নিজস্ব সংবাদদাতা, জলপাইগুড়ি, ২১ এপ্রিল ২০২২ : না ফেরার দেশের উদ্দেশ্যে অন্তিমযাত্রায় উত্তরবঙ্গের অন্যতম চা শিল্পপতি, স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ এবং সর্বোপরি নিপাট সৎ ব্যাক্তিত্ব, কৃষ্ণ কুমার কল্যাণী অর্থাৎ সবার প্রিয় কিষান দা।

১৯৫১ থেকে ২০২২, সাত দশক, তিস্তা নদীর বুক দিয়ে যেমন বয়ে গিয়েছে বিরামহীন জলের স্রোত, ঠিক তেমনভাবেই মৃত্যুর আগমুহূর্তেও সদা জলপাইগুড়ির উন্নয়নের জন্য যে মানুষটি কখনো রাজনৈতিকভাবে আবার কখনো শিল্পপতি হিসেবে অবিরাম লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন তিনিই সেই সবার প্রিয় কিষান দা। আজ অনেকের মুখেই একটি কথা ঘুরে ফিরে আসছে, দুর্দিনে সময়ের সাথে তাল দিয়ে এই ঐতিহ্যবাহী জলপাইগুড়ি শহর থেকে কত চা শিল্পপতি নিজেদের অফিস কলকাতা নিয়ে গিয়েছেন শুধু তাই নয়, পৈতৃক ভিটেমাটি পর্যন্ত বিক্রি করে দিয়ে বিদায় জানিয়েছেন জলপাইগুড়িকে। ব্যতিক্রম কিষান দা, কৃষ্ণ কুমার কল্যাণী। তিনি সেই ১৯৬৮ সালের ভয়ানক বন্যাই হোক বা পরবর্তীতে চা শিল্পে মন্দাই হোক কখনোই নিজেকে দূরে সরিয়ে নেন নি তিনি। লড়াই আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে জলপাইগুড়িতে এনেছেন চা নিলাম কেন্দ্র। নিজের কল্যাণী গ্রুপের হেড অফিস এই শহরের বুকেই রেখে কর্ম জুগিয়েছেন বহু মানুষের।

অন্তিম যাত্রার মাঝেই ছাত্র জীবনের সঙ্গী প্রিয় ফনিন্দ্র দেব বিদ্যালয় প্রাঙ্গন ঘুরে গেলেন প্রাক্তন ছাত্র কৃষ্ণ কুমার কল্যাণী। জলপাইগুড়ি জেলায় চা নিলাম কেন্দ্র গড়ে তুলতে কত মিটিং, আলোচনা করেছেন সেই আইটিপিএ সভাঘরের মাটিও ছুঁয়ে গেল শেষ যাত্রায় শায়িত কিষান কল্যাণীর মরদেহ।

রাজনৈতিক কাজের জন্য সদাই নিজের চা বাগানের কার্যালয় গুরজংঝোরা বিল্ডিংয়ের ঘর ছিল দলীয় কার্যালয় এবং অবাধ প্রবেশ সবার। ফুলে ঢাকা কিষান দার পার্থিব শরীরে শেষ শ্রদ্ধা জানালো সেই গুরজংঝোরা বিল্ডিংয়ের আশপাশের অগণিত মানুষ। এভাবেই ক্রমশ এগিয়ে যেতে দেখা গেলো জলপাইগুড়ির আরেক সুসন্তান কৃষ্ণ কুমার কল্যাণীর অন্তিম যাত্রা। শহরের গোসালা মোড়ে অবস্থিত মারওয়ারী সম্প্রদায়ের স্বশান ঘাটের উদ্দেশ্যে।

এরই মধ্যে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে শিলিগুড়ি থেকে ছুটে এসেছেন বন্ধু তথা একদা রাজনৈতিক সহকর্মী শঙ্কর মালাকার। খবর পেয়ে দিনবাজার কল্যাণী হাউসে এসেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন জেলা সভাপতি তথা বর্তমান এসজেডিএর চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তী। এছাড়াও কে আসেনি এই সর্বোপরি নিপাট ভদ্রলোকটির শেষ বিদায়বেলায়। বিজেপি থেকে কংগ্রেস, বামপন্থী থেকে ডানপন্থী, আজ জলপাইগুড়ি হারলো এক অভিভাবককে যার মধ্যে সদা প্রকাশ পেত জলপাইগুড়ির ঐতিহ্য, সংস্কৃতি থেকে শিষ্টাচার।

দুপুর গড়িয়ে স্বশান ঘাটের পাস দিয়ে বয়ে চলা করলার বুকে নেমে আসছে বিকেলের আলো। আকাশে উড়ে যাচ্ছে সাদা ধোঁয়া। অন্তোষ্টি ক্রিয়ার মন্ত্র উচ্চারিত হচ্ছে চারিদিক ঘিরে থাকা আত্মীয় পরিজন সহ জলপাইগুড়িবাসীর মুখে। এভাবেই বৃহস্পতিবার পঞ্চভূতে বিলীন হয়েও সবার মনে চিরস্থায়ী হয়ে রয়ে গেলেন কৃষ্ণ কুমার কল্যাণী সবার প্রিয় কিষান দা।