শিলিগুড়ি, ৩০ মে : ভুয়ো পরিচয়, ভুয়ো প্রেম, আর তার জালেই ফেঁসে ৪৬ লক্ষ টাকা খুইয়েছেন শিলিগুড়ির এক কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। অভিযুক্ত নিজেকে পরিচয় দিয়েছিল একজন IAS অফিসার এবং RAW-এর সহকারী সচিব হিসেবে। অবশেষে প্রতারণার জালে জড়িয়ে পড়া এই মামলায় চারজনকে গ্রেফতার করল শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটনের প্রধান নগর থানার পুলিশ।

এই চাঞ্চল্যকর ঘটনায় মূল অভিযুক্ত কোচবিহার জেলার হলদিবাড়ির বাসিন্দা সুরজিত রায়, যার প্রকৃত নাম আলবোরনি সরকার। তাকে জেরা করে পুলিশ জানতে পারে, এই প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত আরও তিনজন—বর্ণা রায়, বিপ্লব রায় ও রাম নিবাস যাদবকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।

বছর কয়েক আগে হোয়াটসঅ্যাপে এক অচেনা নম্বর থেকে আসে একটি মেসেজ। সেই সূত্রেই শিক্ষিকার সঙ্গে পরিচয় হয় সুরজিতের। নিজেকে IAS অফিসার দাবি করে ঘনিষ্ঠতা বাড়ায় সে। গল্প ফাঁদে—বিয়ে করতে চায়, জানায়, তার বাবা IG, মা স্কুল শিক্ষিকা। এরপর আসে নাটকের মোড়—মায়ের হার্ট ট্রান্সপ্লান্টের জন্য প্রয়োজন টাকার।

ভালোবাসার নামে অন্ধবিশ্বাস। শিক্ষিকা নিজের সঞ্চয়, সোনার গয়না বন্ধক, এমনকি বাবার দোকান বিক্রি করেও প্রায় ৪৬ লক্ষ টাকা পাঠান বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে। একবার তো সুরজিত শিলিগুড়ি জংশনে দেখা করতে এসে শিক্ষিকার গলা থেকে সোনার চেইনও ছিনিয়ে নেয়।
১৮ মে শিক্ষিকা অভিযোগ দায়ের করলে তদন্তে নামে পুলিশ। হলদিবাড়ি থেকে গ্রেফতার হয় সুরজিত। তার জবানবন্দিতে উঠে আসে বর্ণা রায়ের নাম, যিনি অভিযুক্তকে শিক্ষিকার নম্বর দিয়েছিলেন। ধীরে ধীরে পুলিশ ধরে ফেলে প্রতারণার চক্রের বাকিদেরও।
পুলিশ ইতিমধ্যেই প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে, যার মধ্যে রয়েছে শিক্ষিকার সোনার চেইন, প্রতারণার টাকায় কেনা গাড়ি ও মোবাইল। ধৃত সুরজিত, অর্থাৎ আলবোরনি সরকার, বিবাহিত এবং এক সন্তানের পিতা—এমনকি তার বিরুদ্ধে POCSO আইনে মামলা রয়েছে হলদিবাড়িতে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এই প্রতারণা চক্র আরও বড় পরিসরে সক্রিয় থাকতে পারে। তদন্ত চলছে, সূত্র ধরেই পুলিশ খুঁজছে অন্য সম্ভাব্য ভুক্তভোগীদের। আদালতে পেশ করার পর ধৃতদের রিমান্ডে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে তদন্তকারী দল।