চা বলয়ের রাজনীতিতে সম্ভাব্য পরিবর্তন : জন বারলার তৃণমূলে যোগদানের ইঙ্গিত

ডিজিটাল ডেস্ক : ডুয়ার্সের চা বলয়ের রাজনীতিতে বড়সড় পরিবর্তনের আভাস মিলছে। চা শ্রমিকদের মধ্যে জনপ্রিয় নেতা, প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ জন বারলার তৃণমূলে যোগদানের সম্ভাবনা ঘিরে উত্তেজনা চরমে। আলিপুরদুয়ারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারি অনুষ্ঠানে জন বারলার উপস্থিতির ঘোষণার পর থেকেই এই জল্পনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, বারলার তৃণমূলে যোগদান শুধু সময়ের অপেক্ষা।

বারলার রাজনৈতিক উত্থান ও বিজেপির প্রতি ক্ষোভ : ২০১৯ সালে আলিপুরদুয়ার লোকসভা আসনে বিজেপির টিকিটে জয়ী হন জন বারলা। চা বলয়ের আদিবাসী ও শ্রমিকদের মধ্যে তাঁর উল্লেখযোগ্য প্রভাব। বিজেপি সরকারের আমলে তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীত্বও পান। তবে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তাঁকে টিকিট না দেওয়া হয়, যা তাঁর সঙ্গে বিজেপির দূরত্ব বাড়ায়। সেই সময় থেকেই বারলা বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন।

বারলার বক্তব্য, বিজেপি চা বলয়ের আদিবাসী ও শ্রমিকদের সঙ্গে ছলনা করেছে। তাঁদের দাবি উপেক্ষা করেছে এবং তাঁকে সাংগঠনিকভাবে কোণঠাসা করার চেষ্টা করেছে। মাদারিহাট বিধানসভার উপনির্বাচনে ও ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বারলা প্রকাশ্যে বিজেপির হয়ে প্রচার করেননি। উলটে তাঁর অনুগামীদের তৃণমূলকে সমর্থন করার ইঙ্গিত দেন।

মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে জন বারলার সাক্ষাতে বদলে যেতে পারে সমীকরণ : ২৩ জানুয়ারি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারি অনুষ্ঠানে জন বারলার উপস্থিতি নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। জন বারলা জানিয়েছেন, তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে চা শ্রমিকদের পিএফ, গ্র্যাচুইটি ও জমির পাট্টা ইস্যুতে কথা বলতে চান। যদিও বারলা সরাসরি তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কথা বলেননি, তবে তাঁর মন্তব্য, “দেখুন কী হয়!” জল্পনা আরও বাড়িয়েছে।

তৃণমূলের কৌশল ও চা বলয়ের রাজনীতিতে প্রভাব : তৃণমূল কংগ্রেস বারলার জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে চা বলয়ে তাদের শক্তি বৃদ্ধি করতে চাইছে। চা বলয়ে তৃণমূলের উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে দুর্বল হলেও, বারলার মতো নেতা দলে যোগ দিলে এই অঞ্চলে দলটির প্রভাব উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও আদিবাসীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং তাঁদের উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বারলার যোগদান তৃণমূলের এই ভাবমূর্তিকে আরও শক্তিশালী করবে।

বিজেপির চ্যালেঞ্জ ও প্রতিক্রিয়া : বারলার দলত্যাগ বিজেপির জন্য বড় ধাক্কা হতে পারে। বিশেষত, ডুয়ার্সের মতো এলাকা যেখানে আদিবাসী ও চা শ্রমিকদের ভোট গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে বারলার অনুগামীদের সমর্থন হারানো বিজেপির ভোটব্যাংকে প্রভাব ফেলতে পারে। আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ মনোজ টিগ্গা অবশ্য দাবি করেছেন, বারলার পদক্ষেপ দলের ক্ষতি করবে না। তবে বারলার জনপ্রিয়তা ও প্রভাব বিজেপিকে অস্বস্তিতে ফেলতে পারে।

জন বারলার বক্তব্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা : বারলার সাম্প্রতিক মন্তব্যগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে, তিনি নতুন রাজনৈতিক পথ খুঁজছেন। বিজেপি তাঁকে ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন তিনি। তাঁর মতে, রাজ্যের উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলো চা বলয়ের মানুষের জন্য বেশি কার্যকর। তৃণমূলে যোগ দিয়ে তিনি এই প্রকল্পগুলোর অংশ হতে চান।

ডুয়ার্সের চা বলয়ে জন বারলার তৃণমূলে যোগদান রাজনীতির সমীকরণ বদলে দিতে পারে। তাঁর জনপ্রিয়তা ও প্রভাব কাজে লাগিয়ে তৃণমূল এই অঞ্চলে শক্তিশালী হতে চাইছে। বিজেপি যদি আদিবাসী ও চা শ্রমিকদের দাবিগুলো গুরুত্ব না দেয়, তবে চা বলয়ের ভোটব্যাংক হাতছাড়া হতে পারে। জন বারলার ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ শুধু ডুয়ার্সের নয়, রাজ্য রাজনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। এখন দেখার বিষয়, তিনি তৃণমূলে যোগ দিয়ে এই অঞ্চলে কীভাবে নিজের অবস্থানকে নতুনভাবে গড়ে তোলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *