পিনাকী রঞ্জন পাল
‘রমাকান্ত কামার’- নামটাকে যদি পেছন থেকে পড়া যায় তবে কি দাঁড়াবে ? কি আবার ‘রমাকান্ত কামার’। ঠিক এমনিভাবেই যদি ‘শ্রমিক মিশ্র’ শব্দটাকে শেষের থেকে পড়া যায় তাতেও শব্দটা একই থাকে। ঠিক এই ধরনের শব্দ বা বাক্যগুলিকে বলা হয় ‘প্যালিনড্রোম’ (Palindrome)। ইংরেজি ‘প্যালিনড্রোম’ শব্দটা এসেছে গ্রিক শব্দ ‘প্যালিনড্রোমোস থেকে। প্যালিনড্রোম-এর বাংলা অর্থ হল ‘দ্বিমুখী’ বা ‘দুমুখো’ শব্দ। প্যালিনড্রোমকে সংজ্ঞা করে লিখলে এরকমই বলতে হবে যে, শব্দ-বাক্য পদ্য-গদ্য যা প্রথম বর্ণ থেকে শেষ বর্ণ আর শেষ বর্ণ থেকে প্রথমে পড়লে লিখলে বললে একই শব্দের চেহারায় দাঁড়িয়ে থাকবে অথচ অর্থের হেরফের ঘটবে না। তাকেই বলা হবে প্যালিনড্রোম। উপরের ‘রমাকান্ত কামার’ বা ‘শ্রমিক মিশ্র’ নাম দুটোকে যথাক্রমে পদবির ‘র’ আর ‘শ্র’ থেকে উলটোদিকে পড়ে আসলে আমরা পেয়ে যাই আগের ‘রমাকান্ত কামার’ ও ‘শ্রমিক মিশ্র’কেই। অবশ্য একটা শর্ত আছে এখানে, সেই শর্তটা হল -প্যালিনড্রোমে ছেদ-যতি বা বিরাম নেই।

কি ব্যাপারটা দারুণ মজার তাই না? এরকমই সুবল বসু, সদাই দাস, রমা কুমার, রাবেয়া বেরা, হারান রাহা, হাসান সাহা, লকখী কল, শীতু শী, নিমাই মানি, গনা নাগ, দেবু দে এগুলো সবই প্যালিনড্রোম নাম – পদবি। কিংবা লিলি, মিমি, বিবি, তুতু, মলম, নতুন, নয়ন, সরস, দরদ, কনক, জলজ, বাহবা, সমাস, কালকা, কারেকা- সবই প্যালিনড্রোম শব্দ। ইংরেজি প্যালিনড্রোম শব্দ Peep, Refer, Level, Noon, Madam, Rotator, Eye, Eve, Tit, Tat, Ewe, Malayalam।
আমাদের পারস্পরিক সম্পর্কের মধ্যেও আছে প্যালিনড্রোম। যেমন, -মামা, বাবা, কাকা, দাদা, দিদি, মাসিমা। শুধু শব্দই নয়, প্যালিনড্রোম বাক্যও হয়। যেমন গোরা সহিস রাগো। সাহস নাজায় জানা সহসা। কহ কুকথা থাক কুহক। সারস সর রস সহসা। রথের রশি টান নটা শির রথের। ইংরেজি প্যালিনড্রোম বাক্য-A man a plan a canal panama. Able was I ere I saw Elba.
শুধু শব্দ বা বাক্যই নয়, সংখ্যাও হয় প্যালিনড্রোম। যেমন ১৮৮১, ১৯৯১, ২০০২, ২২, ১০১, ৫০৫, ১৩৩১।
যারা প্যালিনড্রোম বাক্য তৈরি করে তাদের বলে প্যালিনড্রোমিস্ট। কত শব্দ, কত বৰ্ণ, কত অক্ষর-যা ভেবে ভেবে একের পিঠে আরেককে জুড়ে তৈরি হতে পারে ভয়ংকর সব প্যালিনড্রোম, যা পড়ে সকলে হাসবে। সবাই হয়ে উঠতে পারে একজন প্যালিনড্রোমিস্ট। আজ থেকেই তাহলে শুরু করে দেওয়া যাক ভাবা, আর ভাবা হলেই লিখে ফেলা হোক খাতায়।