জলপাইগুড়ি : উৎসবের আবেশ যেন কাটতেই চাইছে না জলপাইগুড়িতে। দোলের রঙ এখনো মুছে যায়নি, তার সঙ্গেই যোগ হয়েছে রমজানের ইফতার ও গরমের প্রথম দাপট। শহরের অলিগলি থেকে নদীপুকুর – সব জায়গাতেই যেন প্রাণের সুর বাজছে।
গ্রীষ্মের প্রথম আঁচ, পুকুরে কিশোরদের হুল্লোড়

গরমের হাত থেকে সাময়িক স্বস্তি পেতে জলপাইগুড়ির স্টেশন সংলগ্ন একটি পুকুরে দেখা গেল কিশোরদের ঝাঁপাঝাঁপি। দূষিত জল, বিপজ্জনক স্রোত— কোনো কিছুই যেন তাদের বাঁধা দিতে পারছে না। হোলির রঙ যেমন জল মিশে ধুয়ে গিয়েছে, তেমনই কিশোরদের রঙিন উচ্ছ্বাস মিশছে জলে।
তবে আনন্দের মাঝেই উদ্বেগের কারণও আছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অপরিচ্ছন্ন ও দূষিত জলে স্নান করলে ত্বকের সমস্যা, সংক্রমণ এমনকি জলের মাধ্যমে ছড়ানো রোগ হতে পারে। কিন্তু এসব চিন্তা আপাতত তাদের নেই, গরমের জ্বালায় শরীর জুড়ানোর তাগিদটাই বড় হয়ে উঠেছে।
দোলের পরদিন কাদা খেলায় মাতোয়ারা সেনপাড়া

দোল পুর্ণিমা মানেই রঙের উৎসব, কিন্তু জলপাইগুড়ির সেনপাড়ায় উৎসব একদিন পরও শেষ হয় না। বরং আরও একটু জমে ওঠে, তবে রঙের বদলে এবার মাঠ দখল করে কাদা। “ভ্রাতৃত্বের রঙ এখানে কাদার আকার নেয়,” বলছিলেন এলাকার বাসিন্দা রিংকু সেন।
এবছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বাদ্যযন্ত্রের তালে, চেনা-অচেনা মুখেরা কাদা ছুড়ে নিজেদের রাঙিয়ে নিয়েছেন। শিশুরা যেমন খেলায় মেতে উঠেছিল, তেমনই বড়রাও নিজেদের আবেগের রঙ মিশিয়েছেন কাদার স্পর্শে। “বছরের পর বছর ধরে এই ঐতিহ্য ধরে রাখছি, আর আনন্দ উপভোগ করছি,” বললেন এক প্রবীণ বাসিন্দা।
ইফতারের মহা আয়োজন নবাববাড়ি মসজিদে

রমজানের পবিত্রতা ছড়িয়ে পড়েছে জলপাইগুড়ির নবাববাড়ি মসজিদেও। রোজা রেখে দিনভর উপবাসের পর, রবিবার বিকেলে সেখানেই বসেছিল ইফতারের জমায়েত। নমাজ আদায়ের পর খেজুর, শরবত, ফল ও বিশেষ কিছু সুস্বাদু খাবার দিয়ে ইফতার করেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষজন।
মসজিদের ইমাম মুক্তি মেহবুব আলম জানালেন, “প্রতিবছর নবাববাড়িতে আমরা একসঙ্গে ইফতার করি, এতে ভ্রাতৃত্ববোধ আরও দৃঢ় হয়। আসা করছি, ৩১ মার্চ আমাদের ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে।”
এমন সময়েই কানে এল নামাজের আজান, মিশে গেল সেনপাড়ার বাদ্যের সুরের সঙ্গে। একদিকে উৎসবের মাধুর্য, অন্যদিকে ভক্তির আবহ – জলপাইগুড়ি আজ যেন এক অন্য রঙে রাঙানো শহর।