রাহুল মন্ডল, মালদা : – মালদার কাঁসার কুটির শিল্প ক্রমশ বন্ধ হতে চলেছে। এক সময় মালদা জেলার আদি কংস বণিক সম্প্রদায়ের কাঁসার তৈরি থালা, বাটি, ঘটি থেকে অন্যান্য সামগ্রী গোটা দেশজুড়ে বিক্রি হয়েছে। মালদায় তৈরি আদি কংস বণিক সম্প্রদায়ের কাঁসার তৈরি থালা ও ঘটির সুনাম ছিল গোটা দেশে।

মালদা শহরের দুর্গাবাড়ি মোড় এলাকায় এক সময় ছিল আদি কংস বণিক সম্প্রদায়ের পিতলের সামগ্রী তৈরির একাধিক কারখানা। এখানকার প্রায় তিনশোটি পরিবার কাঁসার সামগ্রী তৈরি করেই তাদের জীবিকা নির্বাহ করতো। তবে সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে হাতে তৈরি কাঁসার সামগ্রীর কদর অনেকটাই কমেছে। আধুনিক যন্ত্রের দাপটে হাতে তৈরি থালা থেকে ঘটির মান অতটা আর ভালো হয় না। তাই সাধারণ মানুষের কাছে চাহিদাও অনেকটাই কমেছে। যার জেরে প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে মালদার আদি কংসবনিক সম্প্রদায়ের কাঁসা শিল্প। বর্তমানে লুপ্ত হওয়ার পথে এখানকার ভারত বিখ্যাত কাঁসা শিল্প।

এখনো মালদা শহরের দুর্গাবাড়ি মোড়ে আদি কংস বণিক সম্প্রদায়দের বসবাস। বর্তমানে কিছু কাঁসার দোকান রয়েছে এই সম্প্রদায়ের একাধিক পরিবারের। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তারা কাঁসার তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ে এসে এই দোকানে বিক্রি করেন। তবে নিজেদের তৈরি কাঁসার সামগ্রী বিক্রি হয় না। তাই কারখানাগুলিও বন্ধ হয়ে পড়েছে। বর্তমানে চার থেকে পাঁচটি পরিবার নিজেদের কাঁসার কারখানা টিকিয়ে রেখেছেন। তবে এর কতদিন? সেখানেই এখন তৈরি হয় সামান্য কাঁসার থালা।

তবে এক সময় মালদার আদি কংস বণিক সম্প্রদায়ের তৈরি “সদুলাপুরি ঘটি”র নাম ছিল গোটা বাংলা জুড়ে। হাতে তৈরি এই কাঁসার ঘটি দেখতে ছিল অনেকটাই সুন্দর এবং তার ফিনিশিংও ছিল চোখ ধরার মতো। তাই গোটা বাংলা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নাম ছড়িয়ে পড়েছিল এই ঘটির। তবে এখন ঝাড়খন্ড বিহার এর মত রাজ্যে আধুনিক কারখানায় তৈরি ঘটি দেখতে অনেকটা সুন্দর, আর দামও অনেকটাই কম তাই মানুষ সেই ঘটি এখন বেশি কিনছেন। যার জেরে এক সময়ের বিখ্যাত মালদার ঘটি আজ আর মালদায় তৈরি হচ্ছে না। হাতে তৈরি কাঁসার সামগ্রী আর তেমন বিক্রি না হওয়ায় অধিকাংশ আদি কংস বণিক সম্প্রদায়ের সদস্যরা এখন নিজেদের পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। পেটের টানে কেউ অন্য জীবিকার সাথে জড়িয়ে পড়েছেন, আবার কেউ চাকরি করছেন। বর্তমানে আদি কংস বণিক সম্প্রদায়ের প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ এই কাঁসা শিল্পের সাথে জড়িয়ে রয়েছে। বাকি সকলেই অন্য পেশার সাথে জড়িত হয়েছেন।
দেখুন ভিডিও