সংবাদদাতা, জলপাইগুড়ি, ৬ ডিসেম্বর’২৩ : নিজের আসন ছেড়ে সাধারণ ও দরিদ্র মামলাকারীদের সমস্যা শুনতে কাছে চলে এলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এই ঘটনার সাক্ষী থাকল মঙ্গলবার কোলকাতা হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চের এজলাস। উল্লেখ্য, ২০১৯ সাল থেকে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের নকশালবাড়ি ব্লকের হাতিঘিষা গ্রাম পঞ্চায়েতের সেবদুল্লা গ্রামে জলকষ্ট চলছিল বলে অভিযোগ। বহু আবেদন নিবেদনের পরেও সমস্যার সমাধান না হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে আদালতের দারস্থ হন জলকষ্টে থাকা কিছু পরিবারগুলি বলে দাবি। এদের মধ্যে অধিকাংশ রয়েছেন আদিবাসী চা শ্রমিক পরিবারের সদস্য। সোমবার মামলাটি উঠেছিল কোলকাতা হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে। বিষয়টি শুনবার পর সমস্যার গোড়া খুঁজতে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে তার এজলাসে ডেকে পাঠান অভিযোগকারীদের বলে সূত্রের খবর। এদিন শুনানির শুরুতেই গ্রামবাসীদের বক্তব্য ভালো করে শুনতে পারছিলেন না বিচারপতি। শুনতে না পেয়ে নিজের আসন ছেড়ে নিচে নেমে আসেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এরপর গ্রামবাসীদের সামনে এসে প্রায় এক ঘন্টার বেশি সময় ধরে এজলাসের আধিকারিকদের চেয়ারে বসে মামলা শোনেন তিনি। সব শুনবার পর আজ বুধবার শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের AEO, PHE দপ্তরের ইঞ্জিনিয়ার,ওই প্রকল্প রক্ষনাবেক্ষনের ঠিকাদার সহ আরও কয়েকজনকে দুপুর দুটায় তার এজলাসে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন বিচারপতি।

এই মামলার আবেদনকারীদের আইনজীবী সন্দীপ মন্ডল বলেন নকশালবাড়ির সেবদুল্লা গ্রাম দীর্ঘদিন ধরে জলকষ্টতে জর্জরিত। সমস্যা সমাধানে তারা আদালতের দারস্থ হন। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে লক্ষ্য করা যায় এই মামলার যখনই শুনানির দিন আসে তখনই কল দিয়ে জল পড়তে শুরু করে। যেই শুনানি হয়ে যায় আবার জল বন্ধ হয়ে যায়। সমস্যা বুঝতে বিচারপতি মঙ্গলবার মামলাকারীদের তার এজলাসে ডেকে পাঠান। কিন্তু শুনানি শুরু হবার পর বিচারপতি তাদের কথা ভালো করে শুনতে পাচ্ছিলেন না। এরপর বিচারপতি নিজেই নিচে নেমে এসে মামলা শোনেন। একজন বিচারপতি বিচার প্রার্থীদের কাছে এসে মামলা শুনছেন। ঘটনায় আপ্লুত হন মামলাকারীরা।
দিপু হালদার নামে এক বিচার প্রার্থী বলেন আমাদের গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে জলকষ্ট। এরপর আমরা PHE দপ্তরে আবেদন করলে আমাদের গ্রামে কল লাগিয়ে দেওয়া হয়। জল সমস্যা মিটে যায়। এরপর উদ্যোগ নেওয়া হয় বাড়ি বাড়ি কানেকশন দিয়ে জল পৌঁছে দেওয়ার। আমার বাড়িতেও সংযোগ দেওয়া হয়। এরপর আমার বাড়ির কল দিয়ে জল পড়ছে দেখিয়ে দিয়ে আমার থেকে আঁধার কার্ডের জেরক্স নিয়ে নেওয়া হয়। তার পর থেকে আর জল পাচ্ছিলাম না। বিষয়টি বিভিন্ন মহলে দরবার করে সুরাহা না হওয়ায় আমরা আদালতের দারস্থ হই।
সরকার পক্ষের আইনজীবী হীরক বর্মন বলেন অভিযোগ সঠিক নয়। কারন এই প্রকল্পের কাজ এখনও চলছে। মাঝেমধ্যে হাতির হানা কিংবা ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য পাইপ ফেটে জল সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বিচারপতি আজ মামলাকারীদের ডেকেছিলেন। অভিযোগকারীদের মধ্যে ৫ জন জানিয়ে গেছেন তারা জল পাচ্ছেন। আজ অন্যান্যদেরও ডেকেছিলেন। সবকিছু শুনবার পর আগামীকাল অর্থাৎ আজকে (বুধবার) ওই প্রকল্প রক্ষনাবেক্ষনের ঠিকাদার, শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের AEO, PHE দপ্তরের ইঞ্জিনিয়ার সহ অন্যান্যদের ফের আদালতে হাজির হবার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।