পেটকাটি কালী ও জলপাইগুড়ি

লেখক পঙ্কজ সেন

জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ি ব্লকের অন্তর্গত দোমহনী কাঠালবাড়ি (ব্যাংকান্দি) গ্রামের কলাখাওয়া নদীর তীরে অবস্থিত মন্দিরে কষ্টিপাথরের মূর্তিটি পরিচিত “পেটকাটি মাতা” নামে। ডক্টর চারুচন্দ্র সান্যাল তার লিখিত গ্রন্থে এই দেবীকে “দেবী চামুণ্ডা” বলে উল্লেখ করেছেন। আবার কারও মতে, ইহা “ভদ্রেশ্বরী দেবী”। মূর্তিটির উচ্চতা সাড়ে চার ফুট এবং চওড়ায় সাড়ে সাত ইঞ্চি। কষ্টিপাথরের এই মূর্তিটি এলাকায় দেবী কালীরূপে পূজিত হন। দশ হাত বিশিষ্ট প্রাচীন মূর্তিটির খননের সময় তিনটি হাত (দুটি ডান হাত একটি বাম হাত) ভেঙে গেলেও অবশ্য অক্ষত রয়েছে তার বাকি হাতগুলি। প্রতিটি হাতে শোভা পাচ্ছে শঙ্খ, চক্র, গদা, ঘন্টা, নর মুন্ড। সেই সঙ্গে একটি বাদ্যযন্ত্র বীনা রয়েছে।

মূর্তিটির মাথার উপরের দুই দিকে রয়েছে হাতির লম্বা শুঁড়। গলায় শোভা পাচ্ছে নরমুন্ডমালা। দেবী সর্পালঙ্কারে ভূষিতা। মাথায় রয়েছে সাপের মুকুট। কানের অলংকারটিও সাপের। কঙ্কালসার শরীরে জড়ানো আছে সাপের মালা। নাক ভাঙ্গা মূর্তিটির উদরে একটি বড় গহ্বর হয়েছে এবং সেখানে একটি কাঁকড়া বিছে বা কেন্নো লম্বভাবে দণ্ডায়মান রয়েছে। অনুমান করা হয়, মূর্তিটি উদ্ধারের সময় কোদালের আঘাতে তার পেট কেটে যায়। সম্ভবত এই কারণেই দেবীর নাম পেটকাটি মাতা। দেবীর দুটি চোখ বিস্ফারিত হলেও কপালে তৃতীয় নয়ন রয়েছে। পদ্মের উপর আসীন দেবীর পায়ের নিচে একটি ছোট্ট নারীমূর্তি অর্ধশায়িত অবস্থায় রয়েছে। সেই সাথে দেবীর একপাশে শেয়াল এবং অন্যপাশে পেঁচা অবস্থান করছে।

১৯৪০ সালে কষ্টিপাথরের এই মূর্তিটি এই এলাকারই প্রয়াত সন্তেশ্বর রায় এবং তার দুই ভাই মিলে কোদাল দিয়ে জমির জঙ্গল পরিষ্কার করতে গিয়ে সর্বপ্রথম মাটির নীচে মূর্তিটির সন্ধান পান। মূর্তিটির ভাস্কর্য রীতি অনেকটা পাল যুগের সময়কার শিল্পকলার মতন। পরবর্তীতে গ্রামের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি গঠন করে ওই স্থানে একটি মন্দির গড়ে তোলার জন্য কিছু ব্যক্তি জমি দান করেন। সেখানেই উদ্ধার করা মূর্তিটিকে একটি কুটির বানিয়ে প্রতিষ্ঠা করে তার পুজো অর্চনা শুরু করা হয়। মন্দিরে দেবীর নিত্য পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এলাকার শর্মা পরিবারের দায়িত্বেই রয়েছে মন্দিরের নিত্য পূজার ভার। বর্তমান পুরোহিত বাবলু দেব শর্মা মন্দিরে পূজার দায়িত্বে রয়েছেন। পূর্বে কেশব দেব শর্মা এবং হেমচন্দ্র শর্মাও অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে এই মন্দিরে পুজো করেছিলেন। প্রতিবছর দীপাবলীর অমাবস্যার রাতে এখানে বাৎসরিক পূজা হয়। পেটকাটি মা আদপে কালী মূর্তি হলেও একে ধুমাবতী চন্ডীকালী হিসেবেই কালী পূজার সময় পুজো করা হয়। পূজার পরদিন সন্ধ্যায় এখানে তিন দিনের একটি মেলা বসে। প্রতি বছর পুজোর সময় আসাম, উত্তরবঙ্গ সহ প্রতিবেশী রাষ্ট্র নেপাল ও ভুটান থেকেও বহু মানুষ এই মন্দিরে পুজো দিতে আসেন। অত্যন্ত জাগ্রত এই দেবী মূর্তির বয়স কত তা আজও অজানা। দেবীর নামেই এই এলাকাটিও “পেটকাটি কলোনি” বা “পেটকাটি ডাঙ্গা” নামে পরিচিত। এ ছাড়াও মূল মন্দিরের পাশে একটা ছোট নাটমন্দিরও রয়েছে। ভক্তেরা প্রতিদিন মন্দিরে এসে ধূপকাঠি ও মোমবাতি জ্বালিয়ে দেন।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার : গুগল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *