ঘোষণা করেও জলপাইগুড়ি শহরে টোটো নিয়ন্ত্রণ করা হয় নি। বরং ভাড়া বৃদ্ধির ফলে শহরে বেড়েছে টোটোর সংখ্যা। যানজটে নাকাল শহরবাসী। তবে খুশি টোটোচালকরা।
সংবাদদাতা, জলপাইগুড়ি, 29 জুন ’23 : বিগত 1লা জুন থেকে পুরসভা ঘোষণা করে জলপাইগুড়ি শহরে টোটোর ভাড়া একলাফে 50 শতাংশ বাড়িয়ে দেয়, অর্থাৎ টোটোর ন্যুনতম ভাড়া 10 টাকা থেকে বাড়িয়ে 15 টাকা করা হয়। সম্ভবত রাজ্যের মধ্যে জলপাইগুড়ি হল একমাত্র শহর যেখানে টোটোর ন্যুনতম ভাড়া 15 টাকা করা হয়েছে। সেইসাথে পুরমাতা ঘোষণা করেছিলেন 10ই জুন থেকে শহরে টোটো নিয়ন্ত্রণ করা হবে অর্থাৎ শহরে যানজট নিরসনে শহর ও শহর সংলগ্ন চারটি জিপির মোট 5000 টোটোকে চলাচল করতে দেওয়া হবে।

আর শহরে চলাচলকারী টোটো চালকদের 10ই জুনের মধ্যে আই কার্ড দেওয়া হবে। সেইসাথে অতিরিক্ত টোটো আটকানোর জন্য শহরে ঢোকার দশটি প্রবেশ পথে পুলিশ দিয়ে নাকা চেকিং করা হবে। পুরমাতা আরো জানিয়েছিলেন যে টোটোর নতুন রেট চার্ট তারা টোটো চালকদের হাতে দিয়ে দেবেন। সেই চার্টে কিমি প্রতি ভাড়া প্রদানের বিস্তারিত তথ্য থাকবে। যাতে যাত্রীদের ভাড়া দিতে অসুবিধা না হয়।
পুরমাতার ঘোষণার প্রায় একমাস হতে চলল। এখনও পর্যন্ত কার্যকর হয় নি শহরে টোটো নিয়ন্ত্রণ। তবে এতে কার্যত খুশী টোটো চালক থেকে টোটো ইউনিয়নের সদস্যরা। ইতিমধ্যে ঘোষিত হয়েছে রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের নির্ঘন্ট। এদিকে ঘোষণা করেও পুরসভার তরফে শহরে টোটো নিয়ন্ত্রণে কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় আপাতত খুশি গ্রামীণ টোটো চালকেরা। তারা জানায়, শহরে চলাচলের অনুমতি প্রাপ্ত সকল টোটো চালককে দ্রুত আইকার্ড প্রদান করতে হবে যাতে বোঝা যায় কে গ্রামের টোটো চালক আর কে শহরের টোটো চালক। তারা আরো বলেন, পুরসভা বলেছে গ্রামের টোটো শহরে আসবে না কিন্তু তারা বুঝবে কিভাবে। কোনটা গ্রামের টোটো আর কোনটা শহরের টোটো। তাই সকল টোটো চালককে দ্রুত আই কার্ড প্রদান করতে হবে এতে সবারই সুবিধা হবে।

ওদিকে সিটু অনুমোদিত টোটো ইউনিয়নের নেতা শুভাশীষ সরকার জানান, পুরসভা বারেবারেই সিদ্ধান্ত নেয়, কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে পারে না। পুরসভা এখনো আই কার্ড দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেনি। আমরা পুরসভা কে বারেবারেই বলেছি 5000 কার্ড বিতরণ করে শহরে যানজট নিরসন করার জন্য, কিন্তু পুরসভার সেই উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
অন্যদিকে শহরে টোটোর ভাড়া বৃদ্ধির ফলে শহরের বাইরে থেকে আগের চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যায় টোটো চালকরা বাড়তি রোজগারের লক্ষ্যে জলপাইগুড়ি শহরে আসছেন টোটো চালাতে। এতে শহরে প্রতিদিন টোটোর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ফলে শহরে যানজটও বেড়েই চলেছে। আর সেই যানজটে নাকাল হচ্ছেন শহরবাসীরা।
সেইসাথে পুরসভার কিমি প্রতি টোটোর ভাড়া বৃদ্ধির ফলে নিত্যদিন টোটো চালকদের সাথে যাত্রীদের বচসা লেগেই রয়েছে। কারন পুরসভা জানিয়েছিল, প্রথম 2 কিমি ভাড়া 15 টাকা, তারপর কিমি প্রতি 5 টাকা করে বাড়বে। কিন্তু কোন টোটোতেই ভাড়া মিটার বসানোর নির্দেশ দেওয়া হয় নি। ফলে যাত্রীরা কতখানি পথ যাচ্ছে সেটা বোঝা যাচ্ছে না। মূলত টোটো চালকদের মর্জিমাফিক ভাড়া দিতে হচ্ছে যাত্রীদের। যদিও পুরমাতা জানিয়েছিলেন যে টোটো চালকদের কিমি অনুযায়ী ভাড়ার তালিকা তৈরি করে দেওয়া হবে। যাত্রীরা সেই তালিকা অনুযায়ী ভাড়া প্রদান করবেন। কিন্তু টোটো চালকরা জানিয়েছেন যে সেই তালিকা তারা এখনও পান নি।
পরিশেষে বলা যায়, জলপাইগুড়ি শহরে টোটো নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ পুরসভা। পুরসভা অপরিকল্পিত ভাবে টোটোর ভাড়া বৃদ্ধি করে শহরবাসীর পকেটেই শুধু টান দেন নি, সেইসাথে শহরে যানজট নিরসনের পরিবর্তে বৃদ্ধি করেছেন।