অরুণ কুমার : স্বনামধন্য চিকিৎসক তথা রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ডা: বিধান চন্দ্র রায়ের একই দিনে জন্ম এবং মৃত্যু দিবসেই পালিত হয় ডক্টর্স ডে। তবে অন্যান্য বছর যেমন তেমন গত দুবছর করোনা পরিস্থিতির কারণে এই দিনে, চিকিৎসক থেকে নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী সকলেরই প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে জরূরীকালীন স্বাস্থ্য পরিষেবা দিয়েছেন। অনেকে মারাও গেছেন। লকডাউন এর পর থেকে স্বাভাবিক হয়ে ওঠা জীবনযাত্রার ব্যস্ততায় এবং লাগামহীন উচ্ছ্বাসে ভুলেছেন স্বাস্থ্যবিধি।
আর তার ফলেই হয়তো বেশ খানিকটা করোনা গ্রাফ এক ধাক্কায় পৌঁছেছে চিন্তার শিখরে। রাজনৈতিক সভা সমিতি, আচার অনুষ্ঠান, সামাজিক বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সকলের অলক্ষে ক্রমবর্ধমান করোনার গ্রাফ।
আমাদের দেশে ও রাজের চিত্রটা হল ঠিক এইরকম : সারাদেশে যদি দেখা যায় এ পর্যন্ত ৪ কোটি ৩৫ লক্ষ মানুষ কবিতা আক্রান্ত হয়েছেন , মৃত্যু হয়েছে ৫ লক্ষ ২৫ হাজার মানুষের।আক্রান্তের সংখ্যা কম নয়। পশ্চিমবঙ্গের চিত্রটা হল ২০ লক্ষ ৩০ হাজার আক্রান্ত হয়েছেন, মৃত্যু হয়েছে ২১,২১৮ জনের। সারাদেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আমাদের এই রাজ্যেও সুস্থ হয়ে ওঠার রোগী সংখ্যা ৯৮ শতাংশ।
পশ্চিম বঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পদস্থ আধিকারিক ডিরেক্টর এর সিদ্ধার্থ নিয়োগীর মতে, এই রাজ্যে কোভিড নতুন ভাইরেন্ট ওমিক্রন বিএ -৪ এবং বিএ-৫ সন্ধান পাওয়া গিয়েছে, তবু এ বিষয়ে চিন্তার কিছু নেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার সব রকম প্রচেষ্টা রয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তরের।
এতো গেল সরকারি ভাষ্য,এবার আমাদের একটু বাস্তব পরিস্থিতির দিকে একটু চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক। একদিকে যেমন সাধারণ মানুষের সচেতনতা কমেছে, ঠিক তেমনি প্রশাসনিক ঔদাসীনতাও দেখা দিয়েছে। কোভিড পরিস্থিতিতে মানুষ মাস্ক স্যানিটাইজার এবং সামাজিক দূরত্ব সেগুলো মেনে চলতেন অধিকাংশ ক্ষেত্রে। কিন্তু এখন সেই বিধি নিষেধ থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে সচেতনতা বোধের অভাব আবার দেখা দেওয়ার পরে এই করোনার বাড়বাড়ন্ত দেখা দিয়েছে বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অভিমত।
আজকের এই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিনে আমরা কথা বলার চেষ্টা করেছিলাম বেশ কয়েকজন দায়িত্বপূর্ণ পদাধিকারী যারা চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন , তাদের সাথে আজকের এই দিনটি সম্পর্কে অভিমত জানার চেষ্টা করেছিলাম । নাম না প্রকাশের শর্তে তাদের অধিকাংশেরই একই বক্তব্য,
আমাদেরকে পরিষেবা দিয়ে যেতে হবে, সচেতনতা বোধ জাগিয়ে তুলতে হবে। তবে ডাক্তারদের একটা বড় অংশেরই অভিমত হলো তারা তাদের কাজে সন্তুষ্ট নয়। কারণও নেই রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট , যা দিয়ে রোগীকে আরো ভালো স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়া যায় সেদিকে গুরুত্ব দেওয়া দরকার।
সেখানে অন্য আর পাঁচটা দিনের থেকেও এই দিনটিতে চিকিৎসকরা রয়েছেন বেশি ব্যস্ত। আজকের দিনে বিভিন্ন হাসপাতালের সুপারেনটেন্ড সহ অন্যান্য ডাক্তার স্বাস্থ্যকর্মী নার্সদের নিয়ে ডা: বিধান চন্দ্র রায়ের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন। সকল ক্ষেত্রেই ডাক্তারদের বক্তব্য সকলকে আবারো সচেতন হতে হবে।
ভ্যাকসিন নিয়ে নেওয়া মানেই সম্পূর্ণ নিরাপদ এমনটা নয়, মাস্ক এবং স্যানিটাইজার এখনো অত্যান্ত প্রয়োজনীয় জনবহুল এলাকায়। রোগী সুস্থ থাকলে ডাক্তাররা খুশি হন সবচেয়ে বেশি, তাই তাদের সাথে সকল স্বাস্থ্য কর্মীদের সাথে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান আজকের এই বিশেষ দিনে।
এতো গেল একটা দিক পয়লা জুলাই প্রবাদ-পশ্চিম ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায়ের জন্মদিন যা চিকিৎসক দিবস রূপে পালিত হয়ে থাকে ঠিকই। কিন্তু কতগুলো প্রশ্ন এই দিনটি উপলক্ষে উঠে আসে তা হলো এই যে হাসপাতাল নার্সিংহোম চিকিৎসা কেন্দ্র এখানে কেউই খুশি হয়ে আনন্দ করতে করতে যায় না ,এখানে আসে যন্ত্রনা,ব্যথা কষ্ট নিয়ে যা থেকে তারা উপশম পেতে পারে। কিন্তু যখন তারা এই সমস্ত জায়গায় আসে বিশেষ করে রোগী সেই সঙ্গে তাদের আত্মীয়-স্বজন তারা প্রাথমিকভাবে আশা করে একটু ভালো মার্জিত ব্যবহার, পরিষেবা ও তারপর প্রয়োজন অনুসারী যথোপযুক্ত চিকিৎসা।
এখানেই সব থেকে বড় সার্থকতা চিকিৎসক এবং রোগী ও তার পরিবারের পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে। কিন্তু সমস্যাটা তৈরি হচ্ছে প্রথম থেকেই। হাসপাতাল নার্সিংহোম চিকিৎসা কেন্দ্র এখানে রোগী ও তার পরিবারবর্গ যখন যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় অনধিকাম্য অভিজ্ঞতার শিকার কার হন তারা। চিকিৎসা কেন্দ্র হাসপাতাল নার্সিংহোম গুলিতে একশ্রেণীর ফড়ে দালালদের দাপটে বিপর্যস্ত হয় স্বাস্থ্যপরিসেবা। রোগী ও রোগীদের আত্মীয়-স্বজন যার শিকার হন পরবর্তীতে সেটা পরিণত হয় অপ্রতিকর ঘটনায়। যা কাম্য নয়। এক্ষেত্রে প্রয়োজন একদিকে রোগী সচেতনতা বোধের, অপরদিকে ডাক্তার নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মীদেরও ক্ষেত্রেও প্রয়োজন একটুখানি সহানুভূতি, একটুখানি মানবিকতা বোধ, রোগীর প্রতি যত্ন, এই ভাবেই বর্তমান পরিকাঠামোর মধ্য দিয়ে কিছুটা রোগী পরিষেবার মান উন্নত করা যায় । সরকার দায়িত্বপূর্ণ পদে যারা রয়েছেন সরকারি বেসরকারি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা তারা বিষয়টিকে যদি মাথায় রাখেন তাহলে চিকিৎসক দিবস দিনটি পালনের সার্থকতা লাভ করবে।