ভোট শেষ হওয়ার পর তখনও বুথ থেকে ইভিএম পৌঁছায়নি স্ট্রংরুমে। তার আগেই জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার শহরে আগাম ‘বিজয় মিছিল’ তৃণমূলের। যা দেখে অবাক জনতার প্রশ্ন, গণনার আগেই? কি বলল তৃণমূল। বিজেপির প্রতিক্রিয়াই বা কি? আগাম বিজয় মিছিলের কারন বিশ্লেষণ করলেন জলপাইগুড়ি নিউজের সম্পাদক।

সংবাদদাতা, জলপাইগুড়ি, ২০ এপ্রিল’২৪ : গতকাল অনুষ্ঠিত হল অষ্টাদশ তম লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোটগ্রহণ। ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পর জলপাইগুড়ির মানুষ যে দৃশ্য দেখল, তা বেনজিরই বটে। তখনও বুথ থেকে ইভিএম পৌঁছায়নি স্ট্রংরুমে। তার আগেই জলপাইগুড়ি শহরে আগাম ‘বিজয় মিছিল’ সেরে নিল ঘাসফুল শিবির। যা দেখে অবাক জনতার প্রশ্ন, গণনার আগেই? প্রার্থী নির্মল চন্দ্র রায়কে সাথে নিয়ে বিজয় উচ্ছাসে মেতে উঠে জলপাইগুড়ি জেলা তৃনমূলের নেতা কর্মীরা। তৃণমূলের দাবি, এদিন যে ভাবে ভোট হয়েছে, তাতে শুধু জলপাইগুড়ি নয় আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহার জেলাতেও তৃনমূল প্রার্থীরা রেকর্ড ভোটে জয়ী হচ্ছেন। শুক্রবার রাতে জলপাইগুড়ি শহরের বাবুপাড়ার জেলা তৃনমূল কার্যালয় থেকে মিছিল বের করা হয়। শুধু জলপাইগুড়ি নিয়ে তৃণমূল বিজয় মিছিল করে অলিপুদুয়ার ও কোচবিহারেও। জলপাইগুড়িতে মিছিলে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের জেলা সভানেত্রী মহুয়া গোপ, তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান খগেশ্বর রায়, তৃণমূল প্রার্থী নির্মলচন্দ্র রায়, প্রাক্তন সাংসদ বিজয় চন্দ্র বর্মণ, পুরসভার উপ পুরপিতা সৈকত চ্যাটার্জী সহ একাধিক তৃণমূল নেতা কর্মীরা।

এ বিষয়ে তৃণমূলের জেলা সভানেত্রী মহুয়া গোপ জানান, “মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ভোট দিয়েছে। শুধু তাই নয় দিদির গ্যারান্টি অর্থাৎ লক্ষীর ভান্ডার আমাদের এই জয়ের কারণ। লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে মহিলাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তার উত্তরে মহিলারাই সকাল থেকে ভোট দিয়ে আমাদের জয় নিশ্চিত করে দিয়েছে। তাতে প্রমাণ করছে সমস্ত জায়গায় বিজেপি ল্যাজে গোবরে হয়েছে।” তিনি বিজেপি প্রার্থী জয়ন্ত কুমার রায়কে বিদ্রুপ করে ‘অভিযোগ রায়’ বলে উল্লেখ করে বলেন, “আর আমরা জলপাইগুড়ি শহরে এক অভিযোগকারীকে দেখেছি যিনি শুধু অভিযোগই করে গেছেন।”

অপরদিকে তৃণমূল প্রার্থী নির্মল চন্দ্র রায় বলেন, “খুবই শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে, আমি জয়ের প্রতি নিশ্চিত। বাংলার উন্নয়ন ও লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ভোট হল।”

এ বিষয়ে বিজেপি প্রার্থী জয়ন্ত কুমার রায় বলেন, “তৃণমূল এই উত্তর পাবে ৪ঠা জুন ফলাফলের দিন। এটা করছে তারা তাদের কর্মীদের উজ্জীবিত করার জন্য করছে। কারন তারা জানে ভোট গণনার দিন তারা কাউন্টিং এজেন্টও পাবে না।”

বিষয়টি নিয়ে জলপাইগুড়ি জেলা বিজেপির প্রাক্তন সহ-সভাপতি অলক চক্রবর্তী বলেন, “তৃণমূল হেরে গেছে, আর এই আশঙ্কায় তারা মিছিল করছে। তারা ভয় পেয়ে গেছে।”
ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পরেই জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহারে তৃণমূল কংগ্রেসের আগাম বিজয় মিছিল বের করা প্রসঙ্গে জলপাইগুড়ি নিউজের সম্পাদক পিনাকী রঞ্জন পাল বলেন, “এবার বাংলায় সাত দফায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ১৯ তারিখের পর আরো ছয় দফার নির্বাচন বাকি আছে। সপ্তম দফার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১ জুন। উত্তরবঙ্গ এমনিতেই তৃণমূলের দুর্বল ঘাঁটি। বারবার এই অঞ্চল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে শূন্য হাতে ফিরিয়ে দিয়েছে। তাই এবার ভোটের আগে তিনি বা অভিষেক বারবার ছুটে এসেছেন এবং এখানকার মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে তিনি বা তার দল তাদের পাশে আছেন। আর সেই দুর্বল অঞ্চলেই প্রথম দফায় নির্বাচন ছিল। সেইসাথে দীর্ঘ সময় ধরে হবে এবারের নির্বাচন। তাই প্রথমেই যাতে দলের নেতা কর্মী সমর্থকদের মনোবল ভেঙে না যায়, তার জন্যই সম্ভবত এই আগাম বিজয় মিছিলের স্ট্রাটেজি নিয়েছে ‘আই প্যাক’, যাতে বাকি দফার নির্বাচনের নেতা কর্মী সমর্থকদের মনোবল অটুট রাখা যায়। সেইসাথে বাকি ভোটারদের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দেওয়া যায় যে রাজ্যের সব আসনেই তৃণমূল বিপুল ভোটে জিতছে। তাহলে ভোটের হাওয়া যদি ঘাসফুলের পালে আসে এবং বিরোধীদের বিসর্জনের যে শ্লোগান তারা তুলেছিল সেটাকে যদি কিছুটা সার্থক করা যায়।”