নিজস্ব সংবাদদাতা, জলপাইগুড়ি, ২০ এপ্রিল ২০২২ : প্রয়াত রাজ্য তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক তথা বিশিষ্ট চা শিল্পপতি কৃষ্ণ কুমার কল্যাণী। শোকের ছায়া জলপাইগুড়িতে।

উত্তরবঙ্গের বিশিষ্ট চা শিল্পপতি, একদা রাজ্য কংগ্রেস কমিটির কোষাধ্যক্ষ, পরবর্তীতে তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি, বর্তমানে রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণ কুমার কল্যাণী বুধবার গভীর রাতে জলপাইগুড়ির একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।

এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই জলপাইগুড়ি শহরের দিনবাজার স্থিত কল্যাণী হাউস এর সামনে ভিড় জমাতে শুরু করেন জেলা তৃণমূলের নেতৃত্ব সহ অনেকেই।
প্রয়াত তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন জেলা সভাপতি কৃষ্ণ কুমার কল্যাণীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আসতে শুরু করেছেন দলের উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার নেতা কর্মী থেকে সাধারণ মানুষ। ইতিমধ্যে প্রয়াত কৃষ্ণ কুমার কল্যাণীর পার্থিব শরীর ওনার নিজস্ব বাসভবনে শায়িত রাখা হয়েছে। মর্মান্তিক এই খবর পেয়েই সকালে ছুটে এসেছেন রাজগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক খগেশ্বর রায় সহ জেলার অন্যান্য নেতৃত্বরা।

উল্লেখ্য, গতকাল প্রয়াত এই নেতা শ্বাস কষ্টজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হন, দ্রুত শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ওনার সিটি স্ক্যান করানো হয়। সূত্রের খবর ইতিপূর্বে এই শিল্পপতি তথা রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং তার ফলেই সম্ভবত গোপনে ওনার ফুসফুসের ব্যাপক ক্ষতি করেছিল করোনা ভাইরাস বলে জানিয়েছেন তৃণমূল নেতা সৈকত চ্যাটার্জী। অবস্থার অবনতি হওয়ায় ওনাকে দ্রুত ভেলটিনেসনে দেওয়া হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে যেহেতু বাগডোগরা বিমান বন্দর এই মুহূর্তে মেরামতির কারনে বন্ধ ,তাই আজ হাসিমারা সামরিক বিমান ঘাঁটি থেকে বিশেষ এয়ার এম্বুলেন্সে করে মুম্বাই নিয়ে যাবার প্রস্তুতি নিয়েছিল। তবে তার আগেই বুধবার গভীর রাতে না ফেরার দেশে পাড়ি দেন এই বিশিষ্ঠ শিল্পপতি তথা তৃণমূল নেতা।

কৃষ্ণকুমার কল্যাণীর মৃত্যুর খবর পাওয়া মাত্রই শোক প্রকাশ করে বার্তা দেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজের ট্যুইটার হ্যান্ডেলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লেখেন- “উত্তরবঙ্গের একজন শীর্ষস্থানীয় চা শিল্পপতি কৃষ্ণকুমার কল্যাণীর অকাল মৃত্যুতে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। আমি তাঁকে ডুয়ার্সে মা মাটি মানুষের একজন নেতৃস্থানীয় মুখ হিসেবেই চিনতাম। তাঁর পরিবার ও অনুগামীদের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা রইল।”

কিষান বাবুর প্রয়াণে তৃণমূল কংগ্রেস শ্রমিক ইউনিয়নের অন্যতম স্বপন সরকার জানান, উত্তরবঙ্গের একজন বিশিষ্ট চা শিল্পপতি এবং তৃণমূল কংগ্রেসের এক বরিষ্ঠ নেতাকে আজ হারালাম আমরা।
তৃণমূল নেতা তথা বিধায়ক খগেশ্বর রায় বলেন, একজন একনিষ্ঠ কর্মীকে হারালাম। অতীব দুঃখের বিষয়। তৃণমূল দলের শুরু থেকে আমরা দুইজন একসাথে কাজ করে এসেছি।
তৃণমূল নেতা তথা জলপাইগুড়ি পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সৈকত চ্যাটার্জী বলেন, অপূরণীয় ক্ষতি। একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের পাশাপাশি তিনি ছিলেন উত্তরবঙ্গের বিশিষ্ট শিল্পপতিও। কৃষ্ণ বাবুর নিথর দেহ আগামীকাল দাহ করা হবে।

কৃষ্ণ কুমার কল্যাণী ছিলেন তৃণমূল নেতা সন্দীপ মাহাতোর রাজনৈতিক অভিভাবক। সন্দীপ বাবু জানান, কৃষ্ণ বাবুর হাত ধরেই তার রাজনীতিতে প্রবেশ। প্রথমবার কাউন্সিলর হন কৃষ্ণ বাবুর হাত ধরেই।

বুধবার দুপুরে কৃষ্ণ কুমার কল্যাণীর মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে জলপাইগুড়ি দিন বাজার এলাকায় তার বাড়িতে যান জলপাইগুড়ি বিজেপি জেলা সভাপতি বাপি গোস্বমি সহ বিজেপি কর্মীরা। বাপী গোস্বামী বলেন, কৃষ্ণ কুমার কল্যাণীর মৃত্যু খুবই দুঃখজনক ঘটনা। তাঁর সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। মাস দুয়েক আগেও তাঁর শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতে আমি ও সাংসদ ডাঃ জয়ন্ত কুমার রায় কৃষ্ণ কুমার কল্যাণীর সঙ্গে দেখা করেছিলাম।