কলকাতা : রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে পুলিশের বাধা, লাঠিচার্জ, হেনস্তা—তাতে দমে যাননি তাঁরা। বরং আন্দোলনের ঝাঁজ আরও বাড়িয়ে আগামী বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার পরপর দুইদিন রাজপথ দখলের ডাক দিলেন চাকরিহারারা। ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’-এর ব্যানারে কলকাতার শিয়ালদহ থেকে রানি রাসমণি রোড পর্যন্ত মহামিছিল, আর তার ঠিক পরদিন করুণাময়ী থেকে এসএসসি ভবন ঘেরাও কর্মসূচির মাধ্যমে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাতে চলেছেন শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা।
বুধবার শহিদ মিনারে এক সাংবাদিক বৈঠকে কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেন আন্দোলনকারীরা। তাঁদের অভিযোগ, “যোগ্যরা বঞ্চিত, অযোগ্যরা সুযোগপ্রাপ্ত—এটাই বাস্তব। আর সেই সত্য ঢাকতে চায় সরকার। মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে কোনও উদ্যোগ নেই। বরং লাঠিচার্জ করে আন্দোলন দমনের চেষ্টা চলছে।”
চাকরিহারাদের সাফ বার্তা—এই আন্দোলন সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক। কোনও রাজনৈতিক নেতা বা দলের উপস্থিতি তাঁরা চান না। বরং সমাজের বিশিষ্টজনদের মিছিলে সামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা। মেহবুব মণ্ডলের কথায়, “এই লড়াই আমাদের ন্যায্য অধিকারের। কাজ চেয়ে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমরা পথে নেমেছি। বৃহস্পতি ও শুক্রবার—এই দুই কর্মসূচি আমাদের বাঁচা-মরার লড়াইয়ের অংশ।”
চলতি সপ্তাহের শুরুতে জেলার ডিআই অফিস ঘেরাও কর্মসূচিতে পুলিশের লাঠির ঘায়ে আহত হয়েছেন বহু শিক্ষক-শিক্ষিকা। জলপাইগুড়ি, বর্ধমান, কসবা থেকে উঠে এসেছে একের পর এক প্রতিবাদের ছবি। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই বৃহস্পতির মহামিছিল, শুক্রের ভবন অভিযান—এই দুই কর্মসূচি নিছক প্রতীকী নয়, বরং সরকারের প্রতি এক কড়া হুঁশিয়ারি বলে জানাচ্ছেন আন্দোলনকারীরা।
তাঁদের আরও দাবি—অবিলম্বে যোগ্য ও অযোগ্যদের পৃথক তালিকা প্রকাশ করুক এসএসসি। নইলে আন্দোলন আরও তীব্র হবে। “আমরা চাই না, আবার কোনও শিক্ষার্থী আমাদের মতো ভবিষ্যৎ হারাক।”—বলেছেন এক চাকরিহারা শিক্ষক।
তবে এখনও পর্যন্ত এই দুই কর্মসূচির জন্য প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি মেলেনি। তবে তা নিয়ে চিন্তিত নন আন্দোলনকারীরা। তাঁদের মতে, “ভোটের মুখে সরকার আমাদের দাবিগুলিকে অবহেলা করলে, তার মাশুল দিতে হবে রাজপথেই, ব্যালটেও।”
এই মুহূর্তে রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় জনআন্দোলনের রূপ নিচ্ছে এই চাকরিহারাদের লড়াই। বৃহস্পতি ও শুক্রবার—চোখ থাকবে কলকাতার রাজপথেই।