লেখক পঙ্কজ সেন
ভারতের স্বাধীনতার আগে থেকেই জলপাইগুড়ি শহরে “নিউ সিনেমা” এবং “নিউ চিত্রালী” নামক দুটি সিনেমা হল ছিল। প্রথমটি চলত বান্ধব নাট্য সমাজে এবং দ্বিতীয়টি শহরের আর্যনাট্য সমাজ গৃহে মাসিক ভাড়ার মাধ্যমে। নিউ সিনেমার মালিক ছিলেন শচীন মিত্র এবং নিউ চিত্রালীর মালিক ছিলেন নগেন গাঙ্গুলী (রূপশ্রী হলের মালিক)। উল্লেখ্য যে, নগেন বাবুর সিনেমার ব্যবসা ছিল। শোনা যায় ডুয়ার্সেও তার সিনেমা হল ছিল।

পরবর্তীতে নিউ সিনেমা হলের নাম পরিবর্তিত হয়ে প্রথমে স্পেন্সার টকিজ ও পরবর্তীতে দীপ্তি টকিজ হয়। বেশ কয়েক বছর নিউ চিত্রালী সিনেমা হল আর্যনাট্য সমাজ গৃহে ভাড়ার বিনিময়ে চলার পর, পরবর্তী সময়ে পঞ্চাশের দশকের প্রথম দিকে জলপাইগুড়ি শহরের কামার পাড়াতে (বর্তমান অগ্রসেন ভবনের পেছনে, ৪ নম্বর ওয়ার্ড) “নিউ চিত্রালী” নামক ব্যারাকে স্থায়ীভাবে এই হলটি খোলার কথা ছিল। কিন্তু সম্ভবত এই স্থানটির যৌথ মালিকানা ছিল জলপাইগুড়ি বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়ি কর্তৃপক্ষ এবং নগেন্দ্রনাথ গাঙ্গুলীর। তার উপর এই সিনেমা হল খোলা নিয়ে উক্ত এলাকার স্থানীয় জনগণের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ ছিল। পরবর্তীতে এই যৌথ মালিকানা নিয়ে জলপাইগুড়ি আদালতে রাজকুমারী প্রতিভা দেবীর সঙ্গে নগেন্দ্র নাথ গাঙ্গুলীর মামলা হয়। মামলায় কোন এক পক্ষ জয়ী হয়ে পরবর্তীতে কোয়াটার সদৃশ এই নিউ চিত্রালি ব্যারাক বাড়িটি বিক্রি করে দেওয়া হয় শহরের বিখ্যাত ব্যবসায়ী মহাবীর সিতানীর কাছে। উল্লেখ্য যে, এই ব্যারাক বাড়িটিতে পূর্ব থেকেই সাত ঘর ভাড়াটিয়া ছিল। মহাবীর সিতানী এই সাতঘর ভাড়াটিয়াকে কিছু অর্থের বিনিময়ে বাড়িটি ছাড়তে অনুরোধ করেন। চার ঘর ভাড়াটিয়া মহাবীরবাবুর এই প্রস্তাবে রাজি থাকলেও বাকি তিন ঘর ভাড়াটিয়া তাদের অসম্মতি জানান। শেষে মহাবীর সিতানী এই তিন ঘর ভাড়াটিয়ার কাছেই কোয়াটার সদৃশ বাড়িটি বিক্রি করে দেন। আর তার সঙ্গেই ধুলিস্যাৎ হয়ে যায়, জলপাইগুড়ি শহরের বুকে “নিউ চিত্রালী” নামক এই সিনেমা হলটি গড়ে ওঠার স্বপ্ন।

নিউ চিত্রালী নামক ব্যারাক বাড়িটির একটি ছবি প্রদত্ত বিবরনীর সাথে তুলে ধরা হলো।
তথ্য সহায়তা : বর্তমান মালিক বাসু সেনগুপ্ত (পিতা নিরঞ্জন সেনগুপ্ত)।