স্মৃতিচারণ : রাষ্ট্রীয় পুরস্কার প্রাপ্ত লেখক মোহিত ঘোষ

লেখক পঙ্কজ সেন

জলপাইগুড়ি শহরের টেম্পল স্ট্রিটে যোগমায়া কালীবাড়ির ঠিক উল্টোদিকেই অবস্থিত রাষ্ট্রীয় পুরস্কার প্রাপ্ত লেখক মোহিত ঘোষ (জন্ম ২৬ শে নভেম্বর ১৯২১) এর বাড়ি।

“ছন্দবীথি ” নামে পরিচিত এই বাড়িটি জলপাইগুড়িবাসীর অতি পরিচিত। কবি ও ছড়াকার হিসেবে পরিচিত মোহিত বাবুর বাড়ির দরজায় চিঠির বাক্সে একটি সুন্দর ছড়া লেখা ছিল, ” চিঠির বাক্সের এই ফোকরে, ফেলবে চিঠি যত্ন করে…”। বাড়িতে প্রবেশের পর সদর গেটটি যাতে কেউ ভুলেও খোলা না রাখে, সেটা নিয়েও একটি সুন্দর ছড়া লেখা ছিল, ‌ “আসতে যেতে মনের ভুলে, রাখবে না কেউ গেটটি খুলে…”। সদর গেট খুলে বাড়িতে প্রবেশ করার পর, দরজায় লেখা একটি সুন্দর ছড়া, “খুললে জুতো ভুললে পরে, পারবে না তো ঢুকতে ঘরে…”। কলিং বেল বাজানো নিয়েও একটি সুন্দর ছড়া লেখা ছিল সদর দরজায়, “আসলে অকাজ কিংবা কাজে, টিপলে বোতাম ঘণ্টা বাজে…”।

“ছন্দ বীথি” নামটি সার্থক। ছোটদের “টাপুর টুপুর” ছড়ার বইয়ের জন্য তিনি রাষ্ট্রীয় পুরস্কারে সম্মানিত হন। তার রচিত অপর একটি বিখ্যাত ছড়ার বই হল “কাটুম কুটুম”। মোহিত বাবুর লেখা ” জলখাবারের জলসা ” বইটি বাংলা সাহিত্যে এক অনন্য নজির গড়েছে। জলপাইগুড়ি রবীন্দ্রভবনে ৯০ এর দশকে এই বইটিকে নিয়ে নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল। গয়ের কাটা রিডিং ক্লাবের পক্ষ থেকে তাকে নন্দন পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়েছিল।

আদতে চা শিল্পপতি মোহিতবাবু রাহুত বাড়ির জামাই ছিলেন। কামিনী কান্ত রাহুতের বড় মেয়ের সাথে মোহিত বাবুর বিয়ে হয়েছিল। মোহিত বাবু ‘সুজন ছড়ার আসর’ এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। জলপাইগুড়ি আদালতের বিশিষ্ট আইনজীবী রবিন বাগচী ছিলেন এই সংস্থার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।

আমাদের ছেলেবেলায় অত্যন্ত ভালোবাসার ও কাছের মানুষ ছিলেন মোহিতবাবু। সেই সময় শহরের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই তার লেখা “টাপুর টুপুর” বইটি দেখা যেত। আজও মনে আছে, আমার বাবা গ্রন্থ-ভারতী থেকে এই বইটি আমাকে কিনে দিয়েছিলেন। ছড়াগুলো পড়ে খুবই মজা পেয়েছিলাম। জলপাইগুড়ির এই বিশিষ্ট ছড়াকার ২০০৭ সালের ১লা জানুয়ারি চিরদিনের জন্য আমাদের সকলকে ছেড়ে চলে যান। জলপাইগুড়িতে “ছন্দবিথী” হারিয়ে গেলেও, শহরের অসংখ্য পাঠকের হৃদয়ে আজীবন বেঁচে থাকবেন।

ছবি লেখক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *