সংবাদদাতা, জলপাইগুড়ি, ১৪ অক্টোবর’২৩ :
মহালয়ার ভোরে জলপাইগুড়ির তিস্তা নদীর স্পারে কাশ বনে ঢল মানুষের। তিস্তা পাড়ে এবং রাজবাড়ী দিঘীতে পিতৃতর্পণের ভিড় লক্ষ্য করা গেল। তিস্তার পরিবর্তে জলাশয়ে তর্পণ সারলেন তর্পণ সমিতির সদস্যরা।

মহালয়া মানেই দেবী পক্ষের সূচনা। ভোর বেলা বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে মহিষাসুরমর্দিনী পাঠ দিয়ে ঘুম ভাঙে বাঙালির। অনেকেই আবার এ দিন ভোরে পিতৃ পুরুষের উদ্দেশ্যে তর্পণ করেন। আতঙ্কের মধ্যেই মহালয়ার সকালে পিতৃতর্পনের জন্য ভিড় তিস্তা পাড়ে। মেঘভাঙ্গা বৃষ্টির কারণে যে তিস্তা নদী ফুলে ফেঁপে উঠেছিল, সেই তিস্তা নদীর তীরেই জলপাইগুড়িতে মহালয়ার সকালে পিতৃতর্পণের ভিড় লক্ষ্য করা গেল। আতঙ্কের মধ্য দিয়েই এদিন পিতৃতর্পণ সারলেন অনেকে। উল্লেখ্য মহালয়ার সকালে পূর্ব পুরুষদের তর্পন করা হয় নিয়ম নিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। সেই অনুযায়ী এবারো চলছে তর্পন। তবে এবার একটু আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে তিস্তা নদী তীরবর্তী এলাকায়। কেননা পাহাড়ি রাজ্য সিকিমে ভয়াবহ বন্যার কারণে ফুলেফেঁপে উঠেছিল তিস্তা নদী। সেই তিস্তা নদীতে ভেসে যায় পাহাড়ের উপরে থাকা সেনাবাহিনীর শিবির। যে কারণে তিস্তা নদীতে ভেসে আসে সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত মর্টার শেল থেকে শুরু করে অন্যান্য সামগ্রী। তিস্তা নদীর জলে ভেসে সেগুলি সমতলে চলে আসে। অনেকেই বুঝতে না পেরে সেনাবাহিনীর সেই ব্যবহৃত মর্টার শেল বাড়িতে নিয়ে আসেন। এরপর তিস্তা নদীর তীরবর্তী ক্রান্তি ব্লকের চাপাডাঙ্গা পন্ডিত পাড়ায় মর্টার শেল ফেটে একজনের মৃত্যু হয় এবং পাঁচজন আহত হন। এরপর তিস্তা তীরবর্তী এলাকায় অভিযান চালিয়ে একাধিক মর্টার শেল উদ্ধার করে সেনাবাহিনী ও পুলিশ এবং নিরাপদ জায়গায় সেগুলি নিয়ে গিয়ে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্ক্রিয় করা হয়। পাশাপাশি তিস্তা নদী তীরেও মাঝে মধ্যেই মর্টার শেল বিষ্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। আর তাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে তিস্তা পাড়ের বাসিন্দারা। যে কারণে শনিবার সকালে কিছুটা আতঙ্কের মধ্যেই পিতৃতর্পণ সারলেন অনেকেই। তবে আতঙ্কের কারণে এদিন পিতৃতর্পনের জন্য ভিড় অনেকটাই কম ছিল বলে জানালেন অনেকে।

তিস্তা পাড়ের পাশাপাশি এদিন জলপাইগুড়ি শহরের রাজবাড়ীর পুকুরে তর্পণ করার চিত্র দেখা গেল। এদিন রাজবাড়ী দীঘিতে প্রচুর সংখ্যক লোক তর্পণ করেন। এই তিথিতে পিতৃপক্ষের অবসানে তর্পণ করা হয় পরলোকগত পূর্বপুরুষদের উদ্যোগে। এ নিয়ে জনৈক ব্যাক্তি জানান, আমি গত তিরিশ বছর থেকে তর্পণ করে আসছি। আগে এতো ভিড় হতো না কিন্তু এখন প্রচুর লোক তর্পণ করে দেখে খুব ভালো লাগছে।

জলপাইগুড়ির আবেগ তিস্তা নদীর স্পার। মহালয়ার ভোরে প্রতিবছর তিস্তা স্পারে উপচে পড়ে ভিড়। এবারও সেই একই দৃশ্য দেখা গেল। ৮ থেকে ৮০ বয়সী সকলের ভিড়ে উপচে পড়লো তিস্তা নদীর স্পারগুলোতে। পুলিশের পাহারাও ছিল সকাল থেকেই। তিস্তা পাড়ের কাশবনসহ বিভিন্ন জায়গায় বড় থেকে ছোট সকলেই আনন্দ উপভোগ করেন।

জলপাইগুড়ির তিস্তা নদীতে নামা নিষিদ্ধ তাই এবার জলাশয়ে তর্পণ সাড়লেন পনেরো বছর থেকে তর্পণ করে আসা সামাজিক সংগঠন তর্পণ সমিতি। এদিন তর্পণ করার পাশাপাশি তাঁরা বেশ কয়েক জনকে শাড়ি বিতরণ করলেন। তিস্তায় ভেসে এসেছে সিকিমের বন্যা কবলিত এলাকার থেকে সেনার জিনিস পত্র। তাই জেলা প্রশাসনের তরফে নদীতে নামা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিগত পনেরো বছর থেকে এই নদীতে তর্পণ করে আসলেও এবার সকলের কথা চিন্তা করে শহরের দেশবন্ধু নগর এলাকার জলাশয়ে তাদের তর্পণ সারলেন তারা। এর পাশাপাশি বেশ কয়েকজনের হাতে পুজোর নতুন শাড়ি উপহার দিলেন তর্পণ শেষে।