রাহুল মন্ডল, মালদা, ১ সেপ্টেম্বর’২৩ : প্রায় ৭ লক্ষ টাকা গায়েব মালদার কালিয়াচক এক নম্বর ব্লক প্রশাসন তহবিল থেকে। আর সেই গায়েব টাকা তুলতে ৩২৯ দুঃস্থ মহিলাকে চিঠি দিলেন কালিয়াচকের বিডিও। এমন ঘটনায় শোরগোল পড়ে গেছে মালদা প্রশাসনিক মহলে। শুরু হয়েছে ঘটনাকে ঘিরে রাজনৈতিক চাপানতোর।

বিরোধীরা প্রশ্ন করেছেন ভাতা দিয়ে আবার ভাতা ফেরত এ কেমন ঘটনা। আসলে এখানেও নতুন কৌশল করে দুঃস্থ মহিলাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করার চেষ্টা করছে কালিয়াচক এক ব্লক প্রশাসন। বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা শাসক নীতিন সিংহানিয়া। যদিও কালিয়াচক এক ব্লকের বিডিও সেলিম হাবিব সরকার এই বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমের ক্যামেরার সামনে কিছু বলতে চাননি। কালিয়াচক এক নম্বর ব্লক প্রশাসন ও সমাজ কল্যাণ বিভাগের সূত্রে জানা গেছে লকডাউনের সময় গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি থেকে ঢালাও নাম পাঠানো হয়েছিল। সে সময় নথিপত্র বয়স সহ কোন তথ্য যাচাই করা হয়নি একজন উপভোক্তা বিধবা ভাতা , বার্ধক্য ভাতা, মানবিক ভাতা দেওয়া হয়েছে। যেখানে সরকারি নিয়ম রয়েছে যে কোনো একজন উপভোক্তা যেকোনো একটি ভাতা পাবেন সেক্ষেত্রে এখানে যে মহিলা বিধবা ভাতা পাচ্ছেন আবার সেই মহিলাই বার্ধক্য ভাতা পেয়েছেন।

সে ক্ষেত্রে দুটি ভাতার ক্ষেত্রে তাদের মাসে ২ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। যেখানে এক হাজার টাকা দেওয়ার কথা । এক হাজার টাকা বেশি সেই সমস্ত উপভোক্তা পেয়েছেন। সব মিলিয়ে প্রায় ৭ লক্ষ টাকা গায়েব কালিয়াচক এক নম্বর ব্লক তহবিল থেকে। বিডিওর নোটিশ ইতিমধ্যেই উপভোক্তা পেয়েছেন। সেই নোটিশে উল্লেখ আছে বাড়তি ১৯ হাজার টাকা সাত দিনের মধ্যে বিডিও অফিসে ফেরত দিতে হবে। আর বিডিওর নোটিশ হাতে পেয়ে সমস্যায় পড়েছেন উপভোক্তারা। কালিয়াচক এক নম্বর ব্লকের মজমপুর, যদুপুর, শ্রীরামপুর, আলিপুর, সুজাপুর, জালুয়া বাধাল, জালালপুর সহ আরো বেশ কিছু গ্রামের প্রায় ৩২৯ জন উপভোক্তাদের বাড়িতে নোটিশ পাঠিয়ে টাকা ফেরত চেয়েছেন বিডিও।

উপভোক্তা বয়স্ক মহিলারা জানিয়েছেন এত টাকা কোথায় পাবেন যে তারা ফেরত দেবেন সরকারকে। তাদেরকে যখন টাকা দিয়েছিল তখন তো তাদেরকে কিছু বলেননি। বরং ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ বলেছিল যে বাড়তি টাকা সরকার যখন দিচ্ছে তাহলে নিতে ক্ষতি কি। কিন্তু আজকে এতগুলো টাকা ফেরত তারা কিভাবে দিবে এই নিয়ে মাথায় হাত পড়েছেন তাদের। পাশাপাশি তারা জানাচ্ছেন সরকার রীতিমত তাদেরকে ঠকিয়েছে। নোটিশে বলা হয়েছে যারা টাকা ফেরত দেবেন না তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

দক্ষিণ মালদা বিজেপির সম্পাদক নন্দন কুমার ঘোষ বলেন, এই গাফিলতি বিডিও এবং তার কর্মীদের। নথিপত্র যাচাই না করে কি করে টাকা দেওয়া হলো। আবার সেই টাকা আজকে দুঃস্থ মহিলাদের কাছ থেকে চাওয়া হচ্ছে। এর পিছনে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র রয়েছে। দেখতে হবে যে সকল মহিলাদের নোটিশ দেওয়া হলো তারা হয়তো পঞ্চায়েত নির্বাচনে শাসক দলের বিরুদ্ধে লোক। সমস্যার মধ্যে ভূত রয়েছে যারা ভুল করেছে সে সমস্ত সরকারি কর্মচারীদের শাস্তি পেতে হবে।ভারতীয় জনতা পার্টি এই মহিলাদের পাশে থেকে আন্দোলন করবে দরকার হলে রাস্তায় নামবে।

এই বিষয়ে মালদা জেলা পরিষদের সভাধিপতি লিপিকা বর্মন ঘোষ জানান, এই খবরটা আমি পেয়েছি সরকারি নিয়ম অনুযায়ী একজন মহিলা যিনি বিধবা রয়েছেন তিনি শুধু বিধবা ভাতাই পাবেন অন্য ভাতা পাবেন না। সে ক্ষেত্রে এখানে একজন মহিলা দুটো তিনটি করে ভাতা পেয়েছেন সেটা সঠিক নয়। সে ক্ষেত্রে কিভাবে বিষয়টিকে দেখা যায় সেই বিষয়ে ইতিমধ্যেই ব্লক প্রশাসন বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। বিরোধীদের কাজই হচ্ছে বিরোধিতা করা। নিয়ম যা রয়েছে সে বিষয়ে ব্লক প্রশাসন দেখবে।