ইস্টার দ্বীপের রহস্য-মূর্তি

পিনাকী রঞ্জন পাল

১৭২২ খ্রিস্টাব্দে ইস্টারের দিন এক ডাচ অনুসন্ধানকারী জ্যাকব রোগেবিন দক্ষিণ আমেরিকার পাশে প্রশান্ত মহাসাগরের ২,৫০০ মাইল দূরে এক ছোট্ট দ্বীপে গিয়ে উপস্থিত হন। সেখানে তিনি সুপ্ত আগ্নেয়গিরির কিছু মুখ এবং পাষাণ যুগের কিছু জংলি মানুষের সাক্ষাৎ পান। সেই সঙ্গে তিনি পাথরের তৈরি কিছু মানুষের চেহারা দেখতে পান যেগুলি সমুদ্রের দিকে মুখ করে ছিল। আজ পর্যন্ত পুরাতত্ত্ববিদরা এই সমস্ত পাথরের চেহারার রহস্যের সমাধান খুঁজে বার করতে পারেননি।

এই সমস্ত বিশালাকায় চেহারা ইস্টার দ্বীপের আগ্নেয়গিরি পাহাড়ের নিচে অবস্থিত। এগুলি মাটির বহু নিচে পর্যন্ত ঢোকানো আছে। প্রায় একইরকম দেখতে এই চেহারাগুলি মাটির ওপরে দশ থেকে চল্লিশ ফুট পর্যন্ত উঁচু। এদের মধ্যে অনেকগুলির ওজন প্রায় ৫০ টন পর্যন্ত। সব মিলিয়ে প্রায় ৬০০ মূর্তি সেই দ্বীপে আছে, যেগুলি দ্বীপটিকে এক অতি বিচিত্র কলাকৃতিতে সজ্জিত করেছে।

এই মূর্তিগুলি ‘তুফা’ নামক পাথরের তৈরি, যা নরম আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত লাভা ইত্যাদি পদার্থ দিয়ে নির্মিত আর এই ধরনের পাথরের দ্বীপের মাঝে এক আগ্নেয়গিরি ‘রানো শরকু’ থেকে নির্গত হয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। যখন অনুসন্ধানকারীরা সেই দ্বীপে আরও অনুসন্ধান করেন তখন তাঁরা ১৫০টি অসম্পূর্ণ মূর্তি সেই পাহাড়ে দেখতে পান। যেখানে সেগুলিকে তৈরি করা হচ্ছিল। এই মূর্তিগুলির প্রতিটি ভিন্ন ভিন্ন ধাপে থেমে গিয়েছিল। মূর্তিগুলির আশপাশে বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতিও পাওয়া গিয়েছিল। এ সবকিছুই নির্দেশ করছে যে কাজ চলতে চলতে একদম বন্ধ হয়ে যায়, আর তারপর কখনও শুরু হয়নি।

পুরাতত্ত্ববিদরা যত বেশি এই দ্বীপে অসুন্ধান কার্য চালান ততই তাঁরা নিজেদের আবিষ্কারের জন্য সমস্যায় জড়িয়ে পড়তে লাগলেন। মূর্তিগুলির পায়ের নিচে হাড় এবং ছাই চাপা পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এদের মধ্যে কিছু মূর্তির পাশে লাল রঙের চ্যাপ্টা পাথরের বড় বড় টুকরো পাওয়া গেছে, যেগুলি মূর্তিগুলির মাথার মুকুট হিসেবে ছিল।

এই মূর্তিগুলির আশপাশের মাটি খুঁড়ে দেখা গেছে যে সেই সব অজ্ঞাত শিল্পী শুধুমাত্র মূর্তিগুলির চেহারাই তৈরি করেননি, তাঁদের সম্পূর্ণ শরীরই তৈরি করেছিলেন। যাদের মধ্যে অনেক মূর্তির নিম্ন অংশ মাটির ভেতরে ৩০ ফুট পর্যন্ত ঢুকে গিয়েছিল।

‘রানো শরকু’-র স্থান থেকে দশ মাইল দূর পর্যন্ত এই সমস্ত মূর্তিকে কিভাবে আনা হয়েছিল? তাও আবার মূর্তিগুলির উপরিভাগের মসৃণতাকে কোনও রকম ক্ষতি না করে? কিভাবে সেইসব বিরাট বিরাট পাথর মূর্তিগুলির মাথার ওপর রাখা হয়েছিল? কতদিন লেগেছিল এইসব বিশালাকায় মূর্তি তৈরি করতে? কতবছর আগে আর কারাই বা এই মূর্তিগুলি তৈরি করেছিল? কেনই বা তৈরি করেছিল? কাজ হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাবার কারণই বা কি ছিল?

এই সব প্রশ্নের কোনও সন্তোষজনক উত্তর আজ এতবছর পরেও পাওয়া সম্ভব হয়নি।

Photo Credit- pixabay.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *