লেখক পঙ্কজ সেন
খান বাহাদুর ওয়ালীয়র রহমান (১৮৬১-১৯৪৩) ছিলেন ওপার বাংলার নোয়াখালী থেকে আগত একজন আইনজীবী এবং তার সঙ্গে এক বিশিষ্ট চা শিল্পপতি। জলপাইগুড়িতে এসে তিনি আইন ব্যবসার সাথে সাথে খানবাহাদুর নবাব মোশারফ হোসেনের সঙ্গে চা ব্যবসায় যুক্ত হন। নিজস্ব যোগ্যতার ভিত্তিতে এবং তৎকালীন চা-করদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সংযোগে তিনি আসামে কয়েকটি চা বাগানের পত্তন করেন, তবে এই বাগানগুলির প্রধান কার্যালয় ছিল জলপাইগুড়িতে। ১৯০০ সালে আটিয়াবাড়ী চা বাগান প্রতিষ্ঠায় তারিনী প্রসাদ রায়, গোপাল চন্দ্র ঘোষ প্রমূখ উদ্যোক্তাদের মধ্যে ওয়ালিয়র রহমান ছিলেন অন্যতম।
সম্পর্কে তিনি ছিলেন খান বাহাদুর মুন্সি রহিম বক্সের ভাইপো। চা শিল্পপতি হয়ে তিনি অনতিবিলম্বে বহু ধন সম্পদের অধিকারী হন এবং নবাব বাড়ির গণ্ডির কিছুটা বাইরে এসে বর্তমানে যেখানে “নুরমঞ্জিল” প্রাসাদটি অবস্থিত, সেই বাড়ি নির্মাণ করেন। মুসলিম লীগের সক্রিয় সমর্থক মৌলভী ওয়ালীয়র রহমানের ব্যাপক জনসংযোগ ছিল। লীগের কাজকর্মে তাকে ডুয়ার্স, রাজগঞ্জ ও বেলাকোবা অঞ্চলে নিয়মিত যাতায়াত করতে হতো। এই অন্তরঙ্গতার সুবাদে ১৯৪৩ সালে তারই প্রচেষ্টায় বেলাকোবায় ওয়ালিয়র রহমান এইচ.ই স্কুল গড়ে ওঠে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ গ্রহণ করেন তারই বন্ধু অক্ষয় কুমার বসু। পরবর্তীকালে দেশভাগের পর বিদ্যালয়টি অবশ্য বেলাকোবা হাইস্কুল নামে পরিচিতি পায়।

জলপাইগুড়ি পুরসভার সদস্য ওয়ালীয়র রহমান নিঃসন্দেহে এক বিশিষ্ট নাগরিক। ১৯৪১ সালে ইংরেজ সরকারের পক্ষ থেকে তাকে খান বাহাদুর উপাধি প্রদান করা হয়েছিল। ওয়ালীয়র রহমানের ৭ সন্তান। তার মধ্যে ৬ জন পুত্র ছিলেন গ্রাজুয়েট এবং তারা প্রায় সকলেই টি-প্লান্টারস হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন। তার পঞ্চম পুত্র নুর মহম্মদ ব্যারিস্টারী পড়ার জন্য বিলেত গিয়েছিলেন। বিলেত থেকে পুত্রের ফিরে আসবার সময় তাকে খুশি করবার জন্য তিনি “নুরমঞ্জিল” প্রাসাদটি নির্মাণ করেছিলেন। কিন্তু আচমকা পুত্র নুর মহম্মদের মৃত্যু হওয়ায় আশাহত পিতা ভেঙ্গে পড়েন এবং কিছুদিন পর তিনিও পুত্রশোকে মারা যান (১৯৪৩ সালের নভেম্বর মাস)।
ভারতের স্বাধীনতার কিছুদিন পরে ১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রীয় উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের পাঠদান পর্বের সূত্রপাত কিন্তু এই ভবনেই হয়েছিল। পরবর্তীতে বিদ্যালয়টি তার বর্তমান স্থানে চলে গেলেও বিদ্যালয়ের হোস্টেলটি কিন্তু নুরমঞ্জিল ভবনেই থেকে যায়। পরে অবশ্য হোস্টেল বিদ্যালয়ের নিজস্ব ভবনে স্থানান্তরিত হয়। বর্তমানে জলপাইগুড়ি শহরের ডিবিসি রোডে অবস্থিত এই ভবনটি “ডিপিএসসি অফিস” হিসেবে পরিচিত।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার : বিশিষ্ট লেখক উমেশ শর্মা রচিত গ্রন্থ।