সংবাদদাতা, জলপাইগুড়ি, ৪ জুন ২০২৩ : জলপাইগুড়ি শহরের উপকণ্ঠে ডেঙ্গুয়াঝাড় চা বাগানের চা শ্রমিক ঘরের সন্তান সদ্যপ্রয়াত এসএফআই রাজ্য কমিটির সদস্য পারসন খেরিয়ার পরিবারের সাথে দেখা করতে এলেন এসএফআই রাজ্য কমিটির সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য। শনিবার ডেঙ্গুয়াঝাড় চা বাগান সংলগ্ন জলপাইগুড়ি রোড স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে এসএফআই কর্মী নেতৃবৃন্দের সাথে সিআইটিইউ ডেঙ্গুয়াঝাড় রিজিওনাল দপ্তরের সামনে অপেক্ষারত চা শ্রমিক আন্দোলনের নেতৃত্বদের সাথে নিয়ে ডেঙ্গুয়াঝাড় চা বাগানের শেষ প্রান্তে পশ্চিম লাইনে পারসন খেরিয়ার বাড়িতে পৌঁছলে তার মা কলকাতা থেকে আসা ছেলের সহযোদ্ধার সামনে কান্নায় ঢলে পড়েন।

পারসন খেরিয়ার দাদা প্রাক্তন সিপিআইএমের পঞ্চায়েত শংকর খেরিয়া জানান, কিছুদিন ধরেই তার ভাই একটু অন্যমনস্ক থাকত। কিছুদিন আগে কাউকে কিছু না জানিযে ব্যক্তিগত কাজে নৈহাটি গিয়েছিল বলে তারা জানতে পেরেছে। খুব কম কথা বলা পারসন মৃত্যুর দিন রাতেও রাত সাড়ে দশটা এগারোটা পর্যন্ত বাড়ির সামনে মাচায় বসে ছিলেন বলে জানান পরিবারের সদস্যরা।

প্রচন্ড গরমে সেদিন রাতে শংকর ঘরের বাইরে শুয়েছিলেন। রাতে ছাগল রাখার ঘরে আওয়াজ পেলেও ছাগল গুঁতোগুতি করছে ভেবে গুরুত্ব দেয়নি সে। পরদিন সকালে ভোরে উঠে মা দেখতে পান ছাগলের ঘরে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় ছেলের দেহ সিলিং থেকে ঝুলছে। মায়ের চিৎকারে সকলে ওই ঘরে গিয়ে দেখেন মুরগির খাঁচার উপরে সিম কার্ড খোলা অবস্থায় পারসনের মোবাইল রাখা।

এসএফআই রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য বলেন, পারসন ছিল আমাদের চা শ্রমিক ঘর থেকে উঠে আসা উদীয়মান নেতৃত্ব। চা বাগান এলাকার বেশ কিছু অঞ্চলের দায়িত্ব ছিল তার কাঁধে। ওর অকাল মৃত্যুতে ছাত্র সংগঠনের প্রভূত ক্ষতি হলো। নিজের ফোন নাম্বার দিয়ে সৃজন যেকোনো প্রয়োজনে ছাত্র সংগঠন পরিবারের পাশে থাকবে বলে আশ্বস্ত করেন দাদা শংকর খেরিয়াকে। পরিবার সূত্রে জানা গেছে ময়নাতদন্ত হলেও পুলিশ অস্বাভাবিক মৃত্যুর তদন্তে এখনো পর্যন্ত পরিবারের কারো সাথে যোগাযোগ করেনি। ঘটনার রাত থেকে সিম কার্ড পাওয়া যাচ্ছে না, তার কল রেকর্ড চেক করলে হয়তো মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যেত বলে অভিমত দাদা শংকর খেরিয়ার।

শ্রমিক নেতৃবৃন্দ জানান গোটা ডেঙ্গুয়াঝাড় চা বাগান ও আশেপাশের বাগান এলাকায় কম বয়সী ছেলে মেয়েদের মধ্যে পারসন খেরিয়া “পারসন ভাইয়া” নামে অধিক পরিচিত ছিল। মৃতদেহ কবরস্থ করার সময় প্রায় গোটা চা বাগানের পুরুষ মহিলারা এসেছিলেন সেখানে। সিআইটিইউ জেলা কাউন্সিল সদস্য পারসন ছাত্র আন্দোলনের পাশাপাশি চা বাগান মজদুর ইউনিয়নের নেতৃত্ব হিসেবে উঠে আসছিলেন। তার অকাল মৃত্যুতে বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হল এই এলাকার চা শ্রমিক আন্দোলন। বাড়ি থেকে হাঁটা পথে কিছুটা দূরে যেখানে পারসনের নিথর দেহ কে কবরস্থ করা হয়েছে সেখানে গিয়ে তার কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান এসএফআই রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য।

এসএফআই রাজ্য সম্পাদকের সাথে পারসনের বাড়িতে দেখা করতে যান ছাত্রনেতা অনুভব দে, পাপাই মোহম্মদ, অহনা পান্ডে, স্নেহা দত্ত, যুব নেতা বেদব্রত ঘোষ, চা বাগান মজদুর ইউনিয়নের নেতা শুভ ঠাকুর, প্রফুল্ল লাকড়া, শ্রমিক নেতা কৃষ্ণ সেন সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। বেসরকারি সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকের করমন্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় রেলের সুরক্ষা ব্যবস্থা কতটা সুরক্ষিত প্রশ্নের উত্তরে এসএফআই রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য জানান, ক্রমাগত রেলে শূন্য পদ বাঁচাতে বাঁচাতে আজ সেটা তিন লক্ষে পৌঁছেছে। গত কয়েকদিন আগে আশি হাজার শূন্য পদে কোনো লোক নেওয়া হবে না বলে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে রেল। ক্রমাগত কন্ট্রাকচুয়াল কর্মী নিয়োগের কারণে রেলের সিগনালিং ব্যবস্থা অতি সুরক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও দক্ষ কর্মীর অভাবে আজ রেলের সুরক্ষা ব্যবস্থা বড় প্রশ্ন চিহ্নের মুখে দাঁড়িয়েছে। করমন্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতদের পরিবারের পাশে ছাত্র যুবদের রেড ভলেন্টিয়ারদের টিম সব সময় থাকবে। ইতিমধ্যে রেড ভলেন্টিয়ার্সের নামের তালিকা ও যোগাযোগের ফোন নাম্বার সমাজ মাধ্যমে দিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।