দিল্লিতে মমতা- কেজরিওয়াল বৈঠক অতঃপর….?

অরুণ কুমার : সম্প্রতি রাজধানী দিল্লিতে তৃণমূল সুপ্রিমো তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুলাকাত দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সঙ্গে। আলোচনা হয় দীর্ঘ সময়। জানা গেছে সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিল্লির বাসভবনে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এদিন দেখা করেন কেজরিওয়াল।

জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপি বিরোধী জোটকে বারবার শক্তিশালী করার কথা বলেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার সেই জোটের স্বপক্ষেই কি একধাপ এগোলেন মমতা?

গত সপ্তাহে দিল্লি গিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর ওইদিন সন্ধ্যায় দিল্লিতে নেত্রীর সাথে দেখা করতে এসে দাঁড়ায় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আপ নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের কনভয়। এদিকে একেবারে রাজধানীতে আপ নেতার সঙ্গে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর সাক্ষাৎকে ঘিরে নানা জল্পনা ছড়িয়েছে। তবে জাতীয় রাজনীতিতে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সঙ্গে তৃণমূল নেত্রীর বরাবরই সুসম্পর্ক। সেই সম্পর্ক যে এখনও সুদৃঢ় রয়েছে তারই ইঙ্গিতবাহী এদিনের সাক্ষাৎ। এমনটাই মত দিল্লির তথা দেশের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।

এদিকে দিল্লিতে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সঙ্গে বাংলার নেত্রীর সাক্ষাৎ নিয়ে আগে বিশেষ কিছু জানা না গেলেও মমতা দিল্লি পৌঁছনোর কিছুক্ষণের মধ্যেই মমতার বাড়িতে আসেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। সূত্রের খবর, তবে আচমকাই নাকি একেবারে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনা তা নিয়েও জোর চর্চা চলছে।

জানা গেছে, কেন্দ্রের কাছে বকেয়া ৯৭ হাজার কোটি টাকা বলে আগেই তোপ দেগেছিলেন মমতা। এনিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যেও চর্চা তুঙ্গে। মমতার দিল্লি সফরকে ঘিরেও নানা জল্পনা ছড়িয়েছিল বিভিন্ন মহলে। দিল্লিতে নেত্রী ঠিক কার কার সঙ্গে দেখা করবেন তা নিয়েও নানা চর্চা ছিল।
দুই নেতার মধ্যে প্রায় ঘণ্টাখানেক কথা হয় বলে সূত্রের খবর। চলতি দিল্লি সফরে তাঁর ঘোষিত কোনও কর্মসূচি না থাকলেও রাষ্ট্রপতি নির্বাচন-সহ আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিরোধী জোট নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে তাঁর এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। একই প্রসঙ্গে দুই মুখ্যমন্ত্রীর কথা হয় বলেই সূত্রের খবর।

যদিও তৃণমূল সূত্রে জানানো হয়েছে, “এটি ছিল একটি সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎ।” বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে পঞ্জাব বিধানসভা নির্বাচনে তার দলের বিপুল জয়ের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন বলেও জানিয়েছে তৃণমূল সূত্র। উল্লেখ্য, গোয়ার সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস এবং আম আদমি পার্টি একে অপরের বিরুদ্ধে প্রার্থী দেওয়ার পর থেকে এটি ছিল দুই নেতার প্রথম বৈঠক।
এদিকে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এই রাজ্যে আপ’এর সংগঠন বিস্তারের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা হলেও চিন্তিত রাজ্যের তৃণমূল সরকার বিরোধী দল। আপের ভাবমূর্তিকে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে তারা এগিয়ে চলেছে বিভিন্ন জায়গায়। এছাড়াও আরো কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে তা আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির মোকাবিলা কীভাবে করা যায় সে বিষয়ে একটা নীতি নির্ধারণ করা। কেন্দ্রের দ্বারা রাজ্যগুলির পরিকল্পনার খাতের পাশাপাশি জিএসটি প্রাপ্য অর্থ প্রদান প্রভৃতি বিষয় নিয়েও আলোচনা হয় এই বলে সূত্রের খবর।

এছাড়া, আগামী জুলাই মাসেই দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। তারই সূত্রে এবার বিজেপির বিরুদ্ধে বিরোধীদের জোট প্রার্থী দেওয়া নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে জোর জল্পনা। রাজনৈতিক কোনও ঘোষিত কর্মসূচি না থাকলেও একটি জাতীয় স্তরের আলোচনা সভায় যোগ দিতেই ছিল এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিল্লি সফর। আগামী দিনে তৃণমূলকে সহযোগী করে জাতীয় স্তরের জোট তৈরির বিষয়টি আলোচনায় প্রাধান্য পেয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। এখন দেখার বিষয় আগামী দিনে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির বিরুদ্ধে বিরোধীরা কতটা একজোট হয়ে লড়াই করতে পারে এর জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে প্রবাহিত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *