কলা মন্দির ও জলপাইগুড়ি

লেখক পঙ্কজ সেন

জলপাইগুড়ি শহরের ডিবিসি রোডের উপর ঐতিহ্যবাহী নিরালা হোটেলের উল্টোদিকে এবং নূর মঞ্জিল ও কমার্স কলেজের থেকে প্রায় ঢিল ছোড়া দূরত্বে অবস্থিত শহরের এক অন্যতম পরিচিত দোকান “কলা মন্দির”। বিদ্যালয়ের নতুন শ্রেণীতে ওঠার সাথে সাথে আমার মত অনেকেই কালুদা এবং বাপিদার দোকানের দারস্থ হতাম বিভিন্ন প্রকৃতির খাতা থেকে শুরু করে ব্রাউন পেপারের মলাট, হরেক রকমের নেমপ্লেট, আঠা এবং আরোও কত কি কেনার জন্য। এই বিবিধ সরঞ্জাম আনা-নেওয়ার সূত্রে দোকানের মালিক এই দুই ভাইয়ের সঙ্গে জলপাইগুড়ি শহরবাসীর একটা অদ্ভুত আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। আন্তরিকতা কাকে বলে সেটা এই দোকানে আসলে খুব ভালো বোঝা যায়।

খাতা, কলম, পেন্সিল, রং পেন্সিল, রং তুলি, ডায়রি, জ্যামিতি বাক্স, কাঁচি অর্থাৎ বিদ্যালয়, কলেজ এবং অফিসের সকল রকম প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের এক অতি নির্ভরযোগ্য বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান হল “কলা মন্দির”। আমি অবশ্য ছোট থেকেই এই দোকানের সঙ্গে পরিচিত। শিশু নিকেতন এবং জিলাস্কুলে পড়ার সূত্রে বিদ্যালয়ের নানান প্রয়োজনীয় সামগ্রি কেনার প্রয়োজনে বাবা অথবা দাদার সাথে এই দোকানে হাজির হতাম। কিন্তু দোকানে উপস্থিত এই দুই ভাই অর্থাৎ কালুদা এবং বাপিদাকে আমি ছোটবেলায় ঠিক যেমনটি দেখে এসেছি, আজও একই রকম রয়ে গেছে। জলপাইগুড়ি শহরের প্রায় প্রতিটি মানুষই এই দোকানের সঙ্গে কম বেশি পরিচিত।

বর্তমানে অবশ্য জলপাইগুড়ি শহরে এই প্রকৃতির দোকান অনেকগুলো গড়ে উঠলেও কলা মন্দিরের বাজার ও গুরুত্ব কিন্তু এতটুকু কমেনি। কারণ দীর্ঘদিনের পুরনো এই দোকানের একটি নিজস্ব খ্যাতি ও পরিচিতি আছে। তাই বছরের প্রায় সকল সময়েই এই দোকানে ক্রেতাদের ভিড় ও আনাগোনা লেগেই থাকে। শুধুমাত্র বিদ্যালয়-কলেজ বা অফিসের জিনিসই নয়, শহরের বিভিন্ন ক্লাব আয়োজিত ও পরিচালিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানের টিকিট কোন কোন সময় এখানেও পাওয়া যায়। এখানেই বোঝা যায় জলপাইগুড়ি শহরে কলা মন্দিরের গুরুত্ব কতখানি।

আসাম থেকে আগত এই পরিবারটি ১৯৮৪ সালের জুলাই মাসে একটি দোকান ঘর ভাড়া নিয়ে তার পথ চলা শুরু করে। প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে রাত্রি প্রায় নয়টা পর্যন্ত ক্রেতাদের আগমনে জমজমাট থাকে দোকান চত্বরটি। ২০২৪ সালে দোকানটি ৪০ বছরে পা দেবে। কামনা করি কলা মন্দির অতীতের মতো বর্তমানেও তার সেই জনপ্রিয়তা বজায় রাখুক এবং তার সাফল্যের ধারাবাহিকতা অটুট থাকুক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *