মৃত ছানার পাশে বসে মায়ের অপেক্ষা, জলপাইগুড়িতে মন কাঁদানো দৃশ্য

জলপাইগুড়ি : প্রাণের মায়া, ভালোবাসা, মায়ের নিঃস্বার্থ স্নেহ—এই অনুভূতিগুলো শুধু মানুষের মধ্যেই নয়, পশুদের মধ্যেও প্রবলভাবে বিদ্যমান। বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়ির ক্লাব রোড এলাকায় দেখা গেল এক করুণ দৃশ্য, যা চোখে জল এনে দেয় পশুপ্রেমী সহ সকলের।

সম্প্রতি একটি মা কুকুর পাঁচটি ছানার জন্ম দিয়েছিল। সেই ছানাগুলোকে সে নিজের ভালোবাসায় আগলে রাখছিল। কিন্তু হঠাৎই এক গাড়ির ধাক্কায় মারা যায় তার একটি সন্তান। আর সেই মৃত্যুশোক যেন কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না মা কুকুরটি।

মৃত ছানাটিকে সে মুখে করে তুলে এনে রাস্তার পাশে একটি কালভার্টের ওপর রাখে এবং পরম যত্নে আগলে ধরে বসে থাকে। হয়তো সে বুঝতে পারছে না, যে ছানাটি এতদিন তার আশ্রয়ে ছিল, সেটি আর কোনোদিনই সাড়া দেবে না। তবুও এক অদ্ভুত প্রত্যাশায় সে ছানার পাশেই বসে রয়েছে, যেন মৃত্যু নামক বাস্তবতাকে মেনে নিতেই পারছে না।

এই ঘটনাটি নতুন কিছু নয়। রাস্তায় অসংখ্য কুকুরছানা, বিড়ালছানা, কিংবা অন্যান্য প্রাণী মানুষের অসতর্কতার কারণে দুর্ঘটনার শিকার হয়। অথচ আমরা অধিকাংশ মানুষই সেই দৃশ্য দেখে এড়িয়ে যাই। কেউ এগিয়ে আসে না, কেউ সতর্ক হয় না। ফলস্বরূপ, বারবার এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সাক্ষী হতে হয় আমাদের।

Mata Dittiyang Next To Dead Chick Waiting; Heartbreaking Scene In Jalpaiguri

স্থানীয় পশুপ্রেমীদের বক্তব্য, এমন দৃশ্য বন্ধ হওয়া উচিত। মানুষের আরও দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন, যাতে এভাবে পথচলতি প্রাণীরা প্রাণ না হারায়। রাস্তা পার হওয়ার সময় আরও সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার। পাশাপাশি, আহত পশুদের চিকিৎসা ও সুরক্ষার ব্যবস্থা করাও অত্যন্ত জরুরি।

স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “মা ও সন্তানের সম্পর্ক শুধু মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, প্রাণীদের মধ্যেও এটি গভীরভাবে বিরাজমান। মা কুকুরটির চোখে যে ব্যথা, যে শূন্যতা, তা আমাদেরও স্পর্শ করা উচিত। আমাদের আরও সংবেদনশীল হওয়া দরকার।”

মা কুকুরটি এখনও বসে আছে তার মৃত ছানার পাশে। হয়তো সে জানে না, মৃত্যুর অর্থ কী, তবে সে জানে—ভালোবাসা শেষ হয় না, স্নেহ ফুরিয়ে যায় না। সে শুধু তার সন্তানের ফিরে আসার অপেক্ষায় আছে, যা আর কখনোই সম্ভব নয়। এই দৃশ্য আমাদের মানবিকতার এক নতুন বার্তা দিয়ে গেল—ভালোবাসা কেবল প্রাণের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, ভালোবাসা চিরন্তন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *