পিনাকী রঞ্জন পাল
জাতীয় প্রতীক, জাতীয় পতাকা এবং জাতীয় সঙ্গীত — এই তিনটি জিনিস প্রতিটি ভারতীয়ের কাছে খুবই পবিত্র। কিন্তু এগুলো অর্জন তো সহজে হয় না। এ জন্যে দীর্ঘদিন লড়াই করতে হয়েছে ভারতবাসীকে। অবশেষে ভারত স্বাধীন হল। আজ সংক্ষেপে তোমাদের জানাব আমাদের জাতীয় প্রতীক, পতাকা এবং সঙ্গীত সম্পর্কে কিছু কথা।
জাতীয় প্রতীক : ভারতের জাতীয় প্রতীক সারনাথের সিংহলাঞ্ছিত অশোকস্তম্ভ থেকে নেওয়া হয়েছে। বুদ্ধদেব প্রথম ৫ জন শিষ্যকে যে স্থানটিকে দীক্ষা দেন, ঠিক সেই স্থানটিতে সম্রাট অশোক ২৪২-২৩২ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে এই স্তম্ভ নির্মাণ করেছিলেন। আসল অশোক স্তম্ভটি বর্তমানে সারনাথ মিউজিয়ামে রাখা আছে। ১৯৫০ সালে ২৬ জানুয়ারি ভারত প্রজাতন্ত্র হিসাবে ঘোষিত হওয়ার সময়েই সরকারিভাবে এই প্রতীক নেওয়া হয়। এই চিহ্ন কেবলমাত্র রাষ্ট্রীয় কাজকর্মে ব্যবহৃত হয়,. কোন ব্যক্তিগত কাজে বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এর ব্যবহার নিষিদ্ধ। সারনাথের মূল অশোক স্তম্ভে আছে চারটি সিংহ পিঠে পিঠ দিয়ে দাঁড়িয়ে নিচের আধারটিতে হাতি, ছুটন্ত ঘোড়া, ষাঁড় ও সিংহের রিলিফ রয়েছে। তবে এই চারটি প্রাণীর রিলিফকে পৃথক করতে তাদের খোদাই করে তৈরি ওই অশোক অজ্ঞের শীর্ষে রয়েছে ধর্মচক্র।
সরকার যে প্রতীকটি গ্রহণ করেছে, তাতে চারের বদলে তিনটি সিংহ দৃশ্যমান। চতুর্থ সিংহটি দেখা যাবে না। নিচে কেন্দ্রস্থলে ধর্মচক্র ও তার দু’পাশে ষাঁড় ও ঘোড়ার রিলিফ, এ ছাড়া দু’ধারে অন্য চক্রগুলির আভাস মাত্র দেখা যায়। ঘণ্টাকৃতির পদ্ম এখানে বাদ পড়েছে। একেবারে নিচে মাণ্ডুক্য উপনিষদ থেকে ‘সত্যমেব জয়তে’ কথাটি দেবনাগরী লিপিতে উৎকীর্ণ রয়েছে।
জাতীয় পতাকা : ভারতের জাতীয় পতাকী ত্রিবর্ণ রঞ্জিত। জাতীয় পতাকায় গেরুয়া, সাদা ও সবুজ সমান্তরালভাবে ক্রমানুসারে ওপর থেকে নিচে সমান আয়তনে থাকবে। পতাকার আকারের ক্ষেত্রে এর চওড়া লম্বায় তিন ভাগের দু’ভাগ হতে হবে। প্রতিটি রঙ এক একটি আদর্শের প্রতীক। গেরুয়া রঙ ত্যাগ ও সেবার প্রতীক, সাদা রঙ শান্তি ও পবিত্রতার প্রতীক এবং সবুজ রঙ নির্ভীক কর্মশক্তির প্রতীক। পতাকার ঠিক কেন্দ্রস্থলে সাদা রঙের ওপর গাঢ় বর্ণের অশোক চক্র রয়েছে। নিয়মানুযায়ী চক্রের ব্যাস সাদা অংশের সমান হতে হবে। এই চক্রটি গতিশীলতা ও চক্রের মধ্যস্থলের চব্বিশটি দত্ত আমাদের দিবারাত্র কর্মব্যস্ততার প্রতীক।
১৯৪৭ সালের ২২ জুলাই এই পতাকা গণপরিষদে গৃহীত হয় এবং ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট এটি জাতির উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করে ভারত সরকার এর আকৃতি-প্রকৃতি ও ব্যবহার সম্বন্ধে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।
জাতীয় পতাকা ব্যবহারের কিছু নিয়ম আছে। সেগুলি হল— জাতীয় পতাকার ডানদিকে বা উর্ধ্বে কোন কিছু থাকবে না। ময়লা ও ছেঁড়া পতাকা ওড়ান যাবে না। কেবলমাত্র রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তির মৃতদেহের ওপর আচ্ছাদন রূপে পতাকা ব্যবহার করা যাবে। শোভাযাত্রায়। জাতীয় পতাকা সবসময় পুরোভাগে এবং পতাকাবাহীর ডান কাঁধে থাকবে। প্রধান প্রধান সরকারি বাসভবনে জাতীয় পতাকা ব্যবহার করা যাবে। শুধুমাত্র জাতীয় উৎসবের দিন সাধারণ গৃহস্থ বাড়িতে জাতীয় পতাকা ওড়ান যাবে, তর তবে সন্ধ্যায় পতাকা নামিয়ে নিতে হবে। রাষ্ট্রীয় মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তির মৃত্যুতে বা জাতীয় শোক পালনে পতাকা অর্ধনির্মিত রাখতে হয়। সভা- সমিতিতে পতাকা বক্তার পিছনে ও মাথার ওপরে থাকবে।
জাতীয় সঙ্গীত : ১৯৫০ সালের ২৪ জানুয়ারি সাংবিধানিক সভায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জনগণমন’ গানটিকে জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে গ্রহণ করার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। এই গানটি ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে সর্বপ্রথম গাওয়া হয়েছিল ১৯১১ সালে। পাঁচটি স্তবকের ওই গানের প্রথম স্তবকটিই জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে নির্দিষ্ট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘বন্দেমাতরম’ গানটিও জাতীয় সঙ্গীতের সমান (জাতীয় জয়গাথা) মর্যাদা পায়।
জাতীয় সঙ্গীত চলাকালীন দাঁড়িয়ে সকলের কণ্ঠ মেলান উচিত। গাইতে না পারলে চুপচাপ অবনত দৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। জাতীয় সঙ্গীত অনুষ্ঠানের শুরুতে গাওয়াই ভাল। নির্দিষ্ট সুরে ও শ্রদ্ধার সঙ্গে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে হয়। এই গান গাওয়ার নির্দিষ্ট সময়সীমা হল সেকেন্ড। কোনরূপ উচ্ছৃঙ্খলতা প্রকাশ অশোভনীয়, কারণ জাতীয় সঙ্গীত এক অর্থে মাতৃভূমির বন্দনা গান।
Photo source- google.