প্রয়াগরাজ কান্ড : সাংবাদিকদের জন্য নতুন অপারেটিং স্ট্যান্ডার্ড (SOP) তৈরি করতে চলেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক

অরুণ কুমার : সম্প্রতি ঘটে যাওয়া উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে উমেশ পাল হত্যাকাণ্ডের প্রধান দুই অভিযুক্ত আতিক আহমেদ ও তার ভাই আশরাফ আহমেদ পুলিশে হেফাজতের থাকাকালীন দুষ্কৃতীদের দ্বারা ঘটনাস্থলেই গুলি চালানোর ফলে মৃত্যু হয়। সেই সময় এই দুই অভিযুক্তের তখন বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের চ্যানেলে লাইভ দেখানো হচ্ছিল। প্রয়াগরাজের কাছে কেলভিন হাসপাতাল যাওয়ার রাস্তায় ঘটেছিল এই ঘটনা যা দেখে সারাদেশের মানুষ হতবাক হয়ে যায় সেইসঙ্গে কেন্দ্র তথা রাজ্য সরকারের স্বরাষ্ট্র বিভাগের কর্তাদের টনক নড়িয়ে দেয়। প্রাথমিক তদন্তে যেটা উঠে এসেছে , ঘটনাস্থলে যারা গুলি চালিয়েছিল তিনজন তারা পরবর্তী সময়ে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে তার আগে সাংবাদিকদের মধ্যে মাঝে তারা জায়গা করে পুলিশি হেফাজতে থাকা দুই অভিযুক্তকে প্রথমজনকে মাথায় এবং দ্বিতীয় জনকে খুব কাছে থেকে গুলি করে। প্রায় ১০ রাউন্ড গুলি চলে এবং দুজন পুলিশ ও আহত হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে অজ্ঞাত গাড়িতে করে তারা এসে সাংবাদিকদের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছিল। তারপর এই পরিণতি তারা ঘটায়।

এই ঘটনার পর সাংবাদিকদের সুরক্ষার বিষয়টিকে নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক নড়েচড়ে বসেছে বলে জানা গেছে। সূত্রের খবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবার থেকে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের জন্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়টিকে মাথায় রেখে এসওপি অর্থাৎ ‘স্ট্যান্ডার্ড অফ অপারেশন’ তৈরি করতে চলেছে। বিষয়টি সম্পর্কে ইতিমধ্যেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তা ব্যক্তিরা তৎপরতা আরম্ভ করেছেন।

কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক প্রধানমন্ত্রী দপ্তর এবং উত্তর প্রদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র দপ্তর সূত্রে যেটা সামনে উঠে এসেছে উমেশ পাল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ধৃত দুই অভিযুক্ত আতিক আহমেদ ও আশরাফ আহমেদ এদের দুজনকে যখন মেডিকেল পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তার লাইভ টেলিকাস্ট দেখানো হচ্ছিল,সেই সময়ে সাংবাদিকরা কথা বলছিলেন তখন সাংবাদিকের ছদ্মবেশে তিন আততায়ীরা এই কাণ্ড ঘটায়। শনিবার রাত দশটার সময় তাদেরকে মেডিকেল চেকআপের সময় নিয়ে যাওয়ার সময় এই ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়।

পুলিশে হেফাজতে থাকাকালীন দুই অভিযুক্তের উপর গুলি চালানোর পর তারা আত্মসমর্পণ করে। ধৃতরা পড়ে পড়ে পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দেয়, তারা আতিক আর আশরাফের শুটার গ্যাং কে সাফ করবেন বলেই এ কাজ করেছেন। তাদের কোন অনুশোচনা নেই এই বিষয়ে।তারা বেশ কয়েকদিন ধরে অপেক্ষায় ছিল কিভাবে এই দুজনকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়া যায়।

তারা আরো জানিয়েছে সাংবাদিকদের মাঝে থেকে আক্রমণ করাটা সহজ হবে বলে তারা এই পথ বেছে নিয়েছিল। কিন্তু তারা পুলিশের ঘেরাটোপে থাকার ফলে পালানোর সুযোগ পায়নি। পুলিশের দ্রুত তৎপরতার সঙ্গে এই আততায়ীদের কে ধরে ফেলে।

এই ঘটনার পরবর্তী সময়ে উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জেলায় জেলায় হাই এলার্ট জারি করা হয় এবং পুলিশি নজরদারি সহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। প্রয়াগ রাজ কাণ্ডের ঘটনার পর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ যোগী সহ পুলিশের বড় বড় কর্তাদের সাথে গভীর রাত পর্যন্ত বৈঠক হয় যেখানে নির্দেশ দেওয়া হয় নজরদারি বাড়ানোর এবং অভিযুক্ত মোস্ট ওয়ান্টেড যারা রয়েছে তাদেরকে ধরার যার পরিণতিতে রবিবার নাসিক থেকে উমেশ পাল হত্যাকাণ্ডের অপর এক অভিযুক্ত গুড্ডু মুসলিমকে উত্তরপ্রদেশ এসটিএফ গ্রেফতার করে যার মাথার দাম ধরা হয়েছিল 5 লক্ষ টাকা।

সংবাদ মাধ্যম সূত্রের খবর, উমেশ পাল হত্যাকাণ্ডের দুই অভিযুক্ত আতিক ও তার ভাইকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল একটি বিশেষ জায়গায় যেখান থেকে প্রতিবেশী দেশের তৈরি পিস্তল ও গুলি উদ্ধার করা হয়। উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজ জেলার ধুমনপুর থানার অধীনে স্থিত মাশারি নামক জায়গায় তল্লাশি করে উত্তর প্রদেশ পুলিশ ও নিয়া NIA যৌথভাবে। উদ্ধার হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র কোথাকার তা নিয়ে তদন্তকারী সংস্থার কিছু জানায়নি।

উল্লেখ করা যেতে পারে যে এই ঘটনা তদন্ত করছে ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি। জিজ্ঞাসাবাদের মধ্যে দিয়ে দুই ধৃত আতিক ও তার ভাই কি বলেছে তা জানা যায়নি।

প্রয়াগরাজের ঘটনা সারা দেশ ও বিভিন্ন রাজ্যসহ কর্মরত সাংবাদিক বা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যারা যুক্ত রয়েছেন তাদের কাছে নতুন মাত্রা সংযোজিত হয়েছে এবং যার পরিণতিতে নতুন স্ট্যান্ডার্ড অফ অপারেশন বা এস ও পি আসতে চলেছে আগামী দিনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পরিকল্পনার মধ্যে দিয়ে।

অপরদিকে উত্তরপ্রদেশ সরকার এই ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত হবে বলেই ঘোষণা করেছে রবিবার। তিন সদস্যের এই দল এই ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খন তদন্ত করবে বলে জানা গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *