পঞ্চমুখী হনুমান মন্দির – নেতাজি ও জলপাইগুড়ি

লেখক পঙ্কজ সেন

উত্তরবঙ্গের তিস্তাপারের শহর জলপাইগুড়িতে নেতাজি পাড়া বাসস্ট্যান্ডের কর্মব্যস্ত এলাকা পেরিয়ে জলপাইগুড়ি-শিলিগুড়ি রুটের মূল রাস্তার উপরেই অবস্থিত মাসকলাইবাড়ি সংলগ্ন বিখ্যাত শ্রী শ্রী পঞ্চমুখী হনুমান মন্দির। ১৯২৭ সালে এই মন্দিরটি গড়ে তোলেন বিহার থেকে আগত স্বামী শ্রীকরপাত্রীজি মহারাজ নামক এক নাঙ্গা সন্ন্যাসী।নেতাজির পরম ভক্ত এই সন্ন্যাসী (সাধু) কলা গাছের শুকনো খোলা নেঙটির মতো করে পড়ে হনুমানজির আরাধনা করতেন।

তারই একান্ত আগ্রহে শৌর্যের প্রতীক সুভাষচন্দ্রের কাঠের মূর্তি স্থাপন করে প্রতিদিন তার পুজো করতে থাকেন। মন্দিরের ভেতরে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ছাড়া গান্ধীজীর প্রতিকৃতিও রয়েছে। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতি তার গভীর শ্রদ্ধা ছিল। সেই জন্য মন্দিরে নেতাজির মূর্তিকে তিনি দেবতার আসনে স্থান দেন। জীবদ্দশাতে নেতাজীর উদ্দেশ্যে রোজ ভোগ নিবেদন করতেন। পরবর্তীতে আশির দশকে তিনি মারা গেলে অন্য পূজারীরা পূর্ব ধারা বজায় রেখে পঞ্চমুখী হনুমানের সাথে নেতাজি সুভাষচন্দ্রকে পূজা করার পাশাপাশি প্রতিদিন ভোগ নিবেদন করে থাকেন। মন্দিরের পূজা অর্চনার কাজে নিযুক্ত কর্মীদের মতে, দুপুরে নেতাজিকে অন্নভোগ, সন্ধ্যায় ফল ভোগ এবং রাতে দুধ অথবা ছানা দেওয়া হয়।

উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য নেতাজী ভক্তরা প্রায় প্রতিদিনই এই মন্দির দর্শন করতে আসেন। আশ্চর্যের বিষয় হলো, ভারতবর্ষের কোনও মন্দিরেই নেতাজির নিত্য পূজা হয় না। একমাত্র জলপাইগুড়ি শহরের এই মন্দিরেই তার উল্লেখযোগ্য ব্যাতিক্রম। যদিও মন্দিরের প্রধান আরাধ্য দেবতা হলেন পঞ্চমুখী হনুমান। নিয়মিত সেখানে পূজিত হন বজরংবলী। মন্দিরের ভিতরে দেওয়াল জুড়ে অবস্থান করছেন রাধা-কৃষ্ণ, রাম-সীতা, হর-গৌরিসহ আরো অনেক দেবদেবী। প্রথমে মন্দিরটি এক চালার ছিল। পরবর্তীতে ভক্তদের দানে বর্তমান মন্দিরটি গড়ে ওঠে।

মন্দিরের ভেতর নেতাজী সুভাষের মূর্তিটি ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী (কার্যকাল :১৯৪৮-১৯৬২) তথা পশ্চিম বাংলার রূপকার ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায়ের মূর্তিও রয়েছে। নেতাজী সুভাষের মত তিনিও একই ভাবে ভক্তদের কাছে পূজিত হন। উল্লেখ্য যে,ডঃ বিধান চন্দ্র রায় এর মূর্তিটি শহরের কোনও এক স্থানে প্রতিষ্ঠা করার জন্য নির্মিত হয়েছিল। কিন্তু ঘটনাচক্রে এই মূর্তিটি মন্দির প্রাঙ্গনেই স্থান পায়। পরবর্তীতে মূর্তিটি মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে আর সরানো হয়নি। যদিও মন্দিরটির সংস্কারের সময় ডঃ বিধান চন্দ্র রায়ের মূর্তিটির অবস্থান বদল হয়েছে।

২০১৯ সালের আগস্ট মাসে জনপ্রিয় বাংলা টেলিভিশন অনুষ্ঠান ‘দাদাগিরি’র মঞ্চে সৌরভ গাঙ্গুলীর মুখে জলপাইগুড়ি শহরের এই ঐতিহ্যমন্ডিত মন্দিরের প্রশ্ন উঠে আসে। যা তার পরিচিতি আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়।

(তথ্যে সামান্য ভুল ত্রুটি হতে পারে। পাঠকদের কাছে অনুরোধ রইল কমেন্ট বক্সে তাদের মূল্যবান মন্তব্য তুলে ধরার)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *