যদিও সৈকতের এই ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রাপ্তি নিয়েও খুশি নয় দলের অনেকেই। তারা প্রকাশ্যে মুখ না খুলতে চাইলেও ( দল বিরোধী কাজের কোপ এড়াতে) তৃণমূল নেতৃত্বের এই সিদ্ধান্তে খুশী হতে পারেন নি।
নিজস্ব সংবাদদাতা, জলপাইগুড়ি, ১৬ মার্চ ২০২২ : অবশেষে সব জল্পনার অবসান মিটিয়ে রাজ্য তৃণমূলের মুখবন্ধ খাম এসে পৌঁছালো জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল কার্যালয়ে।
বুধবার এক সাংবাদিক বৈঠক করে জলপাইগুড়ি জেলার তিনটি পুরসভার চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের নাম ঘোষনা করলেন জেলা তৃণমূল সভানেত্রী মহুয়া গোপ।

জলপাইগুড়ি পুরসভার চেয়ারপার্সন হলেন পুর নির্বাচনে সাত নম্বর ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী পাপিয়া পাল, ভাইস চেয়ারম্যান হলেন আট নম্বর ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত তৃণমূল প্রার্থী সৈকত চ্যাটার্জী। চেয়ারপার্সন হিসেবে পাপিয়া পাল এবং ভাইস চেয়ারম্যান হিসাবে সৈকত চ্যাটার্জীর নাম ঘোষণা হতেই হর্ষোল্লাসে মেতে ওঠেন পাপিয়া দেবী ও সৈকত বাবুর অনুগামীরা। ২০১৫ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত জলপাইগুড়ি পুরসভায় ভাইস চেয়ারপার্সনের দায়িত্বভার সামলেছিলেন পাপিয়া দেবী। সেই সময় চেয়ারম্যান ছিলেন মোহন বোস। করোনার জেরে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন না হওয়ায় ২০২০ সালের জুন মাসে রাজ্যের ১০৮ পুরসভার সাথে জলপাইগুড়ি পুরসভায় প্রশাসক বোর্ডের হাতে দায়িত্বভার দেওয়া হয় রাজ্য সরকারের তরফে। জলপাইগুড়ি পুরসভার প্রশাসক হিসাবে দায়িত্ব বর্তায় পাপিয়া পালের উপর। প্রশাসক বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন সন্দীপ মাহাতো ও সৈকত চ্যাটার্জী।
এবারও পুরভোটে জেতার পর চেয়ারম্যান হিসাবে প্রবল দাবিদার ছিলেন পাপিয়া পাল, সন্দীপ মাহাতো, সৈকত চ্যাটার্জী, তপন ব্যানার্জী। এছাড়াও এই পদের জন্য জল্পনা চলছিল ১২ নং ওয়ার্ডে জেতা তৃণমূল প্রার্থী মনীন্দ্র নাথ বর্মন, ৬ নং ওয়ার্ড থেকে বিজয়ী আইনজীবী সুব্রত পাল নাম নিয়েও। তবে সূত্রের খবর এবার সৈকত চ্যাটার্জী চেয়ারম্যান পদের জন্য মরিয়া চেষ্টা করেছিলেন। তবে তাঁর সব চেষ্টা ব্যর্থ করে তাকে ভাইস চেয়ারম্যান পদ নিয়েই আপাতত সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। যদিও সৈকতের এই ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রাপ্তি নিয়েও খুশি নয় দলের অনেকেই। তারা প্রকাশ্যে মুখ না খুলতে চাইলেও ( দল বিরোধী কাজের কোপ এড়াতে) তৃণমূল নেতৃত্বের এই সিদ্ধান্তে খুশী হতে পারেন নি। কারন সৈকত বাবুর বিরুদ্ধে তৃণমূল নেতা মলয় ওরফে শেখর ব্যানার্জী কে মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার সময় বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। এমনকি ভোট গ্রহণের দিন একটি ওয়ার্ডে ছাপ্পা ভোট দেওয়ার ঘটনায় সৈকত বাবুর অনুগামীদের নাম জড়িয়ে ছিল। দলের অনেকেই এই পদের জন্য দক্ষ প্রশাসক হিসেবে সন্দীপ মাহাতোকে চেয়েছিলেন বলে সূত্রের খবর।
পাশাপাশি ময়নাগুড়ির পুরসভার চেয়ারম্যান হলেন প্রাক্তন বিধায়ক অনন্তদেব অধিকারী এবং ভাইস চেয়ারম্যান হলেন মনোজ রায়। এই পুরসভায় চেয়ারম্যান পদের প্রবল দাবিদার ছিলেন মনোজ রায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় তৃণমূলের বিভিন্ন গ্রুপে চেয়ারম্যানদের যে সম্ভাব্য তালিকা ফাঁস হয়েছিল তাতে মনোজ রায়ের নাম ছিল চেয়ারম্যান হিসাবে। তবে তৃণমূল সুপ্রিমো সম্ভবত অনন্ত বাবুকে চেয়ারম্যান করে তার ক্ষোভ প্রশমন করতে চেয়েছেন। উল্লেখ্য, আরএসপি থেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়া অনন্ত বাবু বিগত বিধানসভা নির্বাচনে দলীয় টিকিট না পেয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন।
আর মালবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন স্বপন সাহা, আর ভাইস চেয়ারম্যান পদে আসীন হলেন উৎপল ভাদুরী।

নাম ঘোষণার পর জলপাইগুড়ি পুরসভার কাউন্সিলরদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হল জলপাইগুড়ি পুরসভার প্রয়াস হলে। বুধবার নব নির্বাচিত পুরসভার কাউন্সিলরদের শপথ বাক্য পাঠ করান সদর মহকুমা শাসক সুদীপ পাল। চেয়ারপার্সন পাপিয়া পাল, ভাইস চেয়ারম্যান সৈকত চ্যাটার্জী সহ জলপাইগুড়ি পুরসভার নব নির্বাচিত কাউন্সিলররা একে একে শপথ গ্রহণ করেন।

উল্লেখ্য, জলপাইগুড়ি পুরসভার ২৫টি আসনের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস একাই পেয়েছে ২২টি আসন। বাকি তিনটি আসনের মধ্যে দুটিতে বিজয়ী হয়েছে কংগ্রেস এবং একটিতে বামফ্রন্ট। তবে ১ নং ওয়ার্ডের পরাজিত কংগ্রেস প্রার্থী ওই ওয়ার্ডে ভোট গ্রহণের দিন ছাপ্পা ভোটের অভিযোগে একটি মামলা করেছেন আদালতে। ১ নং ওয়ার্ডে বিজয়ী হয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী। সেই মামলা বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন।

“সবুজায়নের সঙ্গে বায়ু দূষণ ও প্লাস্টিক মুক্ত শহর গড়তে চাই”- শপথ নিয়ে প্রথম প্রতিক্রিয়া জলপাইগুড়ি পুরসভার চেয়ারপার্সন পাপিয়া পালের। বুধবার শপথ গ্রহণের পর অনুষ্ঠান মঞ্চে উপস্থিত সংবাদ মাধ্যমের সামনে পুরসভার চেয়ারপার্সন হিসেবে প্রথম প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন, অন্যান্য সব নাগরিক পরিষেবা সঠিকভাবে পরিচালিত করার সঙ্গেই শহরকে আরো সবুজে ভরে দেওয়ার পাশাপাশি প্লাস্টিক মুক্ত এবং দূষণের হাত থেকে রক্ষা করার মতো কাজগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।