সরোজেন্দ্রদেব রায়কত সাংস্কৃতিক কলা কেন্দ্র বা আর্ট গ্যালারি ও জলপাইগুড়ি

লেখক পঙ্কজ সেন

জলপাইগুড়ি শহরের তিন নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত হাকিম পাড়ায় টাউন ক্লাবের ঠিক বিপরীত দিকে ১৯৯৯ সালে গড়ে উঠেছে সরোজেন্দ্রদেব রায়কত সাংস্কৃতিক কলাকেন্দ্র বা আর্ট গ্যালারি। শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ দ্বারা নির্মিত এই কলা কেন্দ্রটি জলপাইগুড়ির শহর তথা জেলার একটি অন্যতম সাংস্কৃতিক কলাকেন্দ্র। এই কলা কেন্দ্রের উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। প্রায় সারা বছর জুড়েই সরকারি এবং বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার নানা অনুষ্ঠান এখানে আয়োজিত করা হয়ে থাকে। শহরের বিভিন্ন বিদ্যালয়ের বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান খুবই সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা হয়। দুই-এক বার জলপাইগুড়ি বইমেলাও এই কলাকেন্দ্র প্রাঙ্গনে আয়োজিত হয়েছিলো। শহরের একেবারে কেন্দ্রস্থলে মূল রাস্তার উপর অবস্থিত হওয়ায় এর গুরুত্ব অপরিসীম। ২০১৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর্ট গ্যালারিতে প্রশাসনিক বৈঠক করেছিলেন।

আর্ট গ্যালারির ভেতরের মঞ্চটি ‘ দৈলা রায় মঞ্চ’ নামে পরিচিত। প্রকৃত নাম গনেশ চন্দ্র রায়। ইনি আর্যনাট্য সমাজের একজন নাম করা অভিনেতা ও পরিচালক ছিলেন। এই কলা কেন্দ্রের একটি অন্যতম বিশেষত্ব হলো, ভবনের নীচতলায় একটি বিশালাকার কক্ষে জলপাইগুড়ি জেলার সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত নানান ধরনের অমূল্য ছবি ও বাদ্যযন্ত্রের সমাহার।

কলাকেন্দ্রটি সরোজেন্দ্র দেব রায়কতের নামে নামকরণ করে জলপাইগুড়িবাসী এই অমর সঙ্গীত শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে। জলপাইগুড়ি জিলাস্কুলের ছাত্র তথা বৈকুণ্ঠপুর রাজ পরিবারের সদস্য সরোজেন্দ্রবাবু ছিলেন সংগীত জগতের একজন নামকরা শিল্পী ও শাস্ত্রীয় সংগীতের পানপুরুষ। গান্ধীজি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, বরোদার মহারানী, ওস্তাদ ফৈয়াজ খাঁ প্রকৃতি বিরল ব্যক্তিত্ব তার কণ্ঠে সংগীত শুনে তৃপ্তি লাভ করেছিলেন। অবিভক্ত বাংলার নানা প্রান্তে, আসাম, দিল্লি, জয়পুর, বিকানির, লখনউ ইত্যাদি ভারতের নানা প্রান্তে উপস্থিত হয়ে তিনি সুরের সাধনা করেছিলেন। দুই দুই বার পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় নির্বাচিত হলেও তিনি কোনদিনই রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে আটকে রাখতে চাননি। সরোজেন্দ্রবাবু ফুটবল, টেনিস, বিলিয়ার্ড, ব্যাডমিন্টন খেলতে ভালবাসতেন। সেই সঙ্গে তিনি ভালোবাসতেন গিটার, সেতার, পিয়ানো, তবলা ও হারমোনিয়ামকে। অর্থাৎ সাংস্কৃতিক জগতের সকল কিছুর সঙ্গেই তিনি ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন। ১৯৬২ সালে এই মহান ব্যক্তিত্বের মৃত্যু হয়।

২০১৪ সালে এই কলাকেন্দ্রে ‘প্রিয়া এন্টারটেইনমেন্ট’ নামক এক বেসরকারি সংস্থার ব্যবস্থাপনায় ছবি দেখানোর ব্যবস্থা শুরু হয়। এই নিয়ে তখন অবশ্য কিছু বিতর্ক হয়েছিলো। তাদের প্রদর্শিত সর্বপ্রথম ছবি ছিলো সালমান খান অভিনীত “জয় হো”। কিক, পদ্মাবত, বাহুবলির মতো বিগ বাজেটের ছবি এখানে প্রদর্শিত হয়। দু তিন বছর পরে অবশ্য এই ব্যবস্থাপনা বন্ধ হয়ে যায়।

এই ভবনের নীচ তলায় জলপাইগুড়ি জেলাশাসকের নিয়ন্ত্রণাধীন জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি কেন্দ্র এর সরকারি দপ্তরটি অবস্থিত।

সংযোজন : জলপাইগুড়ি আর্ট গ্যালারীকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ গ্রহণ করল শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এসজেডিএ)। সম্প্রতি আর্ট গ্যালারী পরিদর্শন করে একথা জানিয়েছেন এসজেডিএ’র চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তী।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার : উমেশ শর্মা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *