স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটালো রাজনীতি

রাহুল মন্ডল, মালদা, ১৯শে ফেব্রুয়ারি ২০২২ : স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটালো রাজনীতি। ঘটনাটি ঘটেছে মালদা জেলার ইংরেজবাজার পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে। ওয়ার্ডের তৃণমূল দলের প্রাক্তন কাউন্সিলার পরিতোষ চৌধুরি ও তাঁর স্ত্রী কাকলি চৌধুরীর সম্পর্কে এতটাই দূরত্ব এনেছে যে স্বামী ও স্ত্রী আলাদা আলাদা থাকছেন। দলনেত্রী তথা মমতা ব্যানার্জির আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের প্রাক্তন কাউন্সিলর পরিতোষ চৌধুরী রাজনীতির জন্য নিজের স্ত্রীর থেকে আলাদা থাকছেন। আসন্ন পুরসভা নির্বাচনে ৩ নম্বর ওয়ার্ডে পরিতোষবাবুর স্ত্রী নির্দল প্রার্থী হিসাবে দাঁড়িয়েছেন। আর সেই কারণে তিনি তার স্ত্রী কাকলি চৌধুরীর সাথে একসঙ্গে থাকছেন না।

পরিতোষ চৌধুরী

সাংবাদিকদের সামনে স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কের ভাঙ্গনের কথা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ইংরেজবাজার পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল দলের প্রাক্তন কাউন্সিলর পরিতোষ চৌধুরী ওরফে সেভেন।  তিনি বলেন, তৃনমূলের  রাজ্য নেতৃত্ব যাকে ভালো মনে করেছেন তিনি ৩ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন। কিন্তু আমার স্ত্রী এবার  নির্দল হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তার সঙ্গে আমার কোন সম্পর্ক নেই । আমি আমার বাড়ির তিনতলায় থাকি। স্ত্রী দোতলায় একাই থাকেন। আমি তৃণমূল দলকে ভালোবেসেই স্ত্রীকে পরিত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখানে  তৃণমূলের গোঁজ প্রার্থী হয়েছে আমার স্ত্রী, এরকম কোনো বিষয় নেই। আমি তৃণমূলে আছি এবং তৃণমূলেই থাকবো।

প্রচারে কাকলি চৌধুরী

উল্লেখ্য, ইংরেজবাজার পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে পুর নির্বাচনকে ঘিরে প্রথম থেকেই নানান বিতর্ক ঘুরপাক খাচ্ছিলো। এই ৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল দলের এবারের প্রার্থী হয়েছেন মনিষা সাহা কুন্ডু। গতবারের বিজয়ী তৃণমূল প্রার্থী পরিতোষ চৌধুরী দাঁড়াতে পারেন নি । কারণ এই ওয়ার্ডটি মহিলা সংরক্ষিত হয়েছে। কিন্তু পরিতোষবাবুর স্ত্রী কাকলি চৌধুরী তৃনমূলের প্রার্থী হওয়ার কথা থাকলেও অদ্ভুত ভাবে তা হয় নি। এরপরই কাকলি চৌধুরীর  নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ানোকে ঘিরে শুরু হয়েছে নানান জল্পনা। আর সেই প্রশ্নের জবাব পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের প্রাক্তন কাউন্সিলর পরিতোষ চৌধুরী।

পরিতোষ বাবু বলেন, রাজনীতিতে আমি তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শ মেনেই এতদিন চলেছি। আমি এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলাম। আমার স্ত্রীও একসময় এই ওয়ার্ড থেকে জয়ী হয়ে কাউন্সিলর হয়েছিলেন। কিন্তু এবারে এই ওয়ার্ডটি মহিলা সংরক্ষিত হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন আমার স্ত্রী নির্দলে দাঁড়ানোর পিছনে আমি নাকি দায়ী। এটা সম্পূর্ণ ভুল। দিদির জন্য আমি পরিবার ত্যাগ করেছি।  আমার স্ত্রীর সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই।কাজেই এখানে যারা অভিযোগ করেছেন তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। রাজনীতির জন্য আমি পরিবার ছাড়তেও রাজি আছি। আপাতত আমার দুই ছেলে আমার সঙ্গে থাকেন। স্ত্রী আলাদা থাকে। জেলা নেতৃত্ব আমাকে স্ত্রীর নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ানোর ব্যাপারে জানতে চেয়েছিল। তাকে আমার এই বক্তব্য পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছে।

কাকলি চৌধুরী

অন্যদিকে পরিতোষ বাবুর স্ত্রী তথা ৩ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী কাকলি চৌধুরী বলেন, রাজনীতির জন্য পরিবার থেকে সম্পূর্ণভাবে বিমুখ হয়ে গিয়েছেন পরিতোষ চৌধুরী। এই ওয়ার্ডে তৃনমূলের একটি সংস্থা থেকে প্রথম তালিকায় আমার নাম প্রকাশ করেছিল। পরবর্তীতে আমার নাম বাদ পড়ে যায়। যাকে প্রার্থী করা হয়েছে, মানুষ তাকে চেনে না। আমি এক সময় এই ওয়ার্ডের নির্বাচিত কাউন্সিলর ছিলাম। তবুও এবারে প্রার্থী হতে পারি নি। কিন্ত আমার স্বামী তৃনমূল ছাড়া কিছুই বোঝেন না। পরিবার নিয়ে কোনো ভাবনা নেই তার।  এলাকার মানুষ আমাকে বলেছে নির্দল প্রার্থী হয়ে দাঁড়াবার জন্য। আর সেই মানুষের দাবি মেনে অনুরোধ মেনেই আমি নির্দল প্রার্থী হয়েছি। আমার সাথে আমার তৃণমূল স্বামীর কোনো সম্পর্ক নেই। কাজেই আমি আমার মতো রাজনীতি করবো। উনি কি করবেন সেটা তার ব্যাপার।

তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক আব্দুর রহিম বক্সী জানিয়েছেন, মালদায় নির্বাচনী প্রচারে এসে তৃণমূলের পর্যবেক্ষক তথা মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছেন যারা দলে থেকে দলের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছেন। তাদের অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। নইলে তাদের বহিষ্কার করা হবে। সেই মতো আমরা পুরো বিষয়টি দেখছি । ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিষয়টি নিয়ে এই মুহূর্তে পরিষ্কার করে কিছু বলতে পারবো না। দু-একদিনের মধ্যে সমস্ত বিষয় পরিষ্কার হয়ে যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *