পিনাকী রঞ্জন পাল : ক্রিকেটে প্রতিভা এবং কঠোর পরিশ্রমের মেলবন্ধন হলে কী ঘটতে পারে, তার উদাহরণ হয়ে উঠেছেন প্রিয়াংশু আর্য। দিল্লির স্থানীয় মাঠ থেকে আইপিএলের মঞ্চে ২২ বছর বয়সী এই বাঁহাতি ব্যাটারের উত্থান যেন এক রূপকথার গল্প। আইপিএল ২০২৫-এর মেগা নিলামে পাঞ্জাব কিংস তাকে ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকায় দলে নিয়ে সবাইকে অবাক করেছে। কিন্তু কেন এত চড়া দামে তাকে দলে নেওয়া হলো? তার প্রতিভার গভীরতা ও ক্রিকেটে তার অসাধারণ কৃতিত্ব বিশ্লেষণ করলে এর উত্তর পাওয়া যাবে।
দিল্লিতে জন্ম ও বেড়ে ওঠা প্রিয়াংশ আর্যের শৈশব থেকেই ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা ছিল। শিক্ষকদের পরিবারে বড় হওয়া এই তরুণ শৈশবেই ক্রিকেটে নিজের প্রতিভার ঝলক দেখান। তার কোচ সঞ্জয় ভারদ্বাজ, যিনি একসময় গৌতম গম্ভীরের মেন্টর ছিলেন, প্রিয়াংশুর প্রতিভাকে সঠিকভাবে গড়ে তুলতে বড় ভূমিকা পালন করেন। গম্ভীরকে আদর্শ মেনে তার কৌশল পর্যবেক্ষণ ও অনুশীলনের প্রতি অনুরাগ তাকে শৈশব থেকেই ক্রিকেটের প্রতি নিবেদিত করে তোলে।
প্রিয়াংশুর ক্রিকেট জীবনের প্রথম সাফল্য আসে দিল্লি প্রিমিয়ার লিগের উদ্বোধনী আসরে। দক্ষিণ দিল্লী সুপারস্টার্জের হয়ে এক ম্যাচে এক ওভারে ছয়টি ছক্কা হাঁকিয়ে তিনি রেকর্ড করেন। পুরো টুর্নামেন্টে ১০ ইনিংসে প্রায় ২০০-এর কাছাকাছি স্ট্রাইক রেটে ৬০৮ রান করেন, যেখানে দুটি সেঞ্চুরি ও চারটি হাফ-সেঞ্চুরি ছিল।
তারপর সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফিতেও তার পারফরম্যান্স ছিল নজরকাড়া। গত আসরে দিল্লীর হয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন তিনি। এই বছরও উত্তরপ্রদেশের বিপক্ষে মাত্র ৪৩ বলে ১০২ রান করে তিনি জানান দেন যে বড় মঞ্চে পারফর্ম করার জন্য তিনি প্রস্তুত।
প্রিয়াংশুর ব্যাটিং শৈলী আক্রমণাত্মক ও নির্ভীক। প্রতিপক্ষের বোলিং আক্রমণকে ভেঙে দিয়ে দ্রুত রান তোলার ক্ষমতা তাকে বিশেষ করে তুলেছে। মাঠে সরাসরি ছক্কা মারার দক্ষতা এবং চাপের মধ্যে পারফর্ম করার মানসিকতা তাকে পাঞ্জাব কিংসের মতো দলের কাছে আকর্ষণীয় করেছে।
তার ঘরোয়া পরিসংখ্যান এককথায় অসাধারণ। ১০ ইনিংসে ৪৩টি ছক্কা মারার ক্ষমতা যে কোনো দলের জন্য সম্পদ। তার স্ট্রাইক রেট এবং ম্যাচ জেতানোর ক্ষমতা তাকে আইপিএলের প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে সাফল্য আনতে সাহায্য করবে।
মাঠের বাইরে প্রিয়াংশ আর্য তার ডাউন-টু-আর্থ ব্যক্তিত্ব ও সঙ্গীতের প্রতি ভালোবাসার জন্য পরিচিত। তার এই নম্রতা এবং পরিশ্রমের মানসিকতা তাকে আরও বড় মঞ্চে সফল হতে সাহায্য করবে। আইপিএলের মতো প্রতিযোগিতামূলক মঞ্চে নিজের জায়গা পাকা করার জন্য মানসিক দৃঢ়তা গুরুত্বপূর্ণ, যা প্রিয়াংশুর মধ্যে রয়েছে।
পাঞ্জাব কিংসের জন্য প্রিয়াংশুর মতো খেলোয়াড় দলে থাকা মানে শুধু প্রতিভাবান একজন ক্রিকেটার নয়, বরং ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা থাকা একজন পারফর্মার। দলের মিডল অর্ডার ব্যাটিং শক্তিশালী করতে এবং দ্রুত রান তোলার ক্ষেত্রে প্রিয়াংশু বড় ভূমিকা রাখতে পারেন।
প্রিয়াংশু আর্যের ক্রিকেট যাত্রা সবে শুরু হয়েছে, কিন্তু তার প্রতিভা ও কঠোর পরিশ্রমের গল্প ইতিমধ্যেই অনুপ্রেরণাদায়ক। দিল্লির ছোট মাঠ থেকে আইপিএলের বৃহৎ মঞ্চে তার উত্থান শুধু তার নিজের নয়, বরং প্রতিটি উদীয়মান ক্রিকেটারের জন্য একটি স্বপ্নপূরণের উদাহরণ।
আইপিএল ২০২৫-এ তার পারফরম্যান্সের দিকে ক্রিকেটবিশ্ব তাকিয়ে থাকবে। তার ছক্কা মারার ক্ষমতা এবং চাপের মুহূর্তে ডেলিভারি করার দক্ষতা তাকে আইপিএলের উজ্জ্বল তারকা করে তুলতে পারে। প্রিয়াংশুর গল্প যে শুধু শুরু, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।