনুদান দিয়েছেন। যদিও এলাকার সকলেই জানেন ক্লাবটি ২০১৭ সালে ২ লক্ষ টাকা পেয়েছিল। উল্লেখ্য, ওই সময় এই ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন নির্দল প্রার্থী নব্যেন্দু। এই ঘোষনার পর থেকেই এলাকায় জল্পনা শুরু হয় তাহলে তিন লক্ষ টাকার কি হলো? ঘটনাটি জানতে পেরে সোমবার বিকালে শিরিষতলা মোড়ে পথসভা করে নব্যেন্দু মৌলিক যাবতীয় ব্যাঙ্ক তথ্য এবং সরকারি কাগজ দেখিয়ে দাবী করেন যে বিলপাড়া রটন্তী ক্লাব ও পাঠাগার কখনই ৫ লক্ষ টাকা পায়নি। ২০১৭ সালের ২ লক্ষ টাকাই একমাত্র সরকারী অনুদান। এরসাথে ওই টাকার সবটাই যে খরচ হয়েছিল তার তথ্যও তুলে ধরেন তিনি। এই ঘটনার প্রতিবাদে এদিন বিলপাড়া রটন্তী ক্লাব ও পাঠাগারের সামনে অবস্থান বিক্ষোভে বসেন নব্যেন্দু। হাতে ছিঃ বিধায়ক ছিঃ লেখা পোস্টার। নব্যেন্দুর দাবী ভোট রাজনীতিতে সুবিধা পেতে এবং তাকে বদনাম করেই এতটা মিথ্যাচার করেছেন রাজগঞ্জ এর বিধায়ক। যদিও তাতে লাভ হবে না বলেও দাবী তার। তার বক্তব্য মানুষের সামনে সত্য তুলে ধরেছি। মানুষ তার বিচার করবেন।

এবিষয়ে রাজগঞ্জ এর বিধায়ক খগেশ্বর রায় বলেন, সব ক্লাবকেই ৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়ার কথা ছিল। ধাপে ধাপে সেই টাকা প্রদান করা হবে। বিলপাড়া রটন্তী ক্লাব ও পাঠাগারকেও ৫ লক্ষ টাকা মঞ্জুর করা হয়েছে। তারা বলেছে দুই লক্ষ টাকা পেয়েছে। তিন লক্ষ টাকা পায়নি। সেটা ওই ক্লাব কতৃপক্ষের ব্যর্থতা। তিনি বলেন ওই ক্লাব নিশ্চয়ই ২ লক্ষ টাকা খরচের হিসাব দেখাতে পারে নি তাই বাকি টাকা পায় নি। কিন্তু ওই ক্লাবের জন্য ৫ লক্ষ টাকাই মঞ্জুর করা হয়েছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *