জলপাইগুড়ি, ২৫ সেপ্টেম্বর : প্রতিবেশী হওয়ার সুযোগ নিয়ে এক নাবালিকাকে মোবাইল ফোনে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে প্রেমের সম্পর্কে ফাঁসিয়ে ধর্ষণের অপরাধে অভিযুক্তকে ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিল জলপাইগুড়ির বিশেষ পকসো (POCSO) আদালত। বুধবার এই রায় ঘোষণা করা হয়। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আরও জরিমানা করা হয়েছে ৫০ হাজার টাকা, যা অনাদায়ে তাকে আরও দুই মাসের সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। বিচারক ডিস্ট্রিক্ট লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটিকে নির্যাতিতা নাবালিকাকে পাঁচ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন ।

ঘটনাটি মালদহ জেলার এক কিশোরীর সঙ্গে সম্পর্কিত, যার বাবা-মা কর্মসূত্রে ভিন্ন রাজ্যে থাকেন এবং সে তার দিদির সঙ্গে বসবাস করত। অভিযুক্ত ওই নাবালিকার প্রতিবেশী ছিলেন, যাকে সে ‘কাকা’ বলে ডাকত।
অভিযোগ অনুযায়ী, অভিযুক্ত নিজের নাম ও পরিচয় গোপন করে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মিসড কলের ছলে নাবালিকাটির সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তাকে প্রেমের জালে ফাঁসানোর চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে তিনি তাকে একটি আমবাগানে ডাকেন। সেখানে গিয়ে নাবালিকাটি যখন বুঝতে পারে যে ফোনে কথা বলা ব্যক্তি তারই পরিচিত, তখন সে সম্পর্ক ছিন্ন করতে চায় ।
এর পরই অভিযুক্ত নাবালিকাটিকে ভয় দেখানো ও ব্ল্যাকমেল শুরু করেন। তিনি তাকে হুমকি দেন যে সম্পর্ক না রাখলে তার বাবা-মাকে মেরে ফেলা হবে। চলতি বছরের শুরুতে, অভিযুক্ত নাবালিকাটিকে মালদহ থেকে শিলিগুড়ি নিয়ে গিয়ে এক হোটেলে এবং পরবর্তীতে এক আত্মীয়ের বাড়িতে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ ওঠে ।
গত ১৩ জানুয়ারি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হস্তক্ষেপের পর ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে এবং এনজেপি থানায় মামলা দায়ের হয়। পুলিশ তদন্তে নেমে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে।
জলপাইগুড়ি বিশেষ পকসো আদালতে মামলাটির শুনানি হয়। আদালতের সহকারী সরকারি আইনজীবী দেবাশিস দত্ত জানান, মাত্র আট মাসের মধ্যে আট জন সাক্ষীর সাক্ষ্য ও অন্যান্য প্রমাণের ভিত্তিতে মামলাটির রায় ঘোষণা করা হয় । দ্রুত তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া শেষ করতে পারায় এই দ্রুত রায় সম্ভব হয়।
এই রায় শিশুদের বিরুদ্ধে যৌন অপরাধের মামলায় দ্রুত বিচার প্রক্রিয়ার একটি উদাহরণ তৈরি করেছে। জলপাইগুড়ি জেলায় গত দেড় বছরে পকসো আইনে ৩১টিরও বেশি মামলার রায় হয়েছে, যা এই ধরনের অপরাধের মোকাবিলায় কার্যকর বিচারিক পদক্ষেপের ইঙ্গিত দেয়।
পকসো মামলাগুলির দ্রুত নিষ্পত্তির পিছনে সচেতনতা বৃদ্ধি, পুলিশের দ্রুত তদন্ত এবং আদালতের সক্রিয় ভূমিকা ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার খাণ্ডবহালে উমেশ গণপত বলেন, “শাস্তির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এর ফলে একটা বার্তা যাবে” ।