ভাড়া বৃদ্ধি না করেও কিভাবে আয় বাড়ানো যেত শহরের টোটোচালকদের জানুন প্রতিবেদনে।
টোটো চালকদের দাবি মেনে আজ থেকে জলপাইগুড়ি শহরে টোটোর ভাড়া বৃদ্ধি পেল। টোটোর ন্যূনতম ভাড়া 10 টাকা থেকে একলাফে 15 টাকা করা হল পুরসভার নির্দেশে। টোটোর এই ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে টোটো চালকরা খুশি হলেও এই ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে একেবারেই খুশি নয় শহরের সাধারণ মানুষ যারা টোটোতে চড়েন। যদিও পুরমাতা ভাড়া বৃদ্ধির আগে জানিয়েছিলেন ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে টোটো চালকদের পাশাপাশি শহরের সাধারণ মানুষের কথাও ভেবে দেখা হবে। কিন্তু সত্যিই কি তিনি সাধারণ মানুষের কথা ভেবেছেন। টোটোর এই ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে কি বলছে জলপাইগুড়িবাসী এবার সেটাই তুলে ধরবো। জানিনা এরপরেই পুরসভার ঘুম ভাঙবে কিনা।
টোটোর ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে আমাদের চ্যানেলের খবরের কমেন্ট বক্স উপচে পড়ছে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়ায়। আর সেইসব কমেন্টের মধ্যে 90% মানুষ এই টোটোর ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদ করছেন। জননেতাদের সাথে জনগণের যোগাযোগ কতটা ক্ষীণ সেটাই বোধহয় এই ভাড়া বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে আর একবার স্পষ্ট হল। শহরে টোটোর ভাড়া না বৃদ্ধি করেও টোটোচালকদের আয় বৃদ্ধি করা যেত খুব সহজেই। আর সেসব না করে ভাড়া বৃদ্ধি করে দেওয়া হল। কিভাবে ভাড়া না বাড়িয়ে আয় বাড়ানো যেত আলোচনা করবো, তবে তার আগে আসুন এবার একেএকে দেখে নিই টোটোর ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে জলপাইগুড়িবাসীর কিছু প্রতিক্রিয়া।
অভিসিকতা বসু লিখছেন, কোনো জায়গাতেই 10 টাকার বেশি ভাড়া নেই। জলপাইগুড়ির সাধারণ লোক কে খুব বড়লোক মনে করার কারণ টা কি বুঝলাম না। অনৈতিক ভাবে ভাড়া বাড়ানো হলো। মিটার বসানো উচিৎ ছিলো।
নিমাই রায় বলছেন, সত্যি মিউনিসিপ্যালিটির অনেক দায়িত্ব আছে কারণ বর্তমান পরিস্থিতির উপর না দেখে ভাডা বাড়িয়ে দিয়ে শহরটা কে আরো জ্যাম করে দেওয়ার চেষ্টা করা হলো কারণ ২/৩ কিলোমিটার গেলে ১৫/২০ টাকা আর কি।
সুব্রত সরকার লিখছেন, মোটর ভিকেলস এর দ্বারা নাম্বার প্লেট লাগানো হোক, ইন্সুরেন্স বাধ্যতামূলক করা হোক, ড্রাইভিং লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করা হোক, যাত্রী সংখ্যা নির্ধারণ করা হোক, টোটো স্ট্যান্ড করা হোক, আই কার্ড না দিয়ে হলুদ নাম্বার প্লেট বাধ্যতামূলক করা হোক, বাড়িতে কমার্শিয়াল বৈদ্যুতিক মিটার লাগানো হোক টোটো চার্জ করার জন্য। ১০ টাকা ভাড়াই যথেষ্ট ছিল ছোট যাত্রার জন্য। রাতে হেডলাইট ও ইন্ডিকেটর বাধ্যতামূলক করা হোক সিটি বাস চালানো হোক।
স্বপ্ননীল রুদ্র বলছেন, জানিনা ভাড়া বৃদ্ধির ধাপ কী, বা কীভাবে কত কিলোমিটারে ভাড়া বৃদ্ধি হবে। যদি পুরমাতা কিলোমিটারের হিসেব এই বৃদ্ধির একটি মাপকাঠি হিসেবে বিচার্য বলে স্থির করেছেন, তবে টোটোতে মিটার লাগানোর ব্যবস্থা করা উচিত ভাড়া বৃদ্ধির আগেই। এতে যাত্রী ও চালক, দুই পক্ষেরই মঙ্গল।
মৌমিতা রাহা পালের মন্তব্য, কাল থেকে টোটোতে ওঠার আগেই বলুন লাইসেন্স দেখাও আর মিটার নইলে বর্ধিত ভাড়া দেব না। একজন দুজন নয় ,সবাই বলুন। দরকারে দুটো দিন কষ্ট করুন। আগামী দুই দিন যদি শহরের সব টোটো খালি থাকে তখন বোঝা যাবে।
পাঞ্চালি ঘোষ ভট্টাচার্যের প্রতিবাদ, জলপাইগুড়ি টাউনে এত টোটো চলে যায় ফলে আমারা পথে স্বাধীনভাবে চলতে পারিনা। রাস্তা দিয়ে চলছি হঠাৎ করে সামনে এসে দাড়িয়ে পড়ে, ফলে এক্সিডেন্ট ঘটে যায়। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। অবিলম্বে টোটোর সংখ্যা কমানো দরকার ।এগুলোর বিহিত না করে টোটোর ভাড়া বাড়ানো হল। আশ্চর্য ।
সঞ্জয় ঘোষ বলছেন, আমি মালদা যাই কাজের সূত্রে। এখানে এখনো ৫ টাকাও ভাড়া আছে । নূন্যতম তাহলে কি জলপাইগুড়িতে মানুষের অনেক ইনকাম।
মানিক দাস লিখছেন, একজন যাত্রী নিয়ে ভাড়া নিতে চায় না ডবল ভাড়া দাবি করে। দুই নাম্বার, এখন আবার নতুন সমস্যা শুরু হলো খুচরো পাঁচ টাকা নিয়ে এই ৫ টাকায় টোটোওয়ালার কাছে থাকবে না জানা কথা। ওই কুড়ি টাকাই দিতে হবে। তারপর দুই কিলোমিটার নিয়ে লাগবে ঝামেলায় কোথা থেকে কোথায় ২ কিলোমিটার হবে কে বলে দিবে সাধারণ গরিবের কথা ভাবলে ভালো হতো না, তাদের তো হাজিরা বাড়েনি তাদের হাজিরা বাড়ানো হোক।
বিপুল রায় বলছেন, মালদা সহ দক্ষিণবঙ্গের অনেক বড় বড় শহরে যেখানে এখনো টোটোর নূন্যতম ভাড়া ৫ টাকা, সেখানে জলপাইগুড়ির মতো শহরে টোটোর নূন্যতম ভাড়া ১৫ টাকা করা হলো কোন যুক্তিতে?
দেবর্ষি ভট্টাচার্যের মত, তাহলে টোটোতে উঠলে ৫ টাকা খুচরো রাখতে হবে নতুবা ২০ টাকা দিলে টোটোচালক ৫ টাকা ফেরত দিতে পারবে না ও বচসা হবে।
দেবজিত সরকার জানাচ্ছেন, মানবে না কেউ এই নিয়ে ঝামেলা হবে। সারা রাজ্যে এক ভাড়া আর জলপাইগুড়িতে ১৫ টাকা জলপাইগুড়িবাসী সবার কি রাজার সম্পত্তি আছে নাকি।
অরিন্দম সুর লিখছেন, একটা কথা বুঝতে হবে, টোটোতে কারা উঠে? যার দু চাকা কিংবা চার চাকা গাড়ী নেই অর্থাৎ বেশীর ভাগ মানুষই গরীব অথবা নিম্ন মধ্যবিত্ত অথবা বৃদ্ধ মানুষরা যাঁদের অন্য কোনো বিকল্প যানবাহন নেই জলপাইগুড়ি শহরের ভিতরে যাতায়াত করার জন্য। এই বৃদ্ধি গরিব এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের ওপর একটা বোঝা কারণ এই শ্রেণির মানুষদের অবস্থা, এমনেই মূল্য বৃদ্ধির জন্য কাহিল। তার ওপর টোটোতে মিটার না থাকার জন্য নিত্য দিনের ঝামেলা লেগেই থাকবে। সাধারণ মানুষের কথা ভেবে নুন্যতম ভাড়া 10 /- ঠিক ছিলো।
অরুণ জ্যোতি বিশ্বাস লিখছেন, প্রথম দুই কিলোমিটার ১০ টাকা তারপরে প্রতি কিলোমিটার দু টাকা করে করা উচিত ছিল.. আর ১৫ টাকা করে যে করা হলো তাতে কোন যাত্রী যদি ২০ টাকা দেয় এক কিলোমিটার যাবার পর তাহলে ৫ টাকা কি টোটো ওয়ালা ফেরত দিতে পারবে ???
রুদ্র বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, ভোটের রাজনীতি বন্ধ করলে ভালো হয়। 1) সব টোটো তে মিটার লাগতে হবে। 2) নিম্ন মধ্যবিত্ত যাদের কোনো গাড়ি নেই ও যাদের প্রতিদিন রোজগার করতে হয় তাদের কি হবে ?? এর নাম কি উন্নয়ন?? 3) টোটো জন্য কি আলাদা রাস্তা থাকবে ? 4) কেউ যদি নেশা করে টোটো চালায় বিশেষ করে রাত আটটার পরে তখন কি ভাবে আটকাবে যাত্রীরা যদি কেউ নেশা করে টোটো চালায় ? 5) এলাকা বেঁধে আর শহরের থেকে অনেক বাইরের টোটো আসা বন্ধ করা হবে তো ?
শহরে এতো টোটো এর উপরে যদি বাইরের টোটো আসে তা হলে তো রাস্তাতে যানজট হবে তার জন্য কি ব্যবস্থা ?? 6) ভোটের জন্য কিছু নিম্ন মধ্যবিত্ত দের বলির পাঁঠা করে লাভ হবে তো ?
দিলীপ প্রসাদ চোধুরী বলছেন, প্রথমে টোটোর রুট করা উচিৎ এই রুট ভাগ করে স্টপেজ অনুযায়ী ভাড়া রাখা উচিত যেমন : আসাম মোড় – পান্ডা পাড়া কালী বাড়ী বা ঐ এলাকা। আসাম মোড় – নয়া বস্তি টিকিয়া পাড়া। 73 মোড় থেকে – নয়া বস্তি টিকিয়াপাড়া। 73 মোড় থেকে – রায়কত পাড়া। এই ভাবে একেকটা টোটো একেক রাস্তা দিয়ে রুট করলে ষ্টপেজ অনুযায়ী ভাড়া কম করা সম্ভব এবং রাস্তা জ্যাম কম করা সম্ভব ৷
অনিল রায় জানাচ্ছেন, সংখ্যা কম করুক। ভাড়া এমনিই পুষিয়ে যাবে।
সমাজসেবী নবেন্দু মৌলিক লিখছেন, টোটোর ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অত্যন্ত জঘন্য পদক্ষেপ। রাজ্যের কোনো শহরেই নূন্যতম ভাড়া ১০ এর বেশি নয়। এমনকি মালদার ইংলিশবাজারে নূন্যতম ভাড়া ৫ টাকাও আছে৷
সুশীল রাজবংশী লিখছেন, আমাদের পাশের শহর শিলিগুড়ি সেখানে ১০ টাকা ভাড়া চলছে ( সেবক মোর থেকে সেবক অটো অর্থাৎ মারুতি শোরুম ) পর্যন্ত তাহলে জলপাইগুড়ি শহরে ভাড়া বৃদ্ধির কারণ !!!!!?
আশুতোষ রায় বলছেন, Right, পৌরসভা সাধারন মানুষের মতামতকে গুরুত্ব দেয়নি বা বলা যেতে পারে সাধারন মানুষের মতামত জানার চেস্টা করেননি। পৌরসভার এই সিদ্ধান্তকে আমি কোনোভাবেই মানতে পারছি না ( যদিও তাদের কিছু যায় আসে না)।
এবার বলি, টোটো ভাড়া বৃদ্ধি না করেও কিভাবে টোটো চালকদের আয় বৃদ্ধি করা যেত। জলপাইগুড়ি শহরে দৈনিক 12 থেকে 15 হাজার টোটো চলাচল করে। শুধু শহর নয়, শহর সংলগ্ন নানান গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে টোটো চালকরা এই শহরে আসেন টোটো চালাতে। ফলে টোটোর ভিড়ে এই শহর একদিকে যেমন অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে, অন্যদিকে বিপুল সংখ্যক টোটোর জন্য টোটো চালকরা পর্যাপ্ত যাত্রী পাচ্ছেন না। শহরের পথে স্বাভাবিকভাবে চলার জন্য শহরবাসীর দাবী ছিল টোটোর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা হোক। তাতে শহর যানজটমুক্ত হবে। পুরসভা এ নিয়ে উদ্যোগ নেয়। তারা জানায় যে শহরে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার টোটোকে চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে, টোটো নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এবার শহরে যদি টোটো নিয়ন্ত্রণ করা হত। 15 হাজারের পরিবর্তে দৈনিক 5 হাজার টোটো চলাচল করতো, তাহলে টোটো চালকদের যাত্রী পেতে অসুবিধা হত না। তাদের আয় দ্বিগুন হয়ে যেত। আর তার জন্য ভাড়া বৃদ্ধির কোন প্রয়োজন পড়তো না।
একজন পুর নাগরিক হিসাবে আমার ব্যক্তিগত মত, টোটোর ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে পুরসভার পুনর্বিবেচনা করা উচিত। কারন শহরবাসীরা চাইছেন টোটোর ন্যূনতম ভাড়া 10 টাকাই থাকুক। আমার মতে, টোটোর ভাড়া প্রথম 1 কিমি 10 টাকা করা হোক। তারপর প্রতি কিমি 5 টাকা করে বাড়ুক। সেইসাথে কিমি মাপার জন্য শহরের টোটোতে ভাড়া মিটার বা ট্যাক্সি মিটার লাগানো বাধ্যতামূলক করা হোক।
সেইসাথে শহরে টোটোর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা হোক। বর্তমানে শহরে 12 থেকে 15 হাজার টোটো চলছে, কিংবা তারও বেশি। এই সংখ্যা যদি পুরসভার কথামতো 5 থেকে সাড়ে 5 হাজার করা যায়। তাহলে শহরের টোটো চালকদের যাত্রী সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পাবে, ফলে ন্যূনতম 10 টাকা ভাড়া হলেও তাদের দৈনিক যায় বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।
পাশাপাশি শহরের সমস্ত টোটোকে “No Refusal toto” করা হোক। কারণ বহু টোটো চালক অনেক জায়গায় ভাড়া যেতে চান না। এই পাড়ায় যাবো না, ওই গলিতে ঢুকবো না, মোড়ের মাথায় নামতে হবে, 2/3জন নাহলে যাবো না – এমন অনেক বায়নাক্কা তাদের আছে। আর পুরসভায় একটা বিভাগ খোলা হোক যেখানে টোটো চালকদের অসহযোগিতার জন্য যাত্রীরা অভিযোগ জানাতে পারে এবং পুরসভা সেই টোটোচালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। সেই বিভাগে টোটো চালকরাও তাদের অভিযোগ জানাতে পারবেন যদি কোন যাত্রী তাদের সাথে অভদ্রতা করে।
পিনাকী রঞ্জন পাল
সম্পাদক জলপাইগুড়ি নিউজ