উন্নত প্রযুক্তির জমানায় হারিয়ে যেতে বসেছে মাটির কলসি, কুঁজো

রাহুল মন্ডল, মালদা, ১৭ এপ্রিল ২০২২ : একটা সময় ছিল যখন গরম এলেই বাড়ির মহিলারা মাটির কুঁজো-কলসিতে জল ভরে রাখতেন। কোন মানুষ রোদে তেতে পুড়ে ঘরে ফিরে এক গ্লাস মাটির কলসি কিংবা কুঁজোর জল গড়িয়ে পান করলেই তার সারা শরীর জুড়িয়ে যেত। তবে বর্তমানে সময় পালটেছে। ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ।

বেশিরভাগ ঘরেই এখন ফ্রিজ ঢুকে পড়েছে। আর বিদ্যুতের সাহায্যেই চলছে এই ফ্রিজে জল ঠান্ডা সহ অন্যান্য জিনিস সতেজ রাখার ব্যবস্থা। আর তাই আগের মতো মাটির কুঁজো-কলসির ব্যবহার নেই। চাহিদা কম আর খানিকটা উপযুক্ত মাটির অভাবে এখন কুমোররাও বড় মাটির কলসি কিংবা কুঁজো তৈরি করার পরিবর্তে তাঁরা শুধুই ছোট কলসি গড়ে থাকেন। কারণ, ছোট কলসির চাহিদা গোটা বছরই অল্পবিস্তর লেগে থাকে। পুজো হোক কিংবা বিয়ে, ছোট মাটির কলসি লাগবেই। কেন বড় থেকে ছোটতে অবতরণ?

তারই খোঁজ পেতে মালদা জেলার চাঁচলের কুমোরদের পাড়ায় যাওয়া হল। চাঁচলের মতিয়ার পুরের পালপাড়া এলাকার বাসিন্দা নিতাই চন্দ্র পাল। ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে তারা মাটির কারবারের সঙ্গে যুক্ত। একসময় প্রচুর মাটির কলসি, কুঁজো ও অন্যান্য মাটির জিনিস তারা তৈরি করতেন। গ্রীষ্মকালে মাটির কলসির চাহিদা ছিল দেদার। চাকে মাটির কলসি তৈরি করে বাড়ির সামনে উঠোনে শুকাতে দিতেন তারপর তৈরি হবার পর সেগুলিকে বাজারে পাঠাতেন। তার মাটির কলসি চাঁচল, হরিশ্চন্দ্রপুর, এমনকি বিহার সংলগ্ন এলাকায় পাড়ি দিত। এখন বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তির জমানায় সেই মাটির কলসি আস্তে আস্তে হারিয়ে যেতে বসেছে । মানুষজন আর মাটির কলসি কিনতে চান না। পাশাপাশি উপযুক্ত মাটির অভাবেও এখন কুমোররা বড় মাটির কলসি কিংবা কুঁজো তৈরি করেন না।

এ বিষয়ে মৃৎশিল্পীর স্ত্রী জয়ন্তী পাল জানান, একসময় কলসির চাহিদা থাকলেও এখন বর্তমানে সেই কলসির চাহিদা নেই। মানুষজন আর কলসি কিনেন না। এখন প্রত্যেকের বাড়িতে ফ্রিজ হয়েছে হয়েছে অত্যাধুনিক জল ধারণ করার ঠান্ডা পাত্র। যার কারনে আস্তে আস্তে চাহিদা কমেছে মাটির কলসি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *