কল্পবিজ্ঞানের গল্প : সময় যান


মূল ভাবনায়: জাকির আলি রজনিশ
রূপান্তর ও রচনাশৈলী: পিনাকী রঞ্জন পাল

জলপাইগুড়ি শহরের প্রান্তে অবস্থিত একটি বিশাল গবেষণাগার। বাইরে থেকে দেখতে সাধারণ হলেও ভিতরে ছিল প্রযুক্তির নিখুঁত বিস্তার। পুরো ঘরটি জুড়ে সুপার কম্পিউটার, স্ক্যানার, সিস্টেম-অ্যাপারেটাস আর তার মাঝখানে গোলাকৃতি একটি বিশাল রামধনু রঙের গ্লোব।

এই গ্লোবটির ব্যাস প্রায় আট ফুট—এটি দেখতে যতটা মোহময়, তার চেয়েও বেশি ছিল এর অন্তর্নিহিত শক্তি। সেই শক্তিই একদিন সময়কে জয় করবে বলে আশা ছিল এই প্রকল্পের নেতৃত্বদানকারী বিজ্ঞানী প্রফেসর রুদ্রপ্রসাদ ঘোষের। তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তরুণ বিজ্ঞান সহকারী অয়ন দত্ত নিঃশব্দে তাকিয়ে ছিলেন সেই স্ক্রিনে, যেখানে ধীরে ধীরে খুলে যাচ্ছিল ভবিষ্যতের দরজা।

নিভৃতে স্পন্দিত হচ্ছিল দুটি হৃদয়। নিঃশ্বাসের গতি বেড়ে গেলেও একাগ্রতাকে ভাঙতে পারেনি কিছুই। হঠাৎ, নিস্তব্ধতা ভেঙে গর্জে উঠলেন রুদ্রপ্রসাদ—
“অয়ন, আমরা পেরেছি! সময় আমাদের বশ্যতা স্বীকার করেছে। ‘সময়যান’-এর সকল স্তর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। এখন আমরা ইচ্ছেমতো সময় পেরিয়ে যেতে পারবো। ভবিষ্যত এখন হাতের মুঠোয়!”

রুদ্রপ্রসাদের চোখে জ্বলজ্বল করছিল বিজয়ের আগুন। দীর্ঘ এক বছরের কঠোর অধ্যবসায়ে তিনি রক্ত, ঘাম ও নিঃশ্বাস ঢেলে তৈরি করেছেন এই ‘রামধনু সময়যান’। এই যন্ত্রই আজ তাঁর জীবনকল্পনাকে বাস্তব রূপ দিতে চলেছে।

অয়ন আবেগে আপ্লুত হয়ে বলল, “স্যার, আপনার এই আবিষ্কার শুধু ইতিহাস বদলাবে না, পুরো মানবজাতির ভবিষ্যত রচনা করবে।”

“এই জয় তোমারও, অয়ন। তুমি না থাকলে আমি আজ এখানে পৌঁছাতাম না,”—নরম স্বরে বলেন রুদ্রপ্রসাদ।

তারপর দুজনেই প্রস্তুত হতে শুরু করলেন এক অসাধারণ যাত্রার জন্য— যাত্রা, যা বর্তমান থেকে ছুটে যাবে ভবিষ্যতের দিকে। যাত্রা, যা কল্পনাকে পরিণত করবে বিজ্ঞানসিদ্ধ সত্যে।

রুদ্রপ্রসাদ পরলেন তাঁর নিজস্ব ডিজাইন করা একটি বিশেষ পোশাক, যা পরিবেশগত দুর্যোগ, তাপমাত্রার বৈষম্য এবং অক্সিজেন ঘাটতির জন্য প্রস্তুত। দেখতে যেন কোনও মহাকাশচারী, যিনি হয়তো নতুন কোনও গ্রহের খোঁজে পাড়ি দিতে চলেছেন মহাকাশে।

গভীর নিঃশ্বাস নিয়ে রুদ্রপ্রসাদ প্রবেশ করলেন রামধনু রঙয়ের সময়যানে। শরীর শিহরিত হয়ে উঠল উত্তেজনায়। ভেতরে ঢুকে সক্রিয় করলেন সুপার কম্পিউটার। মুহূর্তের মধ্যে সময়যান মাটি থেকে কিছুটা উপরে ভেসে উঠল, আর সেই রঙিন আবরণ ঘূর্ণায়মান হতে লাগল দ্রুত, আরও দ্রুত। সাত রঙ মিশে গেল সাদায়, এবং শেষে সম্পূর্ণ অদৃশ্য হয়ে গেল।

কিন্তু সময়যানের ভিতরে যেন সব স্থির— শুধু বয়ে চলেছে সময়চক্র, রুদ্রগতিতে— ২০২৫– ২০৫০ –২১০০–২৩০০… সব পেছনে পড়ে থাকছে, সময় কেটে যাচ্ছে শব্দের চেয়েও দ্রুত গতিতে।

কম্পিউটারের পূর্বনির্ধারিত নির্দেশ অনুযায়ী সময়যান থেমে গেল ২৫০০ খ্রিষ্টাব্দে। রুদ্রপ্রসাদ নিজের হাতঘড়িতে তাকিয়ে দেখলেন—
মাত্র ১০ সেকেন্ড!

২০২৫ থেকে ২৫০০ সাল। মাত্র দশ সেকেন্ডেই ইতিহাস পার!

তিনি ধীরে ধীরে কম্পিউটার বন্ধ করলেন, দরজার দিকে এগোলেন— নতুন এক পৃথিবীকে স্বাগত জানাতে। কিন্তু দরজা খোলার পর তাঁর চোখে ধরা পড়ল এমন এক দৃশ্য, যা কোনো কল্পনার সঙ্গেই মিলল না।

চারিদিকে শুধু বালি আর বালি। আকাশ ধূসর, বাতাস গরম। গাছপালা তো দূরের কথা, ঘাসের অস্তিত্ব পর্যন্ত নেই।

প্রফেসরের শ্বাস কষ্ট হতে শুরু করল। অক্সিজেনের অভাব এবং অতিরিক্ত তাপ— এই কি তবে ভবিষ্যতের পৃথিবী? এই কি তবে উন্নতির চূড়ান্ত ফল?

তিনি বিস্ময়ে হাঁ করে তাকিয়ে রইলেন কর্দমাক্ত এক শূন্যতায়— যেখানে একদিন ছিল জলপাইগুড়ির করলা নদীর ধারে সবুজে ঘেরা শহর। এখন তার জায়গায় ধূসরতা আর নিস্তব্ধ মৃত্যু।


জলপাইগুড়ির যেখানে একসময় দিনবাজার ছিল, পেছনে ছোট ছোট দোকান, পাশে লোকালয়ের আলতা ছড়ানো পায়ে বয়ে যাওয়া জনজীবন—
সেই জায়গা এখন শুধুই ধূলিময় মরুভূমি।

রুদ্রপ্রসাদ দাঁড়িয়ে আছেন সময়যানের বাইরে।
কিন্তু এই কি সেই দিনবাজার? না, তা হতেই পারে না।

চারপাশে কোনও ভবন নেই, মানুষ নেই, শব্দ নেই।
শুধু ধূলোর ঝড়, আর এক অনন্ত নিঃসঙ্গতা।

রুদ্রপ্রসাদ মুখে বিশেষ মাস্ক পরেও অনুভব করলেন, তাঁর ফুসফুসে যেন আগুন ঢুকছে।
তাপমাত্রা ৬০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেছে, বাতাসে অক্সিজেন মাত্র ৭%। তিনি হাঁটতে শুরু করলেন,
খুঁজতে লাগলেন পরিচিত কোনও চিহ্ন।

হঠাৎ আকাশ ফুঁড়ে নেমে এলো এক জ্বলন্ত বস্তু—
একপ্রকার আগুনের ফুলকি, যা ভেদ করে ধুলোর প্রাচীর, মাটির গভীরে মিশে গেল।

প্রফেসর বুঝতে পারলেন, এটা কোনও আগ্নেয়গিরি বা মহাকাশীয় বস্তুর পতন নয়, এটা নিশ্চয় কোনও প্রযুক্তিগত যান। মানুষের তৈরি, অথবা মানুষের উত্তরসূরিদের।

তিনি দৌড়াতে লাগলেন সেই স্থানের দিকে। সেই বস্তুর দেখা পাওয়া মানে— এখনও কেউ বেঁচে আছে, কোনও প্রযুক্তি চালু আছে, এটাই ছিল তাঁর একমাত্র আশার আলো।

কিন্তু পঞ্চাত্তর বছর বয়সের দেহ এই মরুভূমিতে দৌড়াতে পারে না বেশিক্ষণ। তবু তিনি দৌড়াচ্ছেন,
যেন এই দৌড় শুধুই ভবিষ্যতের সঙ্গে নয়— নিজের দোষে গড়ে ওঠা এক অনিবার্য ধ্বংসের দায় থেকে পালানোর চেষ্টাও।

হঠাৎ তাঁর মাথা ধাক্কা খেল এক অদৃশ্য কাঁচের প্রাচীরে। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। ধাতব মাটিতে শুয়ে তিনি বুঝতে পারলেন— এই পৃথিবীর উপরিভাগ নয়, কিছু একটা আছে এই মৃতুভূমির নিচে।

হঠাৎ হালকা সাইরেন বাজল। একটি স্বচ্ছ কাঁচের খাঁচার ভিতরে তাঁকে আটকে ফেলা হল। আকাশ থেকে নামল একটি অদ্ভুত ছোট রোবট— সে তার ধাতব আঙুল থেকে ছুড়ল লাল রশ্মি, আর সেই রশ্মিতে রুদ্রপ্রসাদ এক নিমেষে হয়ে গেলেন অদৃশ্য।

নিজেকে আবিষ্কার করলেন তিনি এক নতুন স্থানে—
যেখানে চারপাশে গাঢ় সাদা আলো, শূন্যতায় ভাসতে থাকা ধাতব স্তম্ভ, আর মাঝখানে এক গহ্বরের মতো কাচঘেরা কক্ষে তিনি দাঁড়িয়ে।

এটা কোথায়? জলপাইগুড়ি তো নয়! এ যেন কোনও প্রযুক্তিময় নরক— যেখানে মানুষ আছে, কিন্তু মানুষ নেই। চেহারা আছে, কিন্তু প্রাণ নেই।

আর তখনই, তাঁর সামনে খুলে গেল বিশাল এক দরজা। সামনে একটি আধুনিকতর আদালত কক্ষের মতো কিছু, আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হল রুদ্রপ্রসাদকে।

একজন রোবটিক আইনজীবী উচ্চারণ করল—
“রুদ্রপ্রসাদ ঘোষ, ২০২৫ সালের এক বিজ্ঞানী,
যিনি ভবিষ্যতের দফারফা করে এসেছেন, আজ বিচারকের সামনে আসামিরূপে দাঁড়িয়েছেন।”

প্রফেসরের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। এরা কীভাবে জানল তাঁর পরিচয়? তাঁর সময়ের কথা? সময়যানের কথা?

কিন্তু প্রশ্ন করার আগেই উত্তর এল— “আমরা উত্তরসূরি, প্রফেসর। আপনাদের করা প্রতিটি তথ্য আমরা সংরক্ষণ করেছি, প্রতিটি পাপের হিসাব আমাদের নথিভুক্ত।”

প্রফেসর কিছু বলতে চাইলেন, কিন্তু পারেননি।
এ যেন শুধু বিজ্ঞান নয়, মানবিকতারও পতন দেখছেন তিনি।

এই পৃথিবী তাঁদের ছেড়ে যাওয়া এক বিষফল—
যার ভেতর তারা লুকিয়ে দিয়েছিল মৃত্যুর বীজ।


চারদিকে এক গা-ছমছমে নিস্তব্ধতা। আধুনিক আলোয় ঝলমলে সেই আদালত যেন দেখতে খুব পরিচ্ছন্ন ও গৌরবময়, কিন্তু তার ভেতরে জমে থাকা রাগ, দুঃখ আর আক্ষেপের ঘনত্ব একটি পচে যাওয়া সভ্যতার দুর্গন্ধ বইয়ে দিচ্ছিল।

আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে রুদ্রপ্রসাদ হঠাৎ নিজেকে অসহায় মনে করতে লাগলেন।
তারপরই গম্ভীর কণ্ঠে এক রোবটিক বিচারক প্রশ্ন করল, “আপনার পরিচয় দিন।”

“আমি রুদ্রপ্রসাদ ঘোষ, জলপাইগুড়ি প্রযুক্তি গবেষণাগারের প্রধান গবেষক, ২০২৫ সালের নাগরিক। আমি সময়যানে চেপে ভবিষ্যতের সঙ্গে মিলিত হতে এসেছি… বন্ধুত্বের বার্তা নিয়ে।”

প্রথম সারির এক উকিল, যিনি দেখতে মানুষের মতো হলেও চামড়া ছিল ধূসর আর চোখজোড়া ছিল ধোঁয়াটে নীল— উপহাস করে বলল,
“বন্ধুত্ব? আপনি? যারা নিজেদের পৃথিবীকে বিষে ভরে দিয়ে গেল, তারা কীভাবে বন্ধুত্বের মুখোশ পরে এখানে আসে?”

“আমি কিছুই বুঝতে পারছি না,”—রুদ্ধকণ্ঠে বললেন রুদ্রপ্রসাদ।

উকিল বলল, “আপনি বুঝবেন না বলেই তো আজ আমরা এই দশায়।আপনারা গাছ কেটেছেন, নদী শুকিয়েছেন, বাতাসে বিষ ঢেলেছেন আর ভবিষ্যতের হাতে তুলে দিয়েছেন এক মরুভূমি।
আজ আমরা সূর্যের উত্তাপে ঝলসে যাচ্ছি, অক্সিজেন এত কম যে হাঁটাও যায় না। তাই এই আদালত এখন মাটির দশ ফুট নিচে তৈরি,
উপরে ধ্বংস, নিচে বেঁচে থাকা।”

রুদ্রপ্রসাদ নিশ্চুপ। তাঁর চোখ কেমন ধীরে ধীরে ভিজে উঠছে, কিন্তু লজ্জায় মাথা তুলতে পারছেন না।

উকিল বলেই চলেছে— “আজ আমরা বেঁচে আছি, কিন্তু মানুষ হয়ে নয়— একেকটা মেশিনের মতো।
হাসতে পারি না, খেলতে পারি না, দৌড়াতে পারি না।
এই মেশিনজীবনের দায় শুধু আপনারা, ২০২৫-এর মানুষরা! আপনারা মানবতাকে হত্যা করেছেন।
আপনি অপরাধী, প্রফেসর।”

বিচারক এবার ঘোষণা করলেন— “এই আদালত সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে,
রুদ্রপ্রসাদ ঘোষ মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে দোষী।
তাঁর জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি, ‘টাইম ডিসইন্টিগ্রেশন’, অর্থাৎ সময়প্রবাহ থেকে চিরতরে মুছে ফেলা।”

প্রফেসর কিছু বলতে চাইলেন, কিন্তু স্বর বেরোল না।
জিভ শুকিয়ে গেছে, হৃদয়টা যেন থেমে গেছে।
তিনি জানতেন, তিনি ভুল করেছেন। তবে তার মূল্য এত ভয়ানক হবে, তা হয়তো কল্পনাতেও ছিল না।

রোবট-জল্লাদ তাঁর সামনে এল। একটা ধাতব আঙুল উঁচিয়ে রশ্মি ছুড়ল। প্রফেসরের শরীর আবার মিলিয়ে যেতে লাগল আলো-ছায়ার ঘূর্ণিতে।
এইবার কোথায় যাচ্ছেন তিনি? আর কোনো আদালতে? না কি সত্যিই চিরতরে বিলীন হয়ে যাবেন?

তিনি চোখ বন্ধ করলেন। শুধু একটা কথা কানে বাজল— “ভবিষ্যৎ কখনো ক্ষমা করে না!”


রশ্মির ঘূর্ণিতে যখন প্রফেসর রুদ্রপ্রসাদের দেহ ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র হতে হতে মিলিয়ে যাচ্ছিল, তখন তিনি নিজেকে এক ভয়ংকর শূন্যতার মধ্যে আবিষ্কার করলেন। চোখ মেলে কিছুই দেখতে পাচ্ছিলেন না—
না আলো, না অন্ধকার, না কোনো শব্দ, না শরীরের অস্তিত্ব। শুধুই এক ঘূর্ণি, এক অজানা টান— যা যেন তাঁকে গিলে নিচ্ছিল এক ধ্বংসের কেন্দ্রে।

এটাই কি টাইম ডিসইন্টিগ্রেশন? যেখানে শরীর থাকবে না, মন থাকবে না, থাকবে কেবল অপরাধবোধের ভারবাহী স্মৃতি?

এই স্মৃতিগুলো যেন সময়ের এক ব্ল্যাকহোলে বন্দি হয়ে চিৎকার করছে— “গাছ কেটেছিলে কেন?” “নদী শুকিয়ে দিয়েছিলে কেন?” “পৃথিবীকে মরুভূমি বানালে কেন?”

আত্মার মতো কিছু যেন প্রফেসরের বুকের মধ্যে মোচড় দিতে থাকল। তিনি চিৎকার করে উঠলেন—
“না! না! আমি তো শুধু প্রযুক্তি তৈরি করেছিলাম!
ভবিষ্যত দেখতে চেয়েছিলাম! আমি চাইনি পৃথিবী শেষ হয়ে যাক!”

হঠাৎ এক ধাক্কায় তিনি যেন নিচে পড়লেন। আবার চোখ মেলে দেখলেন— নিজের গবেষণাগারের চেয়ারে বসে আছেন তিনি! সামনে সেই রামধনু রঙের সময়যান।

প্রফেসর ধীরে ধীরে বুঝতে পারলেন— এই সবকিছুই ছিল এক প্রাক-সময়ে-ভ্রমণ প্রতিক্রিয়া।
স্মৃতি আর সম্ভাবনার সংমিশ্রণে তাঁর মন তৈরি করেছিল এক ভবিষ্যতের ভয়ানক চিত্র।

তাঁর সারা শরীর ঘামে ভেজা। হৃৎস্পন্দন প্রচণ্ড।
হাতে ঘড়ি দেখে নিশ্চিত হলেন, সময়যান এখনও যাত্রা শুরুই করেনি।

তখনই পেছন থেকে সহকারী বিজয় এল— “স্যার, সময়চক্রের রূপরেখা তৈরি হয়ে গেছে। আপনার পরীক্ষা শুরু করা যাবে।”

প্রফেসর ধীরে মাথা নাড়লেন। তাঁর চোখে তখন আর উত্তেজনা নেই, আছে অনুতাপের গভীর ছাপ।

তিনি বিজয়ের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললেন—
“না বিজয়, এখন নয়। এখন ভবিষ্যতে যাওয়ার সময় নয়। এখন আমাদের উচিত বর্তমানকে রক্ষা করা। গাছ লাগানো, নদী বাঁচানো, মানুষের ভাবনাগুলো শোধরানো। ভবিষ্যতের পৃথিবী গড়তে গেলে আজকেই বদলাতে হবে। নইলে কাল আর থাকবে না…”

বিজয় হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইল তাঁর দিকে। এই প্রথম সে তার স্যারের চোখে জল দেখল— এক বিজ্ঞানীর চোখে ভবিষ্যতের জন্য অনুশোচনার অশ্রু।

সময়যান তখনও দাঁড়িয়ে ছিল চুপচাপ। ভবিষ্যতের দিকে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত, কিন্তু হয়তো এই প্রথম কেউ তা বাতিল করল বর্তমানকে বদলানোর দায়ে।

সমাপ্ত।

ছবি এআই

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *