Cricket : আইপিএল বনাম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট: ইনজামামের ক্ষোভে কতটা সত্য?

পিনাকী রঞ্জন পাল : ক্রিকেট বিশ্বে এখন সবচেয়ে বিতর্কিত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু—আইপিএল বনাম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। পাকিস্তানের প্রাক্তন অধিনায়ক ইনজামাম-উল-হক এবার সরাসরি আক্রমণ করলেন বিসিসিআই এবং আইপিএলকে। তাঁর দাবি, ভারত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের স্বার্থকে উপেক্ষা করে নিজেদের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগকে একচ্ছত্র আধিপত্যশালী করে তুলেছে।

তবে সত্যিই কি আইপিএল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য হুমকি হয়ে উঠছে? নাকি এটি শুধু হতাশার বহিঃপ্রকাশ?

আইপিএল: আধিপত্য না কি প্রভাব?

আইপিএল শুরু হয়েছিল ২০০৮ সালে, আর মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই এটি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী, জনপ্রিয় এবং প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট লিগে পরিণত হয়েছে। আইসিসি বা অন্যান্য দেশের ক্রিকেট বোর্ড চাইলেও, ক্রিকেটারদের আইপিএল থেকে দূরে রাখতে পারছে না। কারণ, এখানে শুধু টাকা নয়, আন্তর্জাতিক মানের প্রতিযোগিতা ও সুযোগ রয়েছে।

ইনজামামের বক্তব্য, ভারতের খেলোয়াড়দের কোনো বিদেশি লিগে খেলতে দেওয়া হয় না, অথচ অন্য দেশের খেলোয়াড়দের আইপিএলে অংশ নিতে বাধ্য করা হয়। বাস্তবে, বিসিসিআই কখনও জোর করে কাউকে আইপিএলে খেলতে বাধ্য করেনি। বরং খেলোয়াড়রাই স্বেচ্ছায় এখানে অংশ নেন। কারণ, এখানকার অর্থ, প্রতিযোগিতা ও সুবিধা অন্য কোথাও নেই।

হাইব্রিড মডেল বিতর্ক: পাকিস্তানের অসন্তোষ

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫ আয়োজনের দায়িত্ব পেয়েছে পাকিস্তান। কিন্তু ভারতের অংশগ্রহণ নিয়ে রাজনৈতিক জটিলতা থাকায় আইসিসি হাইব্রিড মডেল চালু করেছে—গ্রুপ পর্ব পাকিস্তানে হলেও ভারতীয় দল তাদের ম্যাচ খেলছে দুবাইয়ে। পাকিস্তানের অভিযোগ, এর ফলে ভারত বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে, আর এতে তাদের হোস্টিং মর্যাদা ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

কিন্তু বাস্তবতা কি তাই?

ভারতীয় বোর্ডের কূটনৈতিক শক্তি, আর্থিক ক্ষমতা এবং বাজার-নিয়ন্ত্রণের কারণে আইসিসি চাইলেও ভারতকে উপেক্ষা করতে পারে না। বিশ্বের ক্রিকেট এখন অনেকটাই বিসিসিআই-নির্ভর।

ইনজামামের আইপিএল নিষেধের ডাক: বাস্তবসম্মত নাকি প্রতিশোধমূলক?

ইনজামাম চান, অন্যান্য দেশগুলোর উচিত নিজেদের খেলোয়াড়দের আইপিএলে খেলতে না পাঠানো, যেহেতু ভারত তাদের ক্রিকেটারদের অন্য লিগে খেলতে দেয় না।

কিন্তু বাস্তব সত্য হলো—এটি কোনো দেশকে বাধ্য করার বিষয় নয়।

আইপিএল শুধু ক্রিকেটারদের নয়, সংশ্লিষ্ট বোর্ডগুলোরও জন্য বড় উপার্জনের মাধ্যম।

অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা—সবাই এখান থেকে লাভবান হয়।

পাকিস্তানের খেলোয়াড়রা বাদ থাকলেও, অন্য দেশগুলোর কাছে আইপিএল না খেলার মতো কোনো যুক্তি নেই।

তবে এটা ঠিক যে, ভারত চাইলে তাদের ক্রিকেটারদের অন্য লিগে খেলতে পাঠাতে পারে। কিন্তু ভারতের জন্য এটা অনেকটাই কৌশলগত সিদ্ধান্ত। একদিকে তারা আন্তর্জাতিক সিরিজ এবং আইপিএলের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে চায়, অন্যদিকে বিদেশি লিগগুলোতে অংশ না নিয়ে নিজেদের প্রতিযোগিতা আরও আকর্ষণীয় রাখতে চায়।

পাকিস্তানের ব্যর্থতা, ভারতের সাফল্য—এটাই আসল বিতর্ক?

যখন পাকিস্তান ২৯ বছর পর বড় কোনো আইসিসি টুর্নামেন্ট আয়োজনের সুযোগ পেয়েও বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে যায়, তখন তারা ভারতের দিকে অভিযোগের তির ছোড়ে।

পাকিস্তানের নিজস্ব লিগ পিএসএল কখনোই আইপিএলের মতো প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি।

তাদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আয়োজনের ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অন্যদিকে, ভারত ক্রিকেট বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করছে শুধু তাদের অর্থনৈতিক শক্তির কারণে নয়, বরং তাদের ধারাবাহিক পারফরম্যান্স ও বাজারের কারণে।

পাকিস্তানের মিডিয়া এবং সাবেক ক্রিকেটাররা যে পরিমাণে বিসিসিআই ও আইপিএলকে দোষারোপ করছে, তাতে একটা বিষয় স্পষ্ট—তারা নিজেরাই বুঝতে পারছে, ক্রিকেট বিশ্বে ভারতের আধিপত্য কেবল অর্থ নয়, প্রভাবেরও ফল।

আইপিএল একাধারে বিতর্কিত এবং সফল। একদিকে এটি ক্রিকেটারদের জন্য স্বপ্নের প্ল্যাটফর্ম, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কাঠামোয় প্রভাব ফেলছে।

ইনজামাম-উল-হকের মন্তব্য নিছক হতাশার প্রতিফলন, নাকি সত্যিই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য ভাবার বিষয়—তা সময়ই বলে দেবে। তবে একথা অস্বীকার করার উপায় নেই, ক্রিকেট বিশ্বে এখন সবচেয়ে বড় নাম—ভারত এবং আইপিএল!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *