করোনা কাটিয়ে মেতে উঠলো রথযাত্রায় নবদ্বীপ সামিল দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ

অরুণ কুমার : করোনার অতিমারির রেশ কাটিয়ে এবারের রথযাত্রায় নদীয়া, নবদ্বীপ, মায়াপুর সহ সামিল বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। এ যেন রথযাত্রা উপলক্ষে এবারে নদীয়াবাসীর বাড়তি উন্মাদনা। করোনার কারণে বিগত দুবছরে নিয়ম রক্ষা হয়েছিল বিভিন্ন মঠ মন্দিরে। ধর্মের পীঠস্থান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মস্থানের নদীয়াবাসীর তাই রথযাত্রা এবার বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস নবদ্বীপ সহ সমগ্র জেলা জুড়ে।

এ বিষয়ে উল্লেখ করতে হয় যে, এর আগে রথের আনন্দ সীমাবদ্ধ ছিল নদীয়ার মধ্যেই। কিন্তু এবছর সাংসদ জগন্নাথ সরকারের প্রচেষ্টায় শিয়ালদহ কৃষ্ণনগর এবং হাওড়া নবদ্বীপ ধাম চার জোড়া লোকাল ট্রেন বন্দোবস্ত করার কারণে বিভিন্ন জেলা থেকে দর্শনার্থীদের আসার ঢল নেমেছে।

এই রথ উৎসব কে কেন্দ্র করে নদীয়ার বিভিন্ন প্রান্তে জগন্নাথ দেবের আরাধনায় মেতে ওঠে হাজার হাজার ভক্তবৃন্দ। ঠিক তেমনি শান্তিপুর চর সারাগর গবার চর এলাকায় এবছর প্রথম রথ উৎসব উপলক্ষে মেতে ওঠেছে এলাকারই অধিবাসীবৃন্দ।

নদীয়ার আরেক অন্যভূমি তারাপীঠ। করোনা মহামারি কাটিয়ে দু বছর পর ফের রথে অধিষ্ঠাত্রী হলেন মা তারা। অতিমারি কাটিয়ে তাই এবার দেখা গেলো তারাপীঠে মা তারার রথ যাত্রা দেখতে উপচে পড়া মানুষের ভিড়। বহু মানুষ পরিবারের মঙ্গল কামনায় হাজার হাজার যাত্রীদের মধ্যে মণ্ডা, মিঠাই বিতরণ করলেন। মায়ের কাছে কামনা করলেন দেশের ভালো হোক, দশের ভালো হোক।

রথযাত্রা, লোকারণ্য, ধুমাধাম সবই আছে। রথে নেই শুধু বলরাম, সুভদ্রা ও জগন্নাথ। রথ বলতে আমরা পুরীর জগন্নাথদেবের রথকেই বুঝি। এরাজ্যের কলকাতার ইস্কন রথ, হুগলীর মাহেশ ও মহিষাদলেও প্রাচীন রথযাত্রা ধুমধামের সঙ্গে পালিত হয়। সেখানেও বলরাম, সুভদ্রা ও জগন্নাথ রথে পরিক্রমা করেন। ব্যতিক্রম শুধু তারাপীঠের রথে। কারণ তারাপীঠের রথে অধিষ্ঠাত্রী মা তারা।

তারাপীঠের রথযাত্রা কবে থেকে শুরু হয়েছিল তার দিনক্ষণ এখন আর তেমন কারও মনে নেই। তবে মন্দিরের সেবাইত, সাহিত্যিক প্রবোধ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা বই থেকে জানা যায়, ‘তারাপীঠের বিখ্যাত সাধক দ্বিতীয় আনন্দনাথ তারাপীঠের রথের প্রচলন করেছিলেন। সেই সময় একটি পিতলের রথ তৈরি করা হয়েছিল। সেই রথেই আজও মা তারা কে বসিয়ে ঘোরানো হয়। তারা মায়ের একটি রথ ঘর তৈরি করা হয়। যুক্তফ্রন্টের আমলে ওই রথ ঘরের উদ্বোধন করেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অজয় মুখোপাধ্যায়। সারা বছর ওই রথ ঘরেই পিতলের রথকে সংরক্ষিত রাখা হয়। রথ ঘরটি নির্মাণ করেন জনৈক মা তারার ভক্ত আশালতা সাধু খাঁ’।

করোনা অতিমারির কারণে বছর দুয়েক বন্ধ ছিল রথ যাত্রা। করোনা অতিমারি কমতেই প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে তারাপীঠের প্রাচীন রথযাত্রা শুরু হল এবার। প্রাচীন রীতি মেনে শুক্রবার বিকেলে মা তারাকে ওই রথে বসিয়ে ঘোরানো হল তারাপীঠে। বিকেলে মা তারাকে মূল মন্দির থেকে বের করে রথে বসানো হয়। তারপরই হাজার হাজার পূর্ণার্থী রথের রশিতে টান দেন। তারামাতা সেবাইত সংঘের সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায়, সম্পাদক ধ্রুব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “রথ কবে থেকে শুরু হয়েছিল তার দিনক্ষণ এখন আর বলা সম্ভব নয়। তবে প্রতি বছর মা তারাকে রথে চড়িয়ে তারাপীঠ প্রদক্ষিণ করিয়ে সন্ধ্যা আরতির আগে মূল মন্দিরে বসানো হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

গত দুই বছর করোনা অতিমারির কারণে রথযাত্রা বন্ধ করা হয়েছিল। এবার করোনা কিছুটা কমে যাওয়ায় রথযাত্রা শুরু করা হল। এই রথ থেকে ভক্তদের উদ্দেশে প্যাড়া, বাতাসা, মণ্ডা বিতরন করা হয়। সেই প্রসাদ পেতে ভক্তদের মধ্যে হুটোপুটি পড়ে যায়। কারণ এই প্রসাদ গ্রহণ করলে পুনর্জন্ম হয় না বলে কথিত আছে। সেই বিশ্বাসে এবারও হাজার হাজার ভক্ত ভিড় জমিয়েছিলেন তারাপীঠ। তাদের দাবি এই রথ দেশের অন্য কোথাও দেখা যায় না।

এবারের রথযাত্রা উপলক্ষে সমগ্র নদীয়া জেলা যেন মেতে উঠেছে এক অনাবিল আনন্দে। নদী সড়ক পথ ও রেলপথে মাধ্যমে প্রচুর মানুষ সমবেত হয়েছেন বিভিন্ন জায়গায় এই রথযাত্রা উপলক্ষে। সামিল হয়েছেন দেশ-বিদেশের অনেক দর্শনার্থী পর্যটক। রথযাত্রা মাত্রা পেয়েছে আন্তর্জাতিক উৎসবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *