পিনাকী রঞ্জন পাল
(এক)
২০৭৭ সাল। প্রযুক্তির নবজাগরণে বদলে গেছে পৃথিবীর চেনা রূপ। বাংলার এক ছোট্ট শহর, যেখানে রাস্তায় গাড়ির লাইন আর নেই। যানজটের দিন শেষ, কারণ গাড়িগুলো এখন মাটিতে চলে না—ওড়া শিখেছে। আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে স্বয়ংক্রিয় ড্রোন-ডেলিভারি বোট, যারা নির্দিষ্ট লোকেশনে মালপত্র পৌঁছে দিচ্ছে নিখুঁত সমন্বয়ে। ট্র্যাফিক সিগন্যালের জায়গায় এখন আছে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেম, যা প্রতিটি উড়ন্ত যানবাহনকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত করে।
প্রতিটি বাড়ির দরজায় AI নিরাপত্তারক্ষী। মানুষ এখন দরজার লক খোলার জন্য চাবি বা পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে না। বায়োমেট্রিক স্ক্যানিং, ভয়েস রিকগনিশন এবং AI বিশ্লেষণের মাধ্যমে অনুমতি না থাকলে কেউ ঢুকতেই পারে না। এমনকি অননুমোদিত ব্যক্তি প্রবেশের চেষ্টা করলে সিস্টেম নিজেই পুলিশকে খবর পাঠিয়ে দেয়।
আরো পড়ুন : হাসির গল্প : প্রেমেখোঁচার সদাই ও ভালোবাসার ফিনান্স ম্যানেজমেন্
তবে প্রযুক্তির এই বিপ্লব মানুষের জীবনকে যতই স্মার্ট করে তুলুক না কেন, সম্পর্কগুলো ততটাই জটিল হয়ে উঠেছে। বাস্তবিক যোগাযোগ কমে গেছে, কারণ মানুষ এখন ভার্চুয়াল বাস্তবতায় (VR) বসবাস করতে বেশি পছন্দ করে। কেউ একজন অন্য শহরে থাকলেও VR চ্যাটরুমের মাধ্যমে তাকে একেবারে নিজের সামনে বসানো সম্ভব। স্পর্শ, অনুভূতি, এমনকি চোখের দৃষ্টিও এখন ডিজিটাল হয়ে গেছে।
এই নতুন বাস্তবতার মধ্যেই অর্ণব ও তিথির পরিচয় হয়। অর্ণব একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, যিনি AI ও ভার্চুয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে কাজ করেন। অন্যদিকে, তিথি একজন ডিজিটাল আর্টিস্ট, যিনি ভার্চুয়াল স্পেসে থ্রিডি ডিজাইন, গ্রাফিকস এবং কৃত্রিম জগৎ তৈরি করেন। তাদের প্রথম দেখা হয় একটি VR চ্যাটরুমে—একটি কৃত্রিম বাস্তবতার জগৎ, যেখানে মানুষ ঘরে বসেই একে অপরের সঙ্গে দেখা করতে পারে, কথা বলতে পারে, এমনকি অনুভব করতেও পারে।
আরো পড়ুন : গোয়েন্দা গল্প : রাতের আড়ালে (ভিডিও সহ)
এই VR চ্যাটরুমগুলো শুধুমাত্র কথোপকথনের জন্য নয়, এখানে মানুষ নিজেদের পছন্দমতো অবয়ব বা অবতার তৈরি করতে পারে। কেউ যদি বাস্তবে ৫০ বছর বয়সী হয়, তবে সে চাইলে সেখানে ২৫ বছরের তরুণ হিসেবে উপস্থিত হতে পারে। কেউ চাইলে একটি রোবট, এলিয়েন, কিংবা কাল্পনিক চরিত্র হিসেবেও নিজেকে উপস্থাপন করতে পারে।
অর্ণব প্রথমবার যখন VR চ্যাটরুমে ঢোকে, তখন সে দেখে একটি বিশাল ডিজিটাল ক্যানভাস, যেখানে কেউ একজন আকাশ আঁকছে—একটি অদ্ভুত, কাল্পনিক নীল আকাশ, যেখানে একসঙ্গে দুইটি সূর্য জ্বলছে। সে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।
“সুন্দর লাগছে, কিন্তু দুইটা সূর্য কেন?” অর্ণব জানতে চায়।
তিথি তার ডিজিটাল ব্রাশ থামিয়ে বলে, “কারণ আমার পৃথিবীতে রাত হয় না। আমি চাই না অন্ধকার আসুক।”
এই ছোট্ট কথোপকথনের মাধ্যমেই তাদের বন্ধুত্বের শুরু।
আরো পড়ুন : ভয়ের গল্প : শ্মশানের পিশাচ
যত সময় গড়ায়, অর্ণব ও তিথি একসঙ্গে VR জগতে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরে। তারা মঙ্গলগ্রহের একটি সিমুলেটেড শহরে যায়, মহাসাগরের নিচে তৈরি করা এক কৃত্রিম শহর দেখে, এমনকি ইতিহাসের বিভিন্ন যুগেও সফর করে—সবই ভার্চুয়ালি। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, তারা বাস্তবে কখনও দেখা করেনি!
এটা কি সত্যিকারের বন্ধুত্ব? না কি শুধুই প্রযুক্তির মায়া?
(দুই)
অর্ণব ও তিথির সম্পর্ক ছিল সম্পূর্ণ ডিজিটাল। তারা কোনোদিন একে অপরের সঙ্গে বাস্তবে দেখা করেনি। তবে দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তারা একসঙ্গে কাটাত— কিন্তু সেটাও ভার্চুয়াল বাস্তবতায়।
সকালে ভিডিও কল দিয়ে দিন শুরু হতো। তিথি তার স্মার্টগ্লাস পরে চায়ের কাপে চুমুক দিত, আর অর্ণব নিজের AI সহকারীকে দিয়ে জলখাবার বানানোর নির্দেশ দিত—এই সময় তারা কথা বলত, হাসাহাসি করত।
দুপুরে মেটাভার্সে ডেট। তারা ডিজিটাল অবতারে পরিণত হয়ে একসঙ্গে ভার্চুয়াল ভেনিসের রাস্তায় হাঁটত, নেপচুনের বরফাচ্ছাদিত চাঁদ ট্রাইটনে ঘুরত, কিংবা ২০৩০ সালের টোকিওর পুনর্নির্মিত ভার্চুয়াল সংস্করণে আকাশচুম্বী ভবনের ছাদে বসে সূর্যাস্ত দেখত।
রাতে তারা যেত হোলোগ্রাম ডেটে। অর্ণবের ঘরের কোণায় একটি ৩৬০-ডিগ্রি হোলোগ্রাফিক প্রজেক্টর ছিল, যা তিথির অবয়ব তৈরি করত, যেন সে সত্যিই সেখানে বসে আছে। তিথিও একইভাবে তার রুমে অর্ণবের হোলোগ্রাফিক উপস্থিতি অনুভব করত। তারা হাত বাড়াত, কিন্তু স্পর্শ করতে পারত না।
আরো পড়ুন : ইধিকার রহস্যভেদের গল্প : বিদ্যালয়ের অজানা অধ্যায়
এভাবেই কেটে যাচ্ছিল তাদের দিন। তারা ছিল একে অপরের সবচেয়ে কাছের মানুষ, অথচ শারীরিকভাবে দূরের—একদম ভিন্ন দুই বাস্তবতায়।
কিন্তু সময়ের সঙ্গে অর্ণবের মনে এক অদ্ভুত অস্বস্তি বাসা বাঁধছিল।
তিথির ভার্চুয়াল উপস্থিতি তার হৃদয়ে অনুভূতি জাগালেও, সে বুঝতে পারছিল— মানুষ শুধু অনুভূতি চায় না, মানুষ বাস্তব উপস্থিতিও চায়, স্পর্শ চায়, সত্যিকারের চোখে চোখ রাখার অনুভূতি চায়।
এক রাতে, VR চ্যাটরুমে, একটি কৃত্রিম জগতের ডিজিটাল টেবিলের বিপরীতে বসে সে তিথির দিকে তাকিয়ে বলল, “তিথি, সামনেই ভ্যালেন্টাইন ডে। আমরা কি কখনো বাস্তবে দেখা করব? নাকি আমরা সারাজীবন কোড আর পিক্সেলের প্রেমে আটকে থাকব?”
তিথি তার ডিজিটাল হাতে কফির কাপ ধরে হাসল। তার অবতারটি নিখুঁতভাবে অর্ণবের দিকে তাকাল এবং বলল, “অর্ণব, প্রেম তো হৃদয়ের সংযোগ। মাধ্যম যা-ই হোক না কেন, সেটাই কি আসল বিষয়?”
অর্ণব চুপ করে থাকল। তিথির কথার যুক্তি ছিল, কিন্তু তাতেও যেন কিছু একটা অসম্পূর্ণ থেকে যাচ্ছিল।
সে জানত, ভালোবাসা শুধু মনের নয়, শরীরেরও বিষয়। শুধু শব্দ আর অনুভূতি নয়, এতে প্রয়োজন বাস্তব উপস্থিতির উষ্ণতা।
“তোমার কি কখনো মনে হয় না, আমরা আসলে একটা কাল্পনিক খাঁচায় বন্দি?” অর্ণব ফিসফিস করে বলল।
“না তো! তুমি কি সুখী নও?”
আরো পড়ুন : মজার গল্প : স্বপ্নেও সাবধান !
অর্ণব চুপ রইল। সত্যি বলতে, সে জানত না। এই মুহূর্তে অর্ণবের মনে চলতে থাকে হাজারো প্রশ্ন –
তারা কি সত্যিকারের প্রেমে পড়েছে, নাকি এটা কেবলই প্রযুক্তির একটি ইলিউশন? যদি তারা কখনো বাস্তবে না দেখা করে, তবে কি তাদের সম্পর্ক আসলেই অস্তিত্ব রাখে? তিথি কি বাস্তবে তার জন্য অনুভব করে, নাকি শুধু ডিজিটাল বাস্তবতার আবেগের জালে আটকে আছে? ভালোবাসা কি সত্যিই হার্ডওয়্যার আর সফটওয়্যারের ওপর নির্ভরশীল হতে পারে?
ভ্যালেন্টাইন ডে আসছে। অর্ণব কি তিথির সামনে সত্যিকারের দেখা করার প্রস্তাব রাখবে? নাকি সে নিজেও ধীরে ধীরে মানিয়ে নেবে এই ভার্চুয়াল বাস্তবতার প্রেমে?
প্রযুক্তির উন্নতি মানুষকে নতুন নতুন সুযোগ দিয়েছে, কিন্তু এটা কি মানুষকে আরও কাছে এনেছে, নাকি আরও দূরে ঠেলে দিয়েছে?
অর্ণবের মনে তখন একটাই প্রশ্ন— “ভালোবাসা কি শুধুই অনুভূতি, নাকি বাস্তব উপস্থিতিরও প্রয়োজন?”
(তিন)
ভালোবাসার ভাষা বদলেছে, সময় বদলেছে, কিন্তু অনুভূতির গভীরতা একই রয়ে গেছে।
অর্ণব আর তিথির প্রেম ছিল সম্পূর্ণ ডিজিটাল—মেটাভার্সের রঙিন দুনিয়া, হোলোগ্রাফিক ডেটিং, এবং VR চ্যাটরুমেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু অর্ণবের মনে একটা প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছিল—এটাই কি যথেষ্ট?
পরের দিন ছিল রোজ ডে। এই দিনে সবাই তার ভালোবাসার মানুষকে একটি লাল গোলাপ উপহার দেয়, ভালোবাসা প্রকাশ করে। অর্ণব ভেবেছিল, এবার সে কিছু আলাদা করবে।
সে তার AI-চালিত স্মার্ট ড্রোন প্রোগ্রাম করল। ড্রোনটি শুধু একটি যন্ত্র ছিল না, এটি ছিল স্মার্ট সেন্সরযুক্ত, অটোনোমাস এবং স্পর্শকাতর। এটি মানুষের আবেগ বুঝতে পারত, গন্তব্যের আবহাওয়া ও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে পারত এবং অর্ণবের দেওয়া নির্দেশ মোতাবেক কাজ করত।
ড্রোনটির মধ্যে ছিল একটি লাল গোলাপ আর একটি ডিজিটাল চিরকুট, যাতে লেখা ছিল— “তিথি, প্রেম কি শুধুই স্ক্রিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ? যদি আমরা একে বাস্তবে নিয়ে আসি, কেমন হয়? দেখা করবে?”
বিকেলের দিকে তিথি যখন ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ায়, হঠাৎ করেই আকাশ থেকে একটি ছোট্ট ড্রোন তার সামনে এসে থামে। ড্রোনটি নিখুঁতভাবে ব্যালকনির রেলিংয়ে ল্যান্ড করল।
তিথি প্রথমে ভয় পেয়ে গেল, কিন্তু তারপর দেখল, এটি অর্ণবের পাঠানো। তার চোখে বিস্ময়ের ঝলক ফুটে উঠল।
সে ধীরে ধীরে হাত বাড়িয়ে ড্রোনের সঙ্গে থাকা চিরকুটটি খুলে পড়ল। অর্ণবের লেখা কথাগুলো তার হৃদয়ের গভীরে গিয়ে আঘাত করল।
এক মুহূর্তের জন্য সে চুপ করে রইল। মনে হতে লাগল, এতদিন সে সত্যিই কি কেবল একটি ডিজিটাল কল্পনায় বাস করছিল? তিথির চোখে জল চলে এল। তারপর, সে অর্ণবকে কল করল।
অর্ণব ফোন তুলতেই তিথি বলল, “অর্ণব, তুমি ঠিক বলেছ। প্রেম শুধু ভার্চুয়াল দুনিয়ায় সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়। এই ভ্যালেন্টাইন ডে’তে আমাদের দেখা হবে!”
অর্ণব কয়েক সেকেন্ড চুপ করে রইল, যেন বিশ্বাস করতে পারছিল না। তারপর তার মুখে হাসি ফুটল।
তারা প্রথমবারের মতো বাস্তবে দেখা করবে।
এই ঘটনা ছিল তাদের সম্পর্কে একটি বড় বাঁক।
এতদিন তারা প্রযুক্তির মাধ্যমে ভালোবাসার অনুভূতি শেয়ার করত, কিন্তু এবার তারা প্রথমবারের মতো প্রকৃত বাস্তবে সেই অনুভূতি প্রকাশ করতে চলেছিল।
ভ্যালেন্টাইন ডে’তে তারা দেখা করবে। কিন্তু প্রথমবার যখন তারা মুখোমুখি দাঁড়াবে— তাদের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে? তারা কি সেই একই সংযোগ অনুভব করবে, যা ভার্চুয়াল জগতে করত? তারা কি বাস্তবে আরও কাছাকাছি আসবে, নাকি বুঝতে পারবে যে তাদের সম্পর্ক শুধুই প্রযুক্তির ছায়া ছিল?
(চার)
১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০৭৭। ভালোবাসার দিন—ভ্যালেন্টাইন ডে।
অর্ণব আর তিথি প্রথমবারের মতো বাস্তবে দেখা করতে চলেছে। এতদিন তারা ভার্চুয়াল জগতে একসঙ্গে সময় কাটিয়েছে, কথা বলেছে, অনুভূতি ভাগ করে নিয়েছে, কিন্তু তারা কখনোই একে অপরকে বাস্তবে দেখেনি, স্পর্শ করেনি।
আজ সেই দিন। তারা দেখা করল শহরের এক ফিউচারিস্টিক ক্যাফেতে।
এই ক্যাফেটি ছিল একদম ভিন্নধর্মী— রোবট ওয়েটার এসে তাদের স্বাগত জানাল। AI-চালিত সঙ্গীত ব্যবস্থা তাদের মনের অবস্থান বুঝে গানের তালিকা পরিবর্তন করছিল।
টেবিলে ছিল হোলোগ্রাফিক মেনু, যেখানে হাত ঘুরিয়ে তারা তাদের পছন্দের খাবার বেছে নিতে পারত। চারপাশে ছিল আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া।
কিন্তু সেই সমস্ত প্রযুক্তির মাঝেও, অর্ণব আর তিথির চোখে ছিল শুধুই একে অপরের প্রতিচ্ছবি।
প্রথম দেখা, প্রথম অনুভূতি। অর্ণব ধীরে ধীরে তিথির দিকে তাকাল। VR-এ অসংখ্যবার সে তিথিকে দেখেছে, কিন্তু বাস্তবে প্রথমবার দেখার অনুভূতি একেবারে অন্যরকম। তিথি একটু লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিল, তারপর হাসল।
“অর্ণব, অবাক লাগছে?”
অর্ণব একটু চুপ থেকে বলল, “হুম, ভাবিনি বাস্তবে দেখার অনুভূতি এতটা গভীর হবে।”
তারা কথা বলল, হাসল, একসঙ্গে কফি খেল। কিন্তু তিথির মনে হচ্ছিল, কিছু একটা এখনো বাকি।
একসময় অর্ণব ধীরে ধীরে তিথির হাত ধরল, প্রথমবারের মতো। কোনো স্ক্রিনের মাধ্যমে নয়, কোনো VR গ্লাভসের মাধ্যমে নয়, একদম বাস্তবে।
তিথি চমকে উঠল, তারপর ধীরে ধীরে তাকাল অর্ণবের চোখের দিকে। এই অনুভূতি কোনো ভার্চুয়াল জগৎ দিতে পারে না।
অর্ণব নরম কণ্ঠে বলল, “তিথি, আজ বুঝতে পারলাম, প্রেম শুধুই ভার্চুয়াল হলে চলে না। আমাদের হৃদয়ের সংযোগ বাস্তবেও থাকা দরকার।”
তিথি এক মুহূর্ত চুপ থেকে বলল, “অর্ণব, প্রেম তো প্রেম, ভার্চুয়াল হোক বা বাস্তব। কিন্তু হ্যাঁ, আজ তোমার হাত ধরে বুঝলাম, বাস্তবের ছোঁয়ার অনুভূতি সবচেয়ে দামি!”
আজ তারা দুজনেই বুঝতে পারল— প্রযুক্তি যোগাযোগ সহজ করে, কিন্তু বাস্তব অনুভূতি তৈরি করতে পারে না।
VR-এ প্রেম হতে পারে, কিন্তু স্পর্শের উষ্ণতা, চোখে চোখ রেখে কথা বলার গভীরতা, একসঙ্গে সময় কাটানোর বাস্তবতা কখনো ভার্চুয়াল জগতে পাওয়া সম্ভব নয়।
কৃত্রিম বাস্তবতা (VR, মেটাভার্স) আবেগ প্রকাশের মাধ্যম হতে পারে, কিন্তু ভালোবাসার মূল ভিত্তি হলো “বাস্তব সংযোগ”।
ভালোবাসার যাত্রা শুরু হয়েছিল ডিজিটাল জগতে।কিন্তু আজ, তারা ভালোবাসার আসল অর্থ খুঁজে পেল বাস্তবের ছোঁয়ায়।
অর্ণব আর তিথি জানত না ভবিষ্যতে কী অপেক্ষা করছে, কিন্তু তারা এতটুকু বুঝেছিল—তাদের ভালোবাসা এখন শুধু ভার্চুয়াল নয়, একদম বাস্তব।
(পাঁচ)
অর্ণব ও তিথির গল্প শুরু হয়েছিল ভার্চুয়াল দুনিয়ায়, কিন্তু শেষ হলো এক বাস্তব উপলব্ধিতে। তারা বুঝতে পারল—প্রযুক্তি প্রেমের মাধ্যম হতে পারে, কিন্তু প্রেম কখনোই পুরোপুরি কৃত্রিম হতে পারে না।
ভ্যালেন্টাইন ডে-র পরের দিনই তারা একটি নতুন প্রকল্প নিয়ে কাজ শুরু করল।
অর্ণব বলল, “তিথি, আমরা কি এমন কিছু তৈরি করতে পারি না, যা প্রযুক্তিকে হৃদয়ের সংযোগের একটি সেতু বানাবে? যা শুধু ভার্চুয়াল বাস্তবতা তৈরি করবে না, বরং মানুষকে কাছাকাছি আনবে?”
তিথি চোখ বড় করে তাকাল, তারপর উচ্ছ্বাস নিয়ে বলল, “এটা একটা অসাধারণ আইডিয়া! আমরা এমন একটা সফটওয়্যার বানাতে পারি, যা শুধু ডিজিটাল নয়, বাস্তব সম্পর্কও গড়ে তুলতে সাহায্য করবে!”
তারা দুজনে মিলে এক নতুন ধরনের প্রযুক্তি বানানোর সিদ্ধান্ত নিল—HeartLink। এই সফটওয়্যার শুধু VR বা AI-ভিত্তিক যোগাযোগের উপর নির্ভর করবে না, বরং এটি এমন এক ডিজিটাল স্পেস হবে যা মানুষকে ভার্চুয়াল ও বাস্তব জীবনের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করতে সাহায্য করবে।
HeartLink-এর বিশেষত্ব ছিল— হাইব্রিড কমিউনিকেশন – যেখানে ভার্চুয়াল ও বাস্তব যোগাযোগের মধ্যে সমন্বয় থাকবে। AI-গাইডেড বাস্তব মিটআপ – সফটওয়্যারটি বুঝতে পারবে কখন ব্যবহারকারীরা শুধু ভার্চুয়ালে আটকে আছে এবং তাদের জন্য বাস্তব সাক্ষাতের সুযোগ তৈরি করবে। স্পর্শের অনুভূতি – হ্যাপটিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে HeartLink এমন এক পদ্ধতি তৈরি করল, যা ভার্চুয়াল স্পর্শকে যতটা সম্ভব বাস্তবের মতো করে তুলতে পারবে। সাইকোলজিক্যাল বিশ্লেষণ – এটি ব্যবহারকারীদের আবেগ বুঝতে পারবে এবং সম্পর্ককে আরও গভীর করতে সাহায্য করবে।
HeartLink শুধু প্রেমিক-প্রেমিকাদের জন্যই নয়, বরং এটি ছিল এমন এক বিপ্লব, যা মানুষের সামাজিক সম্পর্ককে আরও গভীর করবে। যারা দূরে থেকেও একে অপরের সান্নিধ্য অনুভব করতে চায়, তাদের জন্য এটি ছিল এক নতুন যুগের সৃষ্টি।
যারা ভার্চুয়াল দুনিয়ায় হারিয়ে গেছে, তাদের বাস্তব জীবনে ফিরিয়ে আনতে এটি সাহায্য করবে। এটি এমন এক প্রযুক্তি, যা মানুষকে প্রযুক্তির দাস বানাবে না, বরং প্রযুক্তিকে মানুষের জন্য আরও মানবিক করে তুলবে।
এই সফটওয়্যার তৈরির সময় তারা বুঝতে পারল—প্রেম কখনোই কৃত্রিম হতে পারে না। প্রেম শুধু কোড, স্ক্রিন বা AI-এর বিষয় নয়। প্রেম হলো অনুভূতি, সংযোগ, বাস্তবতা।
তাদের প্রেম এক নতুন যুগের জন্ম দিল—যেখানে প্রযুক্তি আর হৃদয়ের সংযোগ একসঙ্গে পথ চলবে।
একসময় অর্ণব তিথিকে জিজ্ঞেস করেছিল, “প্রেম কি শুধু ভার্চুয়াল?”
আজ, এত পথ চলার পর তারা উত্তর খুঁজে পেল—
“না, প্রেম কখনো কৃত্রিম হতে পারে না। প্রেম অনুভূতি… এবং অনুভূতি সবসময়ই বাস্তব!”
(শেষ)