পিনাকী রঞ্জন পাল : একটি সংস্থার সদর দফতর ঠিক কোথায় থাকবে, তা কি সত্যিই কোম্পানির সাফল্য নির্ধারণ করতে পারে? শুনতে অবাক লাগলেও, লন্ডনভিত্তিক বাণিজ্য পরামর্শদাতা সংস্থা “এনন্থ্রোপিয়া”-এর অন্যতম কর্ণধার পিউ দত্ত তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে এমনই দাবি করেছেন। তাঁর মতে, শুধুমাত্র কলকাতার ঠিকানার কারণে এক সংস্থা বারবার ব্যর্থ হচ্ছিল, অথচ সেই সংস্থা বেঙ্গালুরুতে স্থানান্তরিত হওয়ার পর মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই তাদের মার্কেট ভ্যালু ৫০% বৃদ্ধি পেয়েছে। “দ্য ইকোনমিক টাইমস”এর- ২ মার্চের সংখ্যায় এ নিয়ে একটি প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে।
কলকাতা থেকে বেঙ্গালুরু: পরিবর্তনের কারণ কী?
পিউ দত্তের দাবি, কলকাতার নাম শুনলেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একধরনের নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। শহরের ব্যাকগ্রাউন্ডের কারণে কোম্পানির বাজারমূল্য কমে যায়, যা দীর্ঘমেয়াদে সংস্থার বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করে। অন্যদিকে, বেঙ্গালুরু এখন “ভারতের সিলিকন ভ্যালি” নামে পরিচিত। এশিয়ান টাইমসের মতে, এখানে ৬৭,০০০-এর বেশি আইটি কোম্পানি এবং ৭,৫০০ স্টার্টআপ রয়েছে, যা এক শক্তিশালী ব্যবসায়িক পরিবেশ গড়ে তুলেছে। এই শহরের বাণিজ্যিক ইকোসিস্টেম অনেক বেশি সক্রিয় ও আকর্ষণীয়। ফলে বিনিয়োগকারীরা এখানে আগ্রহ দেখান বেশি। আন্তর্জাতিক স্তরে বেঙ্গালুরুর পরিচিতি ও গ্রহণযোগ্যতা বেশি।

তাহলে কলকাতার সমস্যা কোথায়?
অনেকে মনে করেন, শুধু ঠিকানার কারণে কোনও কোম্পানির মূল্যায়ন কমে যাওয়া অতিরঞ্জিত কথা। তবে বিভিন্ন ব্যবসায়ী এবং বিশ্লেষকদের মতে, কলকাতা শহরের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে না পারা। যদিও শহরটি সাশ্রয়ী ব্যবসায়িক পরিবেশ প্রদান করে এবং অন্যান্য মেট্রো শহরের তুলনায় পরিচালন ব্যয় কম, তবুও আন্তর্জাতিক লগ্নিকারীরা কলকাতায় বিনিয়োগ করতে কম আগ্রহী।
তাহলে কি কলকাতার ভবিষ্যৎ অন্ধকার?
কলকাতার সমস্যা থাকলেও এটি পুরোপুরি ব্যবসার জন্য অনুপযুক্ত, এমনটা বলা যাবে না। এখানে কম খরচে দক্ষ কর্মী পাওয়া যায়, যা অনেক সংস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই শহরের গ্লোবাল ব্র্যান্ডিং দুর্বল। নতুন শিল্প, স্টার্টআপ, কর্পোরেট বিনিয়োগ আনতে হলে কলকাতাকে অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে পুনর্গঠিত করতে হবে। তাহলে ভবিষ্যতে এখানেও স্টার্টআপ সংস্কৃতি গড়ে উঠতে পারে।
পিউ দত্তের বক্তব্য কতটা সত্যি, তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তবে সত্যিই কি শুধুমাত্র ঠিকানা বদলানোই একটি কোম্পানির ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে? নাকি সাফল্যের পেছনে আরও অনেক কারণ আছে? এই প্রশ্নই এখন ব্যবসায়ী মহলে আলোচনার কেন্দ্রে।