নিজস্ব সংবাদদাতা, জলপাইগুড়ি, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ : ভোটের আগে শেষ রবিবারে জলপাইগুড়ি শহরে পুর ভোটের প্রচারে ঝড় তুললো সব রাজনৈতিক দল।

এদিন দিনবাজারের মাছ বাজার থেকে শুরু করে সবজি বাজারের ক্রেতা বিক্রেতাদের কাছে হাতজোড় করে এবং ঢাক বাজিয়ে আসন্ন পুর নির্বাচনে বিজেপিতে ভোট দেওয়ার অনুরোধ করলেন জলপাইগুড়ির সাংসদ ডাঃ জয়ন্ত কুমার রায়। সাংসদের সঙ্গে ছিলেন চার নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী দুর্গা ঝা।
উল্লেখ্য, এদিন প্রচারের মাঝেই পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের বিদায়ী কাউন্সিলর নিপু সাহার সঙ্গে ভাব বিনিময়ও করলেন সাংসদ।

সাংসদ বলেন, “আমরা আলাদা আলাদা দলের সঙ্গে যুক্ত। তবে কারও সঙ্গে ব্যক্তিগত শক্রতা নেই। দলের বাইরে আমরা একে অপরকে পছন্দ করি এটাইতো সৌজন্যতার পরিচয়। তিনি আরও বলেন, আমি সকাল থেকে প্রচারে বের হয়েছি। লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে আমরা শহরে এগিয়ে ছিলাম। এই শহরে নির্দল প্রার্থীদের নির্বাচনে লড়াই করতে দেওয়া হয় না। শহরের ১ ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের ঘটনাতো সবাই জানে। এরপরেও যদি গনতন্ত্র হরন করে ভোট হয় তাহলেতো বিরোধী শূন্য হবেই।

এদিকে তৃণমূল নেতা তথা চার নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর নিপু সাহা বলেন,”ভোট প্রচারের অধিকার সকলের। সবাই ভোট প্রচার করবে। আজ বিজেপি প্রার্থী ও সাংসদ এসেছিলেন দিনবাজারে ভোট প্রচার করতে।

অন্যদিকে শেষ রবিবারের তৃণমূলের প্রচারে দেখা গেল রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম দেবকে। “শিলিগুড়ি শহরের মতো কঠিন জায়গায় তৃণমূল অল টাইম রেকর্ড গড়েছে, জলপাইগুড়িতেও মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের পক্ষে ভোট দেবেন। এবার এখানে বিরোধী শূন্য পুরসভা হবে।” রবিবার জলপাইগুড়ি পুরভোটের প্রচারে এসে এমনটাই জানালেন গৌতম দেব। গৌতম দেব এদিন দিনভর জলপাইগুড়ি শহরে প্রচার করেন। এদিন গৌতম দেবের প্রচার শুরু হয় আট নাম্বার ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী সৈকত চ্যাটার্জীর হয়ে প্রচার দিয়ে। এরপর আর বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডেও প্রচার করেন তিনি। ঢাক বাজিয়ে উৎসবের আমেজে চলে প্রচার।

গৌতম দেব বলেন,”খাওয়ার জন্য আধ ঘন্টা সময় বাদে সারাদিন প্রচার করবেন জলপাইগুড়ির বিভিন্ন ওয়ার্ডে। জলপাইগুড়ি তৃণমূলের শহর মানুষ পক্ষে ভোট দেবে। শিলিগুড়ি মত শহরে রেকর্ড করেছে তৃণমূল। জলপাইগুড়ি শহরের পুরভোট বিরোধী শূন্য হবে।

ভোটের আগের শেষ রবিবার প্রচারে ঝড় তুললেন সিপিআই(এম) প্রার্থীরাও। রবিবার সকালে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বামফ্রন্টের সিপিআই(এম) প্রার্থী শুভম সাহার সমর্থনে ঢাক নিয়ে বর্নাঢ্য পদযাত্রা সম্পূর্ণ ওয়ার্ড পরিক্রমা করে, পদযাত্রায় প্রার্থী শুভম সাহার সমর্থনে পা মেলান পার্টির জেলা সম্পাদক সলিল আচার্য, বিপ্লব ঝা, সুব্রত চক্রবর্তী, প্রভাকর সরকার সহ অন্যান্যরা।

অন্যদিকে শহরের প্রাণকেন্দ্র ৬ নাম্বার ওয়ার্ডে এবারে বামফ্রন্টের সিপিআইএম প্রার্থী শুভেন্দু সাহা বাড়ি বাড়ি প্রচার এ গিয়ে ভালই সাড়া পাচ্ছেন বলে জানালেন। তিনি বলেন, ওয়ার্ড এর প্রাক্তন কাউন্সিলর দীর্ঘদিন এলাকার মানুষের সাথে যোগাযোগ রাখেননি। ওয়ার্ডে বাড়ির আবর্জনা নিষ্কাশন থেকে শুরু করে জঞ্জাল অপসারণ সবেতেই সমস্যা রয়েছে। সমস্যা রয়েছে জল নিকাশি ব্যবস্থার, ওয়ার্ডে একতলা বাড়ি থেকে ফ্ল্যাট বাড়ি কোথাও পরিমাণ মতন জল সরবরাহ হচ্ছে না। যদিওবা জল পাওয়া যাচ্ছে সে জল অপরিষ্কার, সামান্য বৃষ্টিতে কদমতলা কামারপাড়া ডিবিসি রোড এলাকায় জল দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। প্রচারে বেরিয়ে ভালই সাড়া পাচ্ছেন বলে জানালেন তিনি। এছাড়াও শহরের সবকটি বাড়ি ওয়ার্ডে সকাল থেকে বাড়ি বাড়ি প্রচারে অংশগ্রহণ করেন বামফ্রন্ট প্রার্থীরা।

পাশাপাশি সিপিএমের নির্বাচনী কার্যালয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি লাগানোকে কেন্দ্র করে দুই দলের অভিযোগ ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়ায় শহরে।

এদিন জলপাইগুড়ি শহরের নয় নম্বর ওয়ার্ডে একটি দোকান ঘর যাকে ওই ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী প্রদীপ দে নিজেদের নির্বাচনী কার্যালয় বলে দাবি করে বলেন, শনিবার রাতে কে বা কারা দলীয় পতাকা ফেলে দিয়ে ঘরটির ঝাঁপে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি ছবি সহ পোস্টার লাগিয়ে কার্যত দখল করে নিয়েছে। তিনি আরো বলেন, এই ঘরটি এর আগেও সিপিএম দলের কাজের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে, এবারেও দলীয় পতাকা লাগানো ছিল। তারা বিষয়টি নিয়ে পুলিশ ও নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানাবেন বলেও বলেন প্রদীপ বাবু।

অপরদিকে সদ্য সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া এবং ৯ নং ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী প্রমোদ মন্ডল বলেন, আমি পূর্বে যে দলে ছিলাম, সেই সময় ওই দোকান ঘরটির মালিক আমাকে ঘরটি ব্যবহার করার জন্য দিয়ে ছিলেন এবং ঐ ঘরের তালা চাবিও আমারই কেনা। তাই এখন এই সব অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে জানান প্রমোদ বাবু।