নিজস্ব সংবাদদাতা, জলপাইগুড়ি : রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের ব্যানার, পোস্টার ছেঁড়ার অভিযোগ প্রতিদিন উঠছে। বুধবার শহরের ১২ নং ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থীর ব্যানার ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায়। এদিন অল ইন্ডিয়া নমঃশূদ্র বিকাশ পরিষদ, মতুয়া মহাসংঘ ও তৃণমূল উদ্বাস্তু সেলের পক্ষ থেকে আসন্ন পুরসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থীদের জয়ী করার আহ্বান জানিয়ে একটি মহা মিছিল জলপাইগুড়ি শহরে অনুষ্ঠিত হয়। পাশাপাশি তৃণমূলের কর্মীসভায় ১ নং ওয়ার্ডের বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা মলয় ব্যানার্জিকে হাত ধরে সভা মঞ্চে নিয়ে আসেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। সব নিয়ে আজকের পুরসভা নির্বাচনের বিশেষ খবর।
তৃণমূল কংগ্রেসের ব্যানার ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা জলপাইগুড়ি শহরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডে

ব্লেড দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের ব্যানার ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা জলপাইগুড়ি শহরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডে। ঘটনাকে ঘিরে একে অপরকে দোষারোপের রাজনীতি চলছে। অভিযোগের তির কংগ্রেসের দিকে। যদিও এই ওয়ার্ডের কংগ্রেসের প্রার্থী নারায়ণ চন্দ্র সরকার বলেন, কংগ্রেসের কোন কর্মী এই ধরনের কাজ করতে পারে না। এটা বিরোধীদের গোষ্ঠীকোন্দলের ফল। সমস্ত বিষয়টি নিয়ে এলাকার মানুষ বিচার করবে।
বুধবার সকালে প্রচার করতে এসে ১২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী মনিন্দ্র নাথ বর্মন দেখেন জয়ন্তী পাড়া এলাকায় তার ব্যানার ছেঁড়া। পাশাপাশি অন্য জায়গায় একাধিক তৃণমূল কংগ্রেসের পতাকা উধাও।যদিও বিষয়টির জন্য তিনি বিরোধীদেরই দোষারোপ করেন। বিষয়টি তিনি পুলিশ প্রশাসনকে জানাবেন বলেও জানান।
বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে এই ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী জয়া সরকারের স্বামী তথা বিজেপি নেতা শ্যাম প্রসাদ বলেন, পুরো ঘটনার জন্য দায়ী কংগ্রেসের প্রার্থী। তিনি এবার হেরে যাবেন, তাই এই ধরনের কাজ করে চলেছেন।
যদিও কংগ্রেস প্রার্থী নারায়ণ চন্দ্র সরকার বলেন, এই ধরনের ঘটনা তারা কোনদিনও করতে পারে না।এর বিচার মানুষই করবে।
তৃণমূল প্রার্থীদের জয়ী করার আহ্বান জানিয়ে অল ইন্ডিয়া নমঃশূদ্র বিকাশ পরিষদ, মতুয়া মহাসংঘ ও তৃণমূল উদ্বাস্তু সেলের মহামিছিল
রাজ্যে জারী রয়েছে কোভিড বিধিনিষেধ, তার মধ্যে মাস্ক ছাড়া মহামিছিল শহর জলপাইগুড়িতে। বিশাল এই মিছিলে হাতে গোনা দুই চারজনকে দেখা গেল মাস্ক পড়ে থাকতে।

অল ইন্ডিয়া নমঃশূদ্র বিকাশ পরিষদ, মতুয়া মহাসংঘ ও তৃণমূল উদ্বাস্তু সেলের পক্ষ থেকে আসন্ন পুরসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থীদের জয়ী করার আহ্বান জানিয়ে এই মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। বুধবারের এই মিছিলের নেতৃত্ব দেন অল ইন্ডিয়া নমঃশূদ্র বিকাশ পরিষদের কার্যকরী সভাপতি তথা নমঃশূদ্র ডেভেলপমেন্ট বোর্ড এর চেয়ারম্যান ও তৃণমূল উদ্বাস্তু সেলের রাজ্য সভাপতি মুকুল চন্দ্র বৈরাগ্য।

মুকুল বাবু বলেন, এদিন জলপাইগুড়ি শহরের শান্তি পাড়া থেকে মিছিল শুরু হয়ে সারা শহর পরিক্রমা করে পোস্ট অফিস মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। আগামী জলপাইগুড়ি পুর নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের সবকটি প্রার্থীকেই বিজয়ী করার আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন যেহেতু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী উন্নয়ন করছেন, তাই জলপাইগুড়িতেও এই ধারা বজায় রাখতে তৃণমূল প্রার্থীদের জয়ী করার প্রয়োজন বলে মনে করেন মুকুলবাবু। উল্লেখ্য, শহরের ব্যস্ততম রাস্তাগুলো দিয়ে এদিনের মিছিল যাওয়ায় সাময়িকভাবে যানজটের সৃষ্টি হয়।
জলপাইগুড়ির বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতাদের ক্ষোভ নিরসনে উদ্যোগ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস

মঞ্চের প্রথম সারিতে জেলা সভানেত্রীর পাশে বিক্ষুব্ধ নেতা, যুব সভাপতি এবং প্রার্থীকে দেখা গেলো পেছনের সারিতে। তবে মন্ত্রী জানিয়ে দিলেন সবাই তৃণমূল পরিবারের সদস্য।
পুরসভা ভোটের মুখে শাসক তৃণমূলে কি নতুন সমীকরণ। মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের উপস্থিতিতে কর্মী সভা মঞ্চের ছবি দেখে এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

জলপাইগুড়ি পুরসভা নির্বাচনের মাঝে আর তিন দিন বাকি। আর তার আগেই বিক্ষুব্ধদের মান ভাঙাতে আসরে যুব কল্যাণ ও বিদ্যুৎ দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী তথা জলপাইগুড়ি জেলার পুরসভা নির্বাচনী পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাস। বুধবার জলপাইগুড়ি সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংকের সভাকক্ষে এবারের পুর নির্বাচনের বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা মলয় বন্দ্যোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে সভামঞ্চে ওঠেন। পাশাপাশি তাকে পাশে বসিয়ে চলে দীর্ঘক্ষন আলাপচারিতা।
তবে কর্মী সভা শুরুর আগের কিছু ঘটনাকে ঘিরে ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিশ্লেষণ। এদিন অরূপ বিশ্বাসের মতো নেতাকে দেখা যায় কদিন আগে দলীয় টিকিট না পেয়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পত্র জমা দিতে যাওয়া সেই মলয় বানার্জ্জীকে প্রায় হাত ধরে তৃণমূলের কর্মী সভায় নিয়ে আসছেন। শুধু তাই নয়, মঞ্চে জেলা সভানেত্রীর পাশের আসনেই বসতে দেখা যায় বিক্ষুব্ধ তৃণমূল হয়ে মনোনয়ন পত্র জমা করার ব্যাপারে হাইকোর্ট পর্যন্ত দৌড়ঝাঁপ করা মলয় বাবুকে।
অপরদিকে দলীয় টিকিট না পাওয়া এবং নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পত্র জমা দিতে না পারার পেছনে যার বিরুদ্ধে সমস্ত কারসাজির অভিযোগ তুলেছিলেন মলয় বাবু, সেই জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি তথা এবারের পুর ভোটে আট নম্বর ওয়ার্ড থেকে প্রার্থী সৈকত চাটার্জ্জিকে কর্মী সভার পেছনের সারিতে বসে থাকতে দেখা গেল। এরপরেই শহর তথা জেলা জুড়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাঞ্চল্য।
যদিও কর্মী সভায় নিজের বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি সৈকত চাটার্জ্জিকে নিজের আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলতে শোনা যায়। তিনি বলেন, এই তৃণমূল দলে সবাই আমার অভিভাবক, সবার আশির্বাদ আমি পেতে চাই এবং সবার কাছ থেকে সঠিক উপদেশ ও দিক নির্দেশ নিয়েই এই নির্বাচনী লড়াইয়ে তৃণমূল কংগ্রেসকে জয়ী করতে চাই।
অপরদিকে যাকে নিয়ে পুরসভা নির্বাচনের মনোনয়ন পর্বে রাজ্য জুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল সেই ১ নং ওয়ার্ডের তৃণমূল নেতা মলয় ব্যানার্জী ওরফে শেখর বাবুকে নিজের বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে বলতে দেখা যায়, আমি তৃণমূল কংগ্রেসের সাথেই আছি। আমাকে মনোনয়ন জমা দিতে না দেওয়া নক্কারজনক ঘটনা বলেও এদিন আখ্যায়িত করেন তিনি। আমার ওয়ার্ডের কেউ আমাকে এখনো ডাকেনি। ডাকলে নিশ্চয়ই যাবো। তিনি আরও বলেন অরূপ বাবু আমার করা হাইকোর্টে কেস উইথড্র করার কথা বলেছেন। কারো ওপর তেমন অভিমান আমার ছিল না বলে জানান মলয় বন্দ্যোপাধ্যায়।
যদিও নিজের রাজনৈতিক দক্ষতা দিয়ে পুরো ব্যাপারটিকে সবার কাছে স্বাভাবিক করে দেন অরূপ বিশ্বাস। অভিজ্ঞ এই তৃণমূল নেতা নিজের বক্তব্যে বলেন, আমাদের মধ্যে বিক্ষুব্ধ কেউ নন। কেউ নির্দল নয়। সবাই তৃণমূল কর্মী। এটা একটা পরিবার। পরিবারের মধ্যে একটু ক্ষোভ দুঃখ থাকতেই পারে। আগামী জলপাইগুড়ি পুর নির্বাচনে ফল হবে ২৫-০। কোভিডের মতো মহামারীর সময় বিরোধীদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাই ভোট পাওয়ার যোগ্য একমাত্র তৃণমূল কংগ্রেসই বলে মনে করেন তিনি।