কবিতা শুধু কিছু শব্দের বিন্যাস নয়, এটি হৃদয়ের ভাষা, সমাজের প্রতিচ্ছবি, সময়ের সাক্ষী। আজ ২১ মার্চ বিশ্ব কবিতা দিবস উপলক্ষে “জলপাইগুড়ি নিউজ” এক অনন্য কবিতার আসর আয়োজন করেছে। এখানে বিভিন্ন কবির রচনা আপনাদের সামনে তুলে ধরা হল, যেখানে ভালোবাসা, প্রতিবাদ, স্বপ্ন, সংগ্রাম—সমস্ত অনুভূতির প্রতিধ্বনি শোনা যাবে।
সময়ের পরিবর্তনে কবিতার ভাষা বদলেছে, কিন্তু তার প্রভাব অটুট। এই উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা কাব্যপ্রেমীদের জন্য এক মঞ্চ তৈরি করতে চাই, যেখানে নতুন ও অভিজ্ঞ কবিদের সৃষ্টিসম্ভার পাঠকের হৃদয়ে জায়গা করে নেবে। আসুন, কবিতার আলোয় উদযাপন করি বিশ্ব কবিতা দিবস!
আরো পড়ুন : ভয়ের গল্প : শ্মশানের পিশাচ
১) কবিতা : “কবিতা দিবসের ডাক”
কবি : পিনাকী রঞ্জন পাল
আজ কবিতার দিন,
সকালবেলায় ছড়ানো রোদের গায়ে
লেখা হয়েছে একটা লাইন—
“ভালোবাসা কি কেবল শব্দের কাঁটাতার?”
রাস্তার ধুলো আজ গুনগুন করছে,
কেউ একজন হেঁটে যাচ্ছে ছন্দ বুকে নিয়ে,
তার চোখে নীল-কালো শব্দের ছায়া,
সে কি কবি? না পাঠকের অপেক্ষায় থাকা পাতা?
আজ কবিতার দিন,
ডাকঘরের পুরনো খামে
আজও লেগে আছে অর্ধেক লেখা কবিতা,
যা প্রাপক পায়নি,
কিংবা পেয়ে ফিরিয়ে দিয়েছে ঠিকানাহীন পথে।
বাতাসের কানে কানে কেউ বলে দিল,
“কবিতা ছাড়া কি জীবন নামে কিছু থাকে?”
আর সে-ই উড়িয়ে দিল পৃথিবীর চারদিকে—
একটা কবিতা, একটা প্রশ্ন, একটা বেঁচে থাকা।
আজ কবিতার দিন,
তুমি কি শুনতে পাচ্ছো?
শব্দেরা আজ নতুন জন্ম নেবে,
তুমি কি তাদের নাম রাখবে?
আরো পড়ুন : দোলের গল্প ;দোলের রঙে জীবন
২) কবিতা : “ভালোবাসা”
কবি : নির্মল কুমার ঘোষ
বর্ষন মুখর রাতে,
শ্রাবনের বারিধারা,
প্রচণ্ড বিদ্যুতের ঝলকানি,
বয়সের ভারে চমকিত হয়ে উঠেছি,
অজানা ভয়ের শিহরন,,,,,,,,,,,,,,,,
ঘুম চোখে পাতা,
মেলাতে পারছি না,অতীতের বিজড়িত,
না না স্মৃতি রোমন্থন মগ্ন,
শ্রাবনেই তোমার সাথে দেখা,
তুমি ছাড়া,
অন্য কোন নারী হৃদয়, পারেনি জাগাতে।
কামনা-বাসনা কিংবা ভয় -ভীতি,
আমার জগতে,
জীবন সায়াহ্নে এসে,
হিসাব মেলাতে পারছি না,
আকাশ-কুসুম ভেবেই চলেছি,
এই চলার ভাবনা কবে ?
শেষ হবে জানি না,,,,,,,,,,,,,,,।
আরো পড়ুন : গোয়েন্দা গল্প : গোয়েন্দা গৌতম ও নীলরত্নের রহস্য
৩) কবিতা : “অভিমান”
কবি : সমরেশ রায়
একদিন সব অভিমান ফুরিয়ে যাবে,
কিন্তু মনে থাকবে-
কারও চোখে জল ছিল না আপনাকে দেখার জন্য, কারও হৃদয়ে জায়গা ছিল না আপনাকে রাখার জন্য।
একদিন সব কষ্ট সয়ে নেবেন,
তবুও ভুলতে পারবেন না-
কতবার একা কেঁদেছিলেন,
কতবার নিজেকেই সান্ত্বনা দিয়েছিলেন।
একদিন হয়তো হাসবেন আগের মতো,
কিন্তু কিছু শূন্যতা থেকে যাবে চিরকাল,
যা কেউ দেখতে পাবে না,
কেউ বুঝতেও পারবে না।
আরো পড়ুন : ছোট গল্প : নীলকণ্ঠ লাইব্রেরি ও একুশের আলো
৪) কবিতা : “আসতো যদি ফিরে”
কবি : মলয় চক্রবর্তী
না থাকতো যদি ফেইসবুক
হোয়াটস্যাপ ও নেই
ফিরে যেতাম চিঠি পত্রের
দিন গুলো তে সেই।
আসতো ফিরে এসএমএস প্যাক
কল করতাম আগের মতো
অতীত যদি আসতো ফিরে
অনেক ভালোই হতো।
ডাক পিওনের পথ চেয়ে
বিকেল যখন হতো
আসবে চিঠি আমার নামে
মনে সেটাই হতো।
এসএমএসের টিং আওয়াজ
আবেগ এর মেলা
ফিরে আসুক আবার সেই
অতীতের ছোট বেলা.
আরো পড়ুন : গোয়েন্দা গল্প : রাতের আড়ালে (ভিডিও সহ)
৫) কবিতা “অনুতাপ”
কবি : নির্মাল্য ঘোষ
ভীষণ গরমে
তোমার চামড়া পোড়ার গন্ধ
আমি পাই।
ঠিক যেরকম বসন্তে এখন পাচ্ছি
তোমার অদ্ভুত সুন্দর
প্রেমের গন্ধ।
তোমার পাশে বসা মানে
শান্ত ঝিলের আস্বাদ।
যে কোনো খারাপ কাজ
প্রথমে ভালো লাগে
তারপর অনুতাপ।
শুধু তোমার প্রেমে পাগল
হবার মত খারাপ কাজ
এখনো কোনো
অনুতাপ দেয় না।
আরো পড়ুন : গোয়েন্দা গল্প : অপহৃত জাদুকর ও ইধিকার রহস্যভেদ
৬) কবিতা : “কবিতার প্রতিরোধ”
কবি : অরুনকুমার
আমার কবিতার দিকে ধেয়ে আসে
অজস্র ক্ষেপণাস্ত্র,
আমি দাঁড়িয়ে আছি নির্ভয়ে,
আমার কবিতাকে আঁকড়ে ধরে।
ওরা চায় আগুনে পোড়াতে শব্দ,
ধ্বংস করতে স্বপ্নের দিগন্ত,
কিন্তু আমার কবিতা জেগে ওঠে,
প্রতিরোধের দীপ্ত আলো হয়ে।
যতবার আঘাত আসে,
আমার কলম জন্ম দেয় নতুন সুর,
আমি লিখে দেই নিঃস্তব্ধ যন্ত্রণা,
আর তৈরি হয় প্রতিরোধের সেতু।
ওরা ভয় দেখাতে চায় বুলেট দিয়ে,
আমি উত্তর দেই কবিতার শক্তিতে,
ওরা ভুলে যায় –
শব্দ কখনো মরেনা,
শব্দেরা বেঁচে থাকে চিরকাল,
জাগিয়ে তোলে বিপ্লবের আগুন।
তাই শোনো!
ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ো না শব্দের দিকে,
কারণ আমার কবিতা
তার প্রতিশোধ নিতেই জানে!
আরো পড়ুন : কল্পবিজ্ঞানের গল্প : ডিজিটাল প্রেমের বাস্তব স্পর্শ
৭) কবিতা :”বিশ্বাস”
কবি : কুশল বর্মন
বিশ্বাস ‘শব্দে আছে জীবনের প্রত্যয়,
বিশ্বাস করো, বিশ্বাস রাখো ,ফল পাবে সুনিশ্চয়।
চোখে না দেখলেও বিশ্বাস ঈশ্বর আছে,
বিশ্বাসের হাত ধরেই আমরা পৌঁছাই তার কাছে।
যত সম্পর্ক আছে তা বিশ্বাসের হাত ধরে,
টিকিয়ে রাখতে পারবে না তা কিছুতেই জোর করে।
বিশ্বাসে থাকে ভালোবাসা, নতুবা বিফল হবে,
অবিশ্বাসের টিকে আছে কজন দেখেছো কবে?
স্বামী স্ত্রীর মাঝে আছে বিশ্বাস তাইতো তারা সুখী,
ব্যতিক্রম দেখবে যেখানে সেখানে সবাই দুঃখী।
বিশ্বাস আছে ছাত্ররা শিক্ষকের দেবে মান ,
শিক্ষক নইলে কোথায় পাবে তাদের সম্মান।
বিশ্বাস আছে বীজ
মাটি খুঁড়ে আগামী দিনে বৃক্ষ,
নইলে ধরণী মরুভূমি হবে কে ঘোচাবে সবার দুঃখ।
বিশ্বাসের ফলে মধুসূদন দাদা জুগিয়েছিলেন দই,
আমরাও তাই হবো বিশ্বাসী অবিশ্বাসী নই।
বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর
বিশ্বাস না রাখলে কাটবে জীবনের সুর।
আরো পড়ুন : গল্পের নাম: ভাইফোঁটার স্মৃতি
বি: দ্র: আমাদের এখানে আপনারাও নিজেদের লেখা প্রকাশ করতে পারেন। আপনাদের অপ্রকাশিত লেখা পাঠান 9064143627 এই whatsapp নাম্বারে, নাম, ঠিকানা ও ছবি সহ।