পিনাকী রঞ্জন পাল : প্রতিটি ভারতীয়ের মনে একবার হলেও ভেসে ওঠে নীরজ চোপড়ার জ্যাভলিন ছোঁড়ার দৃশ্য। টোকিয়ো অলিম্পিক্সে সোনা জিতে গোটা বিশ্বে ভারতের নাম উজ্জ্বল করেছিলেন তিনি। কিন্তু আজ আমরা নীরজকে শুধু একজন ক্রীড়াবিদ হিসেবে নয়, একজন অনন্য মানুষ হিসেবেও দেখতে পাচ্ছি। তাঁর সাম্প্রতিক সাদামাটা বিয়ে যেন আরেকবার আমাদের সামনে তুলে ধরল জীবনের প্রকৃত মূল্যবোধ।
সাম্প্রতিককালে আমরা এমন এক সমাজে বাস করি যেখানে বিয়ে, আশীর্বাদ, এমনকি ছোটখাটো ঘটনাও বড় করে তোলা হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। বিয়ের অনুষ্ঠানকে যেন একরকম প্রদর্শনীতে পরিণত করা হয়েছে। এর মধ্যেই নীরজ চোপড়ার মতো একজন তারকা তাঁর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তটি পালন করলেন পরিবারের মধ্যেই, প্রচারের আলোর বাইরে। এটি শুধু তাঁর ব্যক্তিত্বের পরিচয়ই দেয় না, তাঁর চিন্তাভাবনার গভীরতাও তুলে ধরে। নীরজ দেখিয়ে দিলেন যে সুখ ও সাফল্যের মাপকাঠি কোনো বাহ্যিক প্রদর্শন নয়।

নীরজ শুধু একবার নয়, দু’বার অলিম্পিক্সে পদক জিতে দেখিয়েছেন ভারতের প্রতিভা। টোকিয়ো অলিম্পিক্সে সোনা জেতার পর, প্যারিস অলিম্পিক্সে রুপো এনে দিয়েছেন। কিন্তু এর পরেও তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের প্রতি এই সাদামাটা দৃষ্টিভঙ্গি তাঁকে আরও বিশেষ করে তোলে। নীরজের কাজ আমাদের শেখায় যে তারকাখ্যাতি থাকা সত্ত্বেও মাটির সঙ্গে সংযুক্ত থাকা যায়।
নীরজ চোপড়ার বিয়ের ছবি যখন সামনে এলো, সবাই অবাক হয়ে গেল। গোলাপি পাগড়ি, সাদামাটা পোশাক এবং পরিবারের ছোট পরিসরে বিয়ে, এই দৃশ্য যেন বার্তা দিল—জীবনের আসল সৌন্দর্য বিলাসিতার মধ্যে নয়, বরং বিনয়ের মধ্যে। তাঁর স্ত্রী, টেনিস খেলোয়াড় হিমানি মোর, নিজেও একজন ক্রীড়াবিদ। এই দম্পতি শুধু নিজেদের জীবনের জন্য নয়, দেশের জন্যও অনুপ্রেরণার কারণ হয়ে উঠতে পারেন।
ভারতীয় ক্রীড়া জগতে ক্রিকেট যেমন জনপ্রিয়, তেমনই দাবা, অ্যাথলেটিকস, তীরন্দাজি, বক্সিং, কুস্তি, শুটিং এবং জ্যাভলিনেও আমরা শীর্ষস্থানে পৌঁছেছি। কিন্তু ক্রিকেটের বাইরের এই সাফল্যগুলো প্রায়শই আমাদের নজর এড়িয়ে যায়। নীরজ চোপড়া সেই খেলোয়াড়দের একজন যিনি আমাদের মনে করিয়ে দেন যে খেলার আসল অর্থ হল দেশকে গর্বিত করা। তাঁর বিনয়ী আচরণ আমাদের শেখায়, সফল মানুষ শুধু নিজের কাজ দিয়েই বড় হন না, তাঁদের ব্যক্তিত্ব দিয়েও সবার মন জয় করেন।
নীরজ চোপড়ার জীবন এবং তাঁর সাদামাটা বিয়ে আমাদের শিখিয়ে দেয়—জীবনের প্রকৃত লক্ষ্য হলো সাফল্যের সঙ্গে বিনয় বজায় রাখা। তিনি প্রমাণ করলেন যে সুখ মানে বড়সড় আয়োজন নয়, বরং ছোট ছোট মুহূর্তের আনন্দ। তিনি দেশের যুবসমাজকে দেখিয়ে দিলেন, বড় হতে হলে মাটির কাছাকাছি থাকতে হয়।
নীরজ চোপড়া এবং হিমানি মোরের বিয়ে কেবল তাঁদের জীবনের এক নতুন অধ্যায় নয়, এটি আমাদের সবার জন্য এক মূল্যবান শিক্ষা। আমরা প্রার্থনা করি, এই দম্পতি তাঁদের ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনে আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠুন। দেশের হয়ে গৌরব নিয়ে আসুন এবং আমাদের দেখিয়ে দিন যে বিনয়, পরিশ্রম এবং প্রকৃত মূল্যবোধের সঙ্গে জীবনের যেকোনো স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব।
শুভেচ্ছা নীরজ ও হিমানিকে। তোমাদের সাদামাটা বিয়ে কিন্তু বিশাল এক অনুপ্রেরণা। দেশের গৌরব আরও উজ্জ্বল করো।