অনলাইন শেয়ার বিনিয়োগের টোপে ২০ লক্ষের প্রতারণা! মুর্শিদাবাদ থেকে ধৃত ‘এজেন্ট’ মাসুদ; তদন্তে সাইবার পুলিশ

জলপাইগুড়ি : জলপাইগুড়ি শহরের বাসিন্দা শুভ্রজিৎ দে-র অনলাইনে শেয়ারে লগ্নি করার আশায় ২০ লক্ষ ৬৩ হাজার টাকা খোয়ানোর ঘটনায় বড়সড় সাইবার প্রতারণা চক্রের হদিস পেল জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশ। এই চক্রের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়া থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে মাসুদ হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে।

Online share investment scam of Rs 20 lakh! 'Agent' Masood arrested from Murshidabad; Cyber Police investigating

শনিবার জলপাইগুড়ি সাইবার থানায় আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) শৌভনিক মুখোপাধ্যায় জানান, ২০২৪ সালের ৬ অক্টোবর আদরপাড়ার বাসিন্দা শুভ্রজিৎ দে লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে তিনি জানান, ফেসবুকে একটি লিঙ্কের মাধ্যমে তিনি দুটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হন, যেগুলি অনলাইনে শেয়ার ট্রেডিংয়ের লাভের প্রলোভন দেখিয়ে চালিত হত। প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু অঙ্ক ফেরত পাওয়ায় বিশ্বাস জন্মায় তাঁর। এরপর ধাপে ধাপে প্রায় ২০ লক্ষ টাকারও বেশি তিনি বিনিয়োগ করেন। পরে “উইথড্রয়াল চার্জ”-এর নামে আবারও বড় অঙ্কের টাকা পাঠাতে বাধ্য হন এবং শেষপর্যন্ত বুঝতে পারেন তিনি প্রতারিত হয়েছেন।

ঘটনার তদন্তে নামে জলপাইগুড়ি সাইবার থানার বিশেষ তদন্তকারী দল। প্রযুক্তির সহায়তায় মাসুদের অবস্থান চিহ্নিত করে মুর্শিদাবাদে হানা দিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযুক্তের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে দুটি ল্যাপটপ, দুটি মোবাইল, সোয়াইপ মেশিন, একাধিক আধার কার্ড, ব্যাঙ্ক একাউন্ট খোলার ফর্ম, নোটারি ডকুমেন্ট, এবং সাধারণ মানুষের ব্যাঙ্কের পাশবুক। মাসুদের অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ৫ লক্ষ ৮৩ হাজার টাকা ইতিমধ্যেই আটক করেছে পুলিশ।

পুলিশের দাবি, মাসুদ শুধুমাত্র প্রতারণায় যুক্ত একজন নয়, সে একটি বড়সড় আন্তর্জাতিক সাইবার প্রতারণা চক্রের স্থানীয় এজেন্ট। তদন্তে উঠে এসেছে, প্রতারণায় ব্যবহৃত হোয়াটসঅ্যাপ কলের আইপি অ্যাড্রেস ছিল কম্বোডিয়ার। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, এই চক্রটি কম্বোডিয়া থেকে পরিচালিত হচ্ছে এবং মাসুদ তাদের হয়ে ভারতে অ্যাকাউন্ট খোলার কাজ করত।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শৌভনিক মুখোপাধ্যায় বলেন, “এটি একটি ক্লাসিক সাইবার ক্রাইম যেখানে প্রথমে আস্থা তৈরি করে সাধারণ মানুষকে জালে ফেলা হয়। তারপর ধাপে ধাপে বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়। নাগরিকদের সতর্ক হতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়া বা হোয়াটসঅ্যাপে আসা অচেনা লিঙ্কে ক্লিক করা, সন্দেহজনক ইনভেস্টমেন্ট স্কিমে টাকা দেওয়া থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে।”

জানা গেছে, মাসুদের বিরুদ্ধে মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন থানাতেও একাধিক সাইবার প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে তাকে জলপাইগুড়ি আদালতে তোলা হলে বিচারক পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। তদন্তকারীরা এখন মাসুদের জেরা করে এই প্রতারণা চক্রের মূল মাথাদের সন্ধানে তৎপর।

সাইবার পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এই প্রতারণা চক্রে আরও একাধিক ব্যক্তি জড়িত, এবং খুব শীঘ্রই আরও ধরপাকড়ের সম্ভাবনা রয়েছে। সাইবার অপরাধ রুখতে সাধারণ মানুষকে আরও বেশি সতর্ক এবং সচেতন হওয়ার বার্তাও দিয়েছেন প্রশাসনের আধিকারিকরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *